নিয়ত আলী। ভালোর বিপরীতে মন্দ নিয়তে তিনি কালোবাজারী, মাদক ব্যবসা করে এখন হয়েছেন বহু সম্পদের মালিক। আর সেটা বোঝাতে বছর দুয়েক আগে সেজেছেন গরুর খামারি। পাশাপাশি করেন বীজ উৎপাদনের জন্য চাষবাসও। কিন্তু তার মূল পেশা হচ্ছে কালোবাজারি। মাদকসহ ভারতীয় বীজ এনে নিজের উৎপাদিত বীজ বলে চালিয়ে দেন। এমন অভিযোগ উঠে এসেছে মেহেরপুর প্রতিদিন এর অনুসন্ধানীতে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে এ তথ্য উঠে এসেছে।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের নিয়ত আলী বসবাস করতেন ভারতের ব্রম্মানগরে। বছর ১৫ আগে ভাই অম্মত ও পিতা আলিহিনসহ বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামে বসবাস শুরু করে। নিয়ত আলীর পিতা আলিহিনকে আলী ডাকাত বলেই সবাই চিনতো।
কয়েক বছর আগে পিতা আলিহিন অরফে আলী ডাকাত ভারতীয় গরু পাচার করতে গিয়ে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হন। এরপর মুজিবনগরের আনন্দবাস গ্রামে বসতি তৈরি করেন নিয়ত ও তার ভাই অম্মত আলী। আনন্দবাস গ্রামে মহিষ চুরি করে জনরোষে পড়ে অম্মত আলী পুনরায় ফিরে যান ভারতের ব্রম্মানগরে। বর্তমানে সে সেখানেই বসবাস করছেন।
জানা গেছে, নিয়ত আলী বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের নাগরিক। সেই সুবাদে দু-দেশে অবাধ বিচরন নিয়ত আলীর। ভারতে অবস্থানরত ভাই অম্মতের সহোযোগীতাই ব্রম্মানগর সীমান্ত দিয়ে গড়ে তুলেছেন মাদক চালানের চক্র। বীজ ও গরু ব্যবসার আড়ালে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। প্রশাসন ও গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকলেও ধরা পড়েনি কোন দিন। চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা ও দামুড়হুদার মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে আতাত করে চলে তার ব্যবসা। ফেন্সিডিল, গাঁজাসহ মাঝে মধ্যে অস্ত্র চোরাচালানের সাথেও জড়িত বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, নিয়ত আলী এ দেশে যখন আসে তখন কিছুই ছিলনা। এখন প্রচুর টাকার মালিক। মাদক ব্যবসা করতে গিয়ে বর্তমান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন তাকে আশ্রয় প্রশয় দেন, এমনকি মাদক ব্যবসার সাথে তিনি শেয়ারও আছেন। তবে মাদকের ব্যবসা করলেও নেতারা আশ্রয় দেওয়ায় ধরা পড়ে না।
স্থানীয় আরো কয়েকজন জানান, নিয়ত আলী ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের ব্যবসা। দশ বছর আগে যে নিয়তের হাত-পা ছাড়া সম্পদ বলতে কিছুই ছিল না সেই নিয়তের এখন কোটি টাকার সম্পদ। এক সময় অন্যের জমিতে কাজ করে ও ভারতীয় মালামাল কালোবাজারির মাধ্যমে এদেশে এনে করে সংসার চালাতো নিয়ত আলী। পরে মাদক চালানের সাথে জড়িয়ে রাতারাতি বনে গেছে কোটিপতি। আলিসান বাড়ি, দুইটি মটরসাইকেল, একটি ট্রাকটরসহ হয়েছেন বেশ কিছু সম্পদের মালিক।
এ বিষয়ে নিয়ত আলীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা বলতে চাননি। তার সাথে কথা বলতে কয়েকদিন আনন্দবাস গ্রামে যাওয়ার পরও সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ায় তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এমনকি কোন অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি।
বাগোয়ান ইউনিয়নের আনন্দবাস গ্রামের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য জাকির হোসেন জানান, নিয়ত আলী বিভিন্ন দুই নাম্বার ব্যবসার সাথে জড়িত। তার নেটওয়ার্ক অনেক দূর। এ বিষয়ে এর বেশি কথা মোবাইলে বলা যাবে না।
বাগোয়ান ইউপি চেয়ারম্যান ও আনন্দবাস গ্রামের বাসিন্দা আয়ুব আলী জানান, নিয়ত আলী এর আগে টুকটাক মাদকের ব্যবসা করতো। কিন্তু বছর দুয়েক হলো সে গরুর ফার্ম করেছে। এর আড়ালে কোন কিছু করে কিনা আমার জানা নেই। তাকে নিয়ে জড়িয়ে যারা কথা বলেছেন, তারা ঠিক বলেননি। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে চোর, ডাকাত, সাধু সন্ন্যাসী সকল শ্রেণীর মানুষকে নিয়েই চলতে হয়।
মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাসেম আলী জানান, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতরা কেউ রেহাই পাবে না। আজ না কাল তাকে ধরা পড়তেই হবে। তাছাড়া সীমান্ত এলাকায় আইনের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকা আমরা অনেক কিছু চাইলেও করতে পারিনা।