দেশে ফিরে পরিকল্পিত গুজব আর প্রোপ্যাগান্ডা জবাব দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। শুধুমাত্র হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলেল জন্য তাকে নিয়ে গুজব ছড়িয়েছিলো একটি মহল। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই নয়, গুজব ছড়ানোর সামনে ছিলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শো উপস্থাপকও। তবে সব গুজব মিথ্যা প্রমাণ করে তিনি দেশে ফিরে তরুণ উদ্ভাবকদের হাতে তুলে দিলেন জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২৩।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রে বাজেয়াপ্ত’ , ‘ইন্টারপোলের মাধ্যমে সজীব ওয়াজেদ জয় গ্রেফতার’ , ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞায় জয়’ , জয়ের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কড়া চিঠি’ , ‘যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে পালিয়েছেন জয়’ – এমন অনেক অপপ্রচার চালানো হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। যদিও তিনি বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রে তার অবস্থানের বার্তা নানাভাবে। সর্বশেষ তিনি তার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে একটি পারিবারিক ছবি পোস্ট করেছেন ভার্জিনিয়ার একটি গলফ ক্লাবে। মায়ের জন্মদিনে উপলক্ষে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি প্রকাশ করেন সজীব ওয়াজেদ। এই ছবিতে দেখা যায়, সজীব ওয়াজেদ তার পরিবার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে উপস্থিত হয়েছেন তার গলফ ক্লাবে। ছবির ক্যাপশনে সজীব ওয়াজেদ লেখেন, ‘ভার্জিনিয়ায় গল্ফ ক্লাবে পরিবারের সঙ্গে মায়ের জন্মদিনের ডিনার।’ এই ছবির মাধ্যমে সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়ে দেন, পরিবারসহ তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই রয়েছেন। শুধু সমালোচনার জন্যই মিথ্যা বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল তার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ বা ট্রেজারার বিভাগও খুঁজছে না।
সেই ছবি পোস্টের মাত্র ৮ ঘণ্টার মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টটিতে কমেন্ট করছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে অনেকেই গুজব রটনাকারীদের সমালোচনা করছেন। এক ব্যক্তি লেখেন, ‘এভাবে মাঝে মধ্যে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া উচিত, না হলে যেভাবে তারা (গুজব রটনাকারীরা) শুরু করেছিলো।’ গুজবকারীদের সমালোচনা করে অনেকেই বলেছেন, ‘সত্য সামনে আসবেই। সমালোচনা-গুজব সব ব্যর্থ সত্যের কাছে। প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।’
ছবি পোস্টের পর অপপ্রচার চালানো বন্ধ হয়নি বরং ছবিটি এডিট করে কিংবা ছবির তথ্য সম্পর্কে ভুয়া এনালাইসিস করে বুঝানোর চেষ্টা কড়া হয়েছে ছবিটি অনেক আগে তোলা। যদিও প্রযুক্তিবিদদের মতে, ফেসবুকে আপলোড করা ছবির তথ্য পুনরায় ডাউনলোড করে উদ্ধার করা সম্ভব না।
‘ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়’, গত ২৪ অক্টোবর এমন শিরোনামে ভিডিও প্রকাশ করা হয় একটি ফেসবুক পেজ থেকে। এটি প্রচারিত হয় বিএনপি-জামায়াতসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু পেজ ও প্রোফাইল থেকে। শুধু তাই নয়, চলতি বছর এমন আরও অনেক গুজব ছড়ানো হয়েছে জয়কে নিয়ে।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে অসংখ্য গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ও কারণ ছাড়াই ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে এমন সব অদ্ভুত ভিডিও । এসব ভিডিও বেশিরভাগই তৈরি করা হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবস্থান নিয়ে যখন অপপ্রচার তুঙ্গে তখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতি গুজববাজ গোষ্ঠী গত বেশ কিছু দিন ধরে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে একটি গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে, সজীব ওয়াজেদ জয় নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেই, কারণ তাকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এদের নিম্নমানের রুচি এবং মিথ্যাচারের কোনো সীমা নেই। এদের রাজনীতি ঘুরপাক খায় নোংরামি, রুচিহীনতা এবং মিথ্যাচারের আবর্তে।
জয়কে নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে কথিত নর্থইস্ট নিউজে। সেখানে চন্দন নন্দী নামে এক সাংবাদিক লিখেছেন -বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পুত্রবধূ ভার্জিনিয়ায় নতুন বাড়ি কিনলেন, কিন্তু ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ছবিতে ‘নিখোঁজ’!
গুজব ছড়ানো হয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে জয়ের নিয়োগ নিয়েও। বলা হয় – কোটি কোটি টাকা বেতন নেন সজীব ওয়াজেদ জয়। অথচ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার নিয়োগপত্রে বলা হয়েছে- ‘এই নিয়োগ খন্ডকালীন এবং অবৈতনিক’।
জয়কে নিয়ে গুজব চালানো হচ্ছে এটি প্রমাণিত হয় তার ছবি পোস্ট করার আগেই। কারণ প্রথমে গুজব চালানো হয় – জয়কে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করতে দিচ্ছে না সেদেশে। এরপর আবার বলা হয় – জয় যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না দিলে সেদেশে গ্রেফতার করা হয় কিভাবে- এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে একটি গোষ্ঠী উদ্দেশমূলকভাবে জয়কে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গুজবের ডানা মেলে আরও বিস্তর ভাবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীপক্ষ যুৎসই আন্দোলন না গড়তে পেরে বারবার ছড়িয়েছে নানা গুজব। এছাড়া বিরোধী রাজনীতিবিদরাও গুজবের আগুনে ঢেলেছেন ঘি। গুজব ছড়িয়েছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের একজন টকশো উপস্থাপকও। এছাড়া সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে গুজব ছড়িয়েছেন এক সময়ের ডাকসাইটে ছাত্রনেতা বর্তমানে একটি দলের নেতৃত্বে থাকা মাহমুদুর রহমান মান্নাও।
দেশে ফিরে শনিবার (১৮ নভেম্বর) মানবিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশের সেরা ১২ যুব সংগঠনকে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’ তুলে দিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে দেশের ৭৫০টিরও বেশি সংগঠনের মধ্য থেকে ছয় ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেয়ার আয়োজক আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সিআরআই’র অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘ইয়াং বাংলা’। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) প্রধানও সজীব ওয়াজেদ জয়। এই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আগামী দশ থেকে পনেরো বছর পরে দেশে বিএনপি-জামায়াত নামে কোনো দল থাকবে না।
জয়ের দেশে ফেরা খবরে কেউ কেউ ফেসবুকে লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ঢাকায় এসেছেন। উনার দেশে আগমনের মাধ্যমে পিনাকী ভট্টাচার্য, ইলিয়াস হোসেন, কনক সারওয়ারদের মতো অতিকথন আর অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়ানো ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের গ্রহণযোগ্যতা পুরোপুরি নষ্ট হলো। চন্দন নন্দীর মতো মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে এরা লাখো মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়িয়ে লাখো মানুষকে সাময়িক উত্তেজিত করে হতাশা সৃষ্টি করেছে এরা। দেশে কিছু ঘটলে বা ঘটার সম্ভাবনা থাকলে সেটা সময় হলেই সবাই দেখতে পারবে, না ঘটলে সেটাও সঠিক সময়মতো সবাই প্রত্যক্ষ করবে। তৎপরিবর্তে এসব ইউটিউবাররা অলিক ভবিষ্যদ্বাণী করে মানুষকে দিবাস্বপ্নে বিভোর রেখে মোটিভেশনের বদলে পর্বতসম হতাশ করে ছেড়েছে। চন্দন নন্দীদের প্রোপাগান্ডা থেকে নিজেকে হেফাজত করুন। এদের আলাদা এজেন্ডা আছে।