মেহেরপুর সদর উপজেলার বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাহাড় জমলেও শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্বীকারের কারণে বহাল তবিয়তেই এখনো রয়েছেন তিনি। তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিনয় কুমার চাকী,সদ্য বিদায়ী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা শান্তিও এ সকল দুর্নীতির মদদদাতা বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেনের কর্মকান্ড নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
নিয়োগ বানিজ্য, শিক্ষকদের বেতনের টাকা আত্মসাৎ, একই পদে একাধিক শিক্ষক নিয়োগ, স্ত্রীকে তিন পদে নিয়োগ দেওয়া, নিয়োগ বানিজ্য করে সম্পত্তি ক্রয় সহ এক ডজন দুর্নীতির অভিযোগ আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া একটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিসেবে মামলাটি চলমান রয়েছে।
অভিযোগ গুলো মধ্যে রয়েছে, মো: মসিউর রহমান মেহেরপুর সদর উপজেলা বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক তার স্ত্রী মোছা: শারমিন নাহার একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা (বাংলা) প্রধান শিক্ষকের কুচর্ক্রীর কারণে এমপিও থেকে বাদ পড়েছেন।
অথচ ২০০৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় ৫১ শতক জমির মধ্যে ৪০ শতক জমি দান করেছেন মসিউর রহমানের পিতা মোঃ আব্দুল হামিদ বিশ্বাস। জমি দান এবং নগদ ৫৯ হাজার টাকা দিয়েও প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আযাদের কুচক্রীর কারণে তাদের দুজনের কেউই এমপিও ভুক্ত হতে পারেননি। এমপিও ভুক্ত হতে না পেরে দুজনেই উচ্চ আদালতে রিট করি। আরেক জন শিক্ষক মোঃ আব্বাস আলী এমপিও ভুক্ত হতে না পেরে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন যার নং ১৫১৯৬/২০১৯ এবং ১৫১৯৭/২০১৯।
২০১৯ ইং সালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে একটি সুপারিশ পত্র পাঠান শিক্ষক কর্মচারী এমপিও করণের জন্য। সেখানে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রীকে তিন পদে নিয়োগ দেখিয়েছেন। সুপারিশ পত্রটি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিনয় কুমার চাকী স্বাক্ষর করে জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়েছেন। মোঃ শরিফুল ইসলাম রাজনগর দাখিল মাদ্রাসায় ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত বেতন তুলেছেন।
একই সাথে বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে বর্তমানে বেতন তুলছেন। সভাপতির ছেলে মোঃ সাদ্দাম হোসেন সদর উপজেলায় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে চাকুরী করেছেন ২০২০ ইং সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত। বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে বেতন তুলছেন। মোঃ শরিফুল ইসলাম (ধর্ম) দরবেশপুর দাখিল মাদ্রাসায় চাকুরী করে বেতন তুলেছেন ২০১৫ সাল পর্যন্ত।
বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্তমান বেতন ভাতা তুলছেন। বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ একই পদে ২০০৩ ইং ২ জন শিক্ষককে নিয়োগ দিয়েছেন। মোঃ আব্দুস সবুরকে গণিত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ২০০৩ ইং সালে। কিন্তু উনি এসেছেন ২০১০ সালের পরে। মোঃ শাহ আলম সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞাণ) উনি বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কোন দিনই আসেননি, অথচ এমপিও ভুক্ত হয়ে বেতন ভাতা তুলছেন। ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শাখা শিক্ষক হিসেবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন জাফরুল ইসলামকে।
তিনিও এমপিও হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কোন দিনই বিদ্যালয়ে আসেননি। তিনিও এমপিও ভুক্ত হয়েছেন এবং বেতন ভাতা তুলছেন।৭ম শ্রেণীর শাখা শিক্ষক হিসেবে মোছাঃ জাহানারা খাতুন নিয়োগ পেয়েছেন। তিনিও কোনদিন প্রতিষ্ঠানে আসেননি, অথচ এমপিও ভুক্ত হয়ে বেতন ভাতা তুলছেন। মোঃ আনিছুর রহমানকে শরীর চর্চা শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনিও ২০২০ সাল পর্যন্ত কোনদিন বিদ্যালয়ে আসেননি অথচ এমপিও ভুক্ত হয়ে বেতন তুলছেন।
প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ যে সমস্ত শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিও করেছেন এখনও পর্যন্ত তাঁদের হাতে নিয়োগ ও যোগদান পত্র দেননি। শিক্ষক কর্মচারীদের বকেয়া বেতন তোলার সময় প্রত্যেকের কাছ থেকে স্বাক্ষর যুক্ত চেকের পাতা জমা নিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ তার পরিবারের ৪ জন ব্যক্তিকে বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এমপিও ভুক্ত করেছেন। প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ নিয়োগ বাণিজ্য করে ২০০৩ ইং সাল থেকে অদ্যাবধি অট্টালিকাসহ কোটি টাকা সম্পদের মালিক হয়েছেন।
উচ্চ আদালতে মোঃ মশিউর রহমান, শারমীন নাহার ও আব্বাস আলীর রিট থাকা সত্বেও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিনয় কুমার চাকী ও জেলা শিক্ষা অফিস কিভাবে এমপিও ভুক্তির জন্য আবেদন পাঠালেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ, আলাউদ্দিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি। মামলা নং ৫৩/০৬।
বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ কমপক্ষে ৭ জন শিক্ষককে এমপিও ভুক্তি না করে, নতুন শিক্ষকদের টাকার বিনিময়ে এমপিও ভুক্ত করেছেন। ২০১৯ সালে উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার আনারুল ইসলাম অডিটের সময় শিক্ষক হাজিরা খাতায় ৮ জন শিক্ষক কর্মচারীর নাম পান কিন্তু ২০২০ সালে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ অরও ৯ নতুন জন শিক্ষককে এমপিও ভুক্তি করিয়েছেন।
বর্শিবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ জামাত-বিএনপির শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে রাজত্ব কায়েম করছেন।
এ ধরণের বিভিন্ন অভিযোগের পাহাড় তার বিরুদ্ধে থাকলেও অর্থেও বিনিময়ে তিনি এখন পর্যন্ত সবাইকে ম্যানেজ করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। এনিয়ে মেহেরপুর প্রতিদিন এ সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক নীভা রানি পাঠক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু একটি নাম মাত্র তদন্ত কমিটি করে ৭দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও কয়েক সপ্তাহ পার হয়েছে কিন্তু কোন প্রতিবেদন জমা দেয়নি তদন্ত কমিটি।
এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির সদস্য ইছাহাক আলী জানান, আমরা আগামি সপ্তাহে তদন্ত কমিটি জমা দেব।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সাংবাদিককে উল্টো প্রশ্ন করেন এতে আপনার এত ইন্টারেস্ট কেন? তদন্তের কথা না বলে এ প্রতিবেদকের সাথে রূঢ় আচরণ করেন।
তাঁর এ আচরণের মাধ্যমে প্রমাণ করে তিনিও আবুল কালাম আযাদের উপঢৌকন পেয়ে সুর পাল্টাচ্ছেন।