গাজীপুরের শ্রীপুরে মাসহ তিন সন্তানকে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তারা হলেন কাজিম উদ্দিন (৫০), হানিফ (৩২), বশির (২৬), হেলাল (৩০) ও এলাহি মিয়া (৩৫)। গতকাল সকালে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় জব্দ করা হয় ৩০ হাজার টাকা, একটি আংটি, একটি হলুদ রঙের গেঞ্জি, একটি জিন্স প্যান্ট এবং তিনটি লুঙ্গিসহ বেশ কিছু আলামতও। এর আগে একই ঘটনায় কাজিমুদ্দিনের ছেলে পারভেজকে (১৭) গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গতকাল অনলাইনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম জানান, এর আগে পিবিআইর হাতে গ্রেফতার পারভেজ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সেখানে সে এ ঘটনায় একাই জড়িত বলে স্বীকার করে। তবে এরা অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির। পারভেজ এর আগেও এক শিশুকে ধর্ষণের পর খুন করে। ওই ঘটনায় সে অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে জামিনে ছাড়া পায়। এবারও সে একই ধরনের ঘটনায় জড়ায় তার বাবাসহ অন্যদের নিয়ে। সে জানে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বলে এবারও সে ছাড়া পাবে। হয়তো এরকমটা চিন্তা করেই বাবাসহ অন্যদের বাঁচাতে সে নিজের কাঁধে সব দোষ নেয়। গ্রেফতারকৃতরা সবাই মাদকাসক্ত। তারা চুরি, জুয়া ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সঙ্গেও জড়িত। এরা পেশায় কেউ রিকশাচালক, কেউ ছোটখাটো কাজ করে। এরা সবাই নিহতদের বাসার কাছে আড্ডা দিত। ঘটনার কিছুদিন আগে তারা জানতে পারে নিহত ফাতেমার স্বামী কাজল মালয়েশিয়া থেকে ২০/৩০ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন হুন্ডির মাধ্যমে। তারা সবাই পরিকল্পনা করে সেই টাকা তারা লুট করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩ এপ্রিল তারা ফাতেমাদের বাসার পেছনে জড়ো হয়। পারভেজ প্রথমে ভেন্টিলেটর দিয়ে ডুপ্লেক্স ওই বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে।
অন্যদিকে হানিফ ছাদ দিয়ে প্রবেশ করে চিলেকোঠায়। তারপর তারা বাসার গেট খুলে দিলে পারভেজের বাবাসহ অন্যরা বাসায় ঢুকে পড়ে। হানিফ ও কাজিমুদ্দিন প্রথমে ফাতেমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তার কাছ থেকে হুন্ডির পাঠানো ২০/৩০ লাখ টাকা চায়। ফাতেমা এরকম কোনো টাকা পাঠানো হয়নি বলে জানায় এবং বাসায় থাকা ৩০ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেয়। এ সময় দুজনে ফাতেমাকে ধর্ষণ ও হত্যা করে। এদিকে অন্য ঘরগুলোতেও চলে লুটপাট আর ধর্ষণ। পারভেজ ও তার বাবা কাজিমুদ্দিনসহ সবাই একসঙ্গে ফাতেমার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নুরা (১৬) ও ছোট মেয়ে হাওয়ারিনকে (১৩) ধর্ষণ করে। এরপর তাদের হত্যা করে। তবে প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিলকে (৮) হত্যা করা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তারা। এক গ্রুপ তাকে হত্যা করতে না চাইলেও আরেক গ্রুপ সাক্ষী না রাখার পক্ষে মত দেয়। পরে সবাই বাক প্রতিবন্ধী শিশুটিকেও হত্যা করে।
এ ঘটনায় আরও ৪/৫ জন জড়িত থাকতে পারে উল্লেখ করে সারোয়ার বিন কাশেম জানান, তাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তবে তদন্তের স্বার্থে তিনি তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
গত ২৩ মে ভোর ৫টায় গাজীপুরের শ্রীপুরে আবদার এলাকায় মালয়েশিয়া প্রবাসী রেজোয়ান হোসেন কাজলের ডুপ্লেক্স বাসায় নৃশংসভাবে খুন করা হয় তার স্ত্রী স্মৃতি ফাতেমা (৩৮), তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নুরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওয়ারিন (১৩) ও প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিলকে (৮)। সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন