গাংনী উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার মাহফুজ রানার বিভিন্ন অনিয়ম, ইচ্ছামাফিক অফিস করা, দুর্নীতি, ঘুঁষ আদায়, সাধারণ সেবাগ্রহীতাদের সাথে ও দলিল লেখকদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণের প্রতিবাদ ও তার বদলীর দাবীতে দীর্ঘদিন কলম বিরতীসহ নানা কর্মসূচী পালন করে আসছেন গাংনী উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখকরা।
প্রায় এক মাস অফিস না করে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ১০ জন দলিল লেখকের নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে গাংনী থানায় একটি সাধারণ ডাইরি (জিডি) করেন মাহফুজ রানা।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, সাব রেজিষ্ট্রারের কার্যালয় একটি সরকারি দপ্তর। যার কাজের ধরণ বিচারিক এবং রাজস্ব আহরনের অন্যতম উৎস্। সম্প্রতি অত্র কার্যালয় প্রাঙ্গণে নিবন্ধন ব্যাতিত নাশকতা, নিবন্ধন প্রত্যাশী সাধারণ সেবা গ্রহীতাদের প্রবেশে বাঁধা প্রদান, সরকারী কাজে বাঁধার সৃষ্টি, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশ্য করে অসৌজন্যমুলক আচরণসহ রাজস্ব আদায়কে বিঘ্নিত করছে কতিপয় দলিল লেখকরা।
উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রার অফিসের ১০ জন দলিল লেখকের নামে গাংনী থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। জিডি নং ১৮, তারিখ ০১/০৩/২০২২ ইং
এরা হলেন, দলিল লেখক আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র দলিল লেখক ফাকের আলী, দিনাজ উদ্দীন, সিনিয়র দলিল লেখক মকলেছুর রহমান মুকুল, নজরুল ইসলাম, শামীম রেজা, একেএম হানিফ উল বাশার, ইদ্রিস আলী, কামরুজ্জামান রুবেল ও রাশেদুল ইসলাম।
গাংনী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেতাব আলী জানান, সাব-রেজিষ্ট্রার মাহফুজ রানার দায়ের করা জিডিটি গুর্ত্বুর সাথে বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে তদন্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু দলিল লেখক ও সাবরেজিষ্ট্রার অফিসের কয়েকজনের সাথে কথা বলা হয়েছে।
এদিকে, মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন দলিল লেখক ও সার বেজিষ্ট্রার মাহফুজ রানার সাথে পৃথকভাবে বসে উভয়পক্ষকে সহনশীল আচরণ, একে অপরকে শ্রদ্ধার সাখে নিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি কার্যক্রম চালিয়ে যাবার নির্দেশ দনে। তিনি বলেছেন, ছোট খাটো ভুল ত্রুটির কারণে গাংনী উপজেলার মানুষ ভোগান্তির শিকার যেনো না হন।
এসময় গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম, জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও বিশিষ্ট সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠক সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ও হিজলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান, আওয়ামীলীগের বিশিষ্ট নেতা মনিরুজ্জামান আতু উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় ১ মাস পর আবারও আনুষ্ঠানিকভাবে দলিল রেজিষ্ট্রি করার মধ্য দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শুরু হয়।
জানা গেছে, সাবরেজিষ্টার মাহফুজ রানা গাংনীতে যোগদানের পরপর থেকে তার ইচ্ছামফিক অফিসিয়াল কার্যক্রম করার কারণে উপজেলার হাজার হাজার সেবাগ্রহীতারা চরম ভোগান্তিতে পড়ে।
সে বিগত দুই মাস নকুল নবীশদের তাদের দলিল নকল করার কাজ বন্ধ করে রাখেন। যে কারণে নকল নবিশরা মারাত্বক মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েন। অফিসের বালাম বই আটকিয়ে তাদের কাজ বন্ধ করে দেন। সাব-রেষ্ট্রিারের খামখেয়ালীপনার কারণে নকুল নবিশরা যেমন আয়রোজগার বিহীন মানবিক বিপর্যয়ের মুখে তেমনি সাধারণ গ্রহীতারাও পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
সাম্প্রতিক সময়ে একজন জমি বিক্রেতার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুঁষ নিয়ে ধরা পড়ার পর উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ খালেক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসুমী খানমসহ সহ প্রশাসনের লোকজন বসে ক্ষমা চেয়ে আবার সে তার দায়ীত্ব পালন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
দলিল লেখকরা অভিযোগ করেন, গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারী গাংনীর সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে মাহফুজ রানা যোগদান করেন।
গাংনীতে যোগদান করার পর থেকে নানা অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন মাহফুজ রানা। সে কৌশল হিসেবে দলিল লেখক থেকে শুরু করে অফিসের সদস্যদের চাপের মুখে রেখে জিম্মি করে। তিনি নিজেকে সাব রেজিষ্ট্রার হিসেবে পরিচয়ের চেয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ছেলে পরিচয় দিতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ করেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
দলিল লেখকরা জানান, সাব রেজিস্টার মাহফুজ রানা দলিল জমা নেওয়ার নামে ৬শ টাকা হাতিয়ে নেন।এছাড়া হেবা দলিল রেজিষ্ট্রি করতে সরকারী ফিস মাত্র ৬শ’ টাকা হলেও সে ১৫ শ’ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন তিনি।
দলিলের নকল উঠাতে সরকারী ফিস মাত্র ৪শ’৫০ টাকার পরিবর্তে দলিল প্রতি ১ হাজার টাকা থেকে ১২শ”টাকা হাতিয়ে
মাহফুজ রানার অনিয়মের প্রতিবাদ করলে সাম্প্রতিক সময়ে একজন দলিল লেখককে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেন তিনি। এঘটনায় দলিল লেখকরা ফুঁসে উঠলে আবারও তাদের সাথে সমঝোতা করে তাকে থানা থেকে ছাড়িয়েও আনেন। তার অনিয়ম দূর্নীতির প্রতিবাদ করলে দলিল লেখক থেকে শুরু করে কর্মচারীরাও সাব রেজিষ্ট্রার মাহফুজ রানার রোশানলে পড়েছে বারবার।
এদিকে সাব রেজিষ্ট্রার মাহফুজ রানা তার অপকর্ম আড়াল করতে সাংবাদিক, সরকারী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন মহলকে দিয়ে সাংবাদিককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
ইতোপূর্বে গাংনী প্রেসক্লাবের সভাপতি রজমান আলীকে চাঁদাবাজ অখ্যায়িত করেতার ফেইসবুক পেইজে একটি পোষ্ট দেন। পরে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে ক্ষমা চেয়ে আপোস মিমাংসা করে নেন।
জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা বিভিন্ন এলাকার সেবগ্রহিতারা জানান, ফাইলিংয়ের নামে ৯ শ’টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এর আগে মসজিদ উন্নয়নের নামেও দলিল প্রতি ১০০ টাকা করে হাতিয়ে নেয়া হতো। এনিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখা লেখি ও বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠায় সেটা নেয়া বন্ধ হয়। তবে , মসজিদের নামে আদায় করা কয়েক লক্ষ টাকার কোনো হুদিস পাইনি কেউ।শুধু মসজিদের জন্য নয়, মাহফুজ রানা মাত্র একটি হ্যান্ড মাইক কেনার জন্য ২৮৫ জনের কাছ থেকে দলিল প্রতি দেড় শ টাকা করে আদায় করেছেন।অথচ, সে হ্যান্ড মাইকটিও দান করেছেন একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
মাহফুজ রানার বিভিন্ন দুর্ণিতী ও অনিয়মের অভিযোগ এনে ইতোমধ্যে জেলা রেজিষ্টার, বিভাগী রেজিষ্ট্রার ও ঢাকা প্রধান রেজিষ্ট্রারের বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে দলিল লেখকরা।