দাবিকৃত টাকা না পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীর পরিবর্তে বয়োবৃদ্ধ দাদাকে আটক করেছে মেহেরপুর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি অভিযান দল। ৩৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের মামলার আসামী হিসেবে মিল শ্রমিক বয়োবৃদ্ধ আব্দুল খালেককে (৭০) গাংনী থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। পরিবারের উর্পাজনক্ষম ব্যক্তি হাজতবাসে থাকায় চোখের পানি ছাড়া আর কোন অবলম্বন নেই আব্দুল খালেকের স্ত্রী পঙ্গুপ্রায় তহমিনা খাতুনের।
তহমিনা খাতুনের অভিযোগ, তার নাতি মাহফুজকে খুঁজতে গিয়ে গত বুধবার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল তার বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে দাবি করে মাহফুজের দাদা আব্দুল খালেককে আটক করেন তারা।
যাওয়ার সময় অভিযান দলের ইকরামুল নামের এক ব্যক্তি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আব্দুল খালেককে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে। দিন মজুর খালেকের পরিবারের পক্ষে টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। তাকে মামলাসহ গাংনী থানায় সোপর্দ করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান দল। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পুর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, মাহফুজ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তবে তার সাথে তার দাদার সম্পর্ক নেই। দাদা দিন মজুর আব্দুল খালেক স্থানীয় একটি মিলে কাজ করে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা জীবন যাপন করেন। মাহফুজের দোষ দাদার উপরে দেওয়ার বিষয়ে এলাকায় বিরাজ করছে ক্ষোভ।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মেহেরপুরের পরিদর্শক শাহ জালালের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার দুপুরে পৌনে একটার দিকে গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামে অভিযান চালানো হয় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও গাংনী থানা পুলিশের একটি দলের সমন্বয়ে। মাহফুজ পলাতক থাকায় তার। এসময় দাদা আব্দুল খালেককে গ্রেফতার পুর্বক জিজ্ঞাসাবাদে তার দেখানো মতে ৩৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। মামলায় আব্দুল খালেকের নাতি মাহফজুকে এক নং আসামি ও খালেককে ২নং আসামি করেছেন শাহ জালাল।
ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে বয়োবৃদ্ধ দিনমজুর আব্দুল খালেকের স্ত্রী বলেন, অভিযানের লোকজন কি পেয়েছে তা কাউকে দেখাইনি। এ বিষয়ে তো আমার স্বামী জড়িত না। শারীরিকভাবে অক্ষম হলেও শুধুমাত্র অভাবের তাড়নায় তিনি বাড়ির পাশে একটি মিলে শ্রমিকের কাজ করেন। আমি প্যারালাইসড হয়ে বিছানায় পড়ে আছি। শুধুমাত্র টাকা দিতে পারিনি বিধায় আমার স্বামীকে চালান দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মাহফুজের স্ত্রী রুম্পা খাতুনকে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করা হলে আমার বৃদ্ধ স্বামী বাধা প্রদান করে বলেন, স্যার মেয়ে মানুষ আমার বাড়ির ইজ্জত। তাছাড়া মাহফুজের বিষয়ে রুম্পা কিছুই জানেনা। তাকে রেখে যেতে অনুরোধ করাই আমার স্বামীকে নিয়ে গেছে।
অভিযান কালীন সময়ে ওই দলটি সাদা কাগজে কয়েকজনের স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। তার মধ্যে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আমজাদ আলীর ছেলে তোহিদুল ইসলাম ও পলাতক মাহফুজের স্ত্রী রয়েছেন।
তোহিদুল ইসলাম ও মাহফুজের স্ত্রী রুম্পা খাতুন বলেন, ফেনসিডিল উদ্ধার যেখান থেকে হয়েছে সেটি আমাদেরকে দেখানো হয়নি। পরে বলা হয় বস্তায় ফেনসিডিল আছে স্বাক্ষর করেন। সাদা কাগজের কয়েকটি পৃষ্টায় স্বাক্ষর করিয়ে তারা চলে যায়।
রুম্পা খাতুন অভিযোগ করেন, ৫০ হাজার টাকা দিলে আব্দুল খালেককে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে তাদের মধ্য থেকে একজন আমাদের জানিয়ে চলে যায়। আমরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে টাকা ধার চেয়েও পাইনি তাই তাকে ছাড়াতে পারিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মাদক মামলার বাদি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক শাহ জালাল জানান, আমি আব্দুল খালেকের বাড়ি থেকে ফেনসিডিল পেয়েছি। পলাতক মাহফুজকে সহযোগীতা করে তার দাদা, তাই তাকে আটক করা হয়।
তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ^াস দিলেন মেহেরপুর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহাকারি পরিচালক শরীয়তুল্লাহ। তিনি বলেন, ঘটনাটির প্রয়োজনীয় তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।