পাথরের সঙ্গে বালু মেশানো, পরিমাণে কম দেওয়া, মোটা বালুর পরিবর্তে ফিলিং বালু মেশানো, দিনের পরিবর্তে রাতে ঢালাই, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জিসি গোপগ্রাম এলাকার জিসি সড়কের পিসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ।
এলাকাবাসীর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গতকাল সোমবার বিকালে নির্মাণাধীন কাজ বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রকৌশলী অফিস।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দুই কোটি ৪৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মাণে গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি চুক্তি করে নড়াইল জেলার লোহাগাড়া থানার লক্ষ্মীপাশার মেসার্স নূর কনস্ট্রাকশন। ওই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করার চুক্তি থাকলেও কাজের নমুনা মেলেনি কয়েক মাস পরেও। এরপর নির্ধারিত তারিখের পাঁচ মাস পরে ১৭ জুলাই ব্রিজের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ।
উদ্বোধনের পর নির্মাণ সামগ্রী ফেলা রাখা হলেও নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেনি। অবশেষে মাস খানেক আগে ব্রিজের মাটির নিচে কয়েকটি পিলারের কাজ শুরু হতে না হতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে কাজের মেয়াদ। এক বছর মেয়াদি কাজের মেয়াদ শেষ হলেও দেখা মেলেনি ব্রিজের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ব্রিজের পিলার নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে বালু মিশানো পাথর। মোটা বালুর সঙ্গে চিকন বালু ও দিনের পরিবর্তে রাতে চলছে ঢালাইয়ের কাজ।
এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদেন্ত সত্যতা মেলায় গতকাল বিকালে উপজেলা প্রকৌশলী অফিস কাজ বন্ধ করে দেয়।
নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশেই পলাশ হোসেনের হাঁসের খামার। পলাশ উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। ব্রিজের নির্মাণ কাজ প্রসঙ্গে পলাশ বলেন, ‘এই ব্রিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু ঠিকাদার পাথরের সঙ্গে বালু ও মোটা বালুর সঙ্গে ধুলাবালু মিশিয়ে কাজ করছেন। যা সম্পূর্ণ অনিয়ম ও ঝুঁকিপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, অনিয়মের কথা বললেই চাঁদাবাজির হুমকি দেন।
হাসান নামের স্থানীয় একজন বলেন, কাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। এভাবে কাজ হলে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, এক বছরেরও ব্রিজের মুখ দেখতে পারলাম না। মানুষের চলাচলের খুব কষ্ট হচ্ছে।
ওই ব্রিজ দিয়ে চলাচলকারী কুমারখালী সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মুরাদ হোসেন বলেন, পাথরের বদলে শুধু বালু পাওয়া যাচ্ছে। ওপরে মোটা বালু থাকলেও ভেতরে ধুলাবালু। তিনি অভিযোগ করেন, অনিয়ম করতেই দিনের কাজ রাতে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কুমারখালী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, বালু মেশানোসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ব্রিজের কাজ আপাতত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কাজের মেয়াদও শেষ হওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।