দেশের প্রথম স্মার্ট হাইওয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হবে আগামী ডিসেম্বরে। দ্বিতীয়টি এক্সপ্রেসওয়েটি জয়দেবপুরকে রংপুরের সাথে সংযুক্ত করবে। উভয় মহাসড়কই ‘ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (আইটিএস) যুক্ত থাকবে। যাতে যানবাহন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, নজরদারি ক্যামেরা, স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট শনাক্তকরণ ক্যামেরা, গতি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া এবং পরিবর্তনশীল মেসেজিং সাইন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সওজ-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এম তানভীর সিদ্দিক জানান, ৩৮ কিলোমিটার ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে হবে প্রথম স্মার্ট হাইওয়ে যেখানে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে আইটিএস সম্পূর্ণভাবে ইনস্টল করা হবে।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক সিদ্দিক বলেন, ১২৬ কোটি টাকার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার কোইকার (কেওআইসিএ) সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ২৫০ কিলোমিটার জয়দেবপুর-রংপুর মহাসড়কে প্রযুক্তিটি চালু করার কাজ চলছে।
সরকার সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসাবে গতি এবং ওজন সীমা অতিক্রমকারী যানবাহন শনাক্ত করার প্রযুক্তি আনা হয়েছে। যা সীমা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য যথাযথ প্রমাণ হাজির করবে। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে মহাসড়কের নজরদারি জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন সওজ-এর তত্ত্বাবধায়ক।
জয়দেবপুর-রংপুর স্মার্ট হাইওয়েটি দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার (এসএএসইসি) করিডোর হিসাবে বিবেচিত হবে। এসএএসইসি গ্রুপে রয়েছে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশি অবকাঠামো সংস্থা ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (এনডিই) এবং চাইনিজ ফার্ম ফাইবার হোম টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেডকে জয়দেবপুর-রংপুর স্মার্ট হাইওয়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি আইটি ফার্ম ন্যাশনাল টেককে যথাক্রমে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেওয়ের কাজ দেয়া হয়।
এনডিই ইনফ্রাটেক, এনডিই-এর একটি উদ্যোগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ এস এ হুসেন বলেন, ‘আমরা আমদানি করা হার্ডওয়্যার এবং সরঞ্জামগুলো স্থাপনের জন্য অর্ডার দিয়েছি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে (জয়দেবপুর-রংপুর মহাসড়কের) কাজটি শেষ করতে পারব।
তিনি বলেন, শহরের মিরপুর এলাকার পাইকপাড়ায় একটি কেন্দ্রীয় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সেন্টার (টিএমসি) স্থাপন করা হবে। কেন্দ্রের তিনটি আঞ্চলিক টিএমসি থাকবে টাঙ্গাইলের পাকুল্লা, বগুড়ার মোকামতলা এবং রংপুরের ইসলামপুরে।
কেন্দ্রগুলো আইটিএস সিস্টেমের মাধ্যমে পুরো হাইওয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। দুর্ঘটনা এবং অন্য বাধা শনাক্ত করার জন্য আইটিএসের একটি ‘ভেহিক্যাল ডিটেকটিভ সিস্টেম (ভিডিএস)’ থাকবে।
তিনি বলেন, হাইওয়ে বরাবর নজরদারি ক্যামেরাগুলোর মাধ্যমে টিএমসি কর্মীরা মহাসড়কে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করার সুযোগ পাবে এবং স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট রিকগনিশন (এএনপিআর) ক্যামেরাগুলো তাদের ট্র্যাফিক নিয়ম লঙ্ঘনকারী বা লোড এবং গতি সীমা অতিক্রমকারী যানবাহন শনাক্ত করতে সহায়তা করবে।
প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গতি শনাক্তকরণ সিস্টেমের মাধ্যমে গতি শনাক্ত করতে সহায়তা করবে। এলইডি-সক্ষম ভেরিয়েবল মেসেজিং সাইন (ভিএমএস) হাইওয়ের ধারে গ্যান্ট্রিগুলোতে ইনস্টল করা হবে। যা যানবাহনগুলোকে রাস্তায় কোনো বিপদ বা অস্বাভাবিক জিনিস সম্পর্কে আগাম বার্তা দেবে।
কোনো ট্রাক নির্ধারিত সীমার বেশি পণ্য বহন করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের জন্য টাঙ্গাইলের পাকুল্লা, বগুড়ার মহাস্থানগড় এবং রংপুরের ইসলামপুরে তিনটি এক্সেল লোড কন্ট্রোল সেন্টার স্থাপন করা হবে।