মেহেরপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও ঠিকাদার শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুলের দেওয়া ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার চেক ডিজঅনার হওয়াতে ভুক্তভগী যৌথ ব্যবসায়ী দেবাশীষ কুমার বাগচী উকিল নোটিশ পাঠান। পরবর্তীতে শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুল অতিরিক্ত জেলা ম্যজিস্ট্রেট আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন ( মামলা নং ৪৯২/২৩ তারিখ ৩০-০৮-২০২৩)। আদালতের সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে পুলিশ দেবাশীষ কুমার বাগচীর বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালায়।
গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২ টা ১০ মিনিট থেকে দুপুর ১ টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত পুলিশের একটি দল মেহেরপুর পৌর এলাকার জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের বিপরীত দিকে অবস্থিত দেবাশীষ কুমার বাগচীর ভাড়া বাসার পাঁচতলায় এই তল্লাশি করে। ডিজঅনার হওয়া ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার চেকটি যার নম্বর ঈঞখঐ ৫৮৯১৬৫০ উদ্ধারের জন্যই এই তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে চিরকুট
৩০ আগস্ট ২০২৩ এডভোকেট খ ম ইমতিয়াজ হারুন বিন জুয়েলের স্বাক্ষরিত দেবাশীষ কুমার বাগচীর দেওয়া উকিল নোটিশের সুত্র থেকে জানা গেছে , জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর ছোট ভাই শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুল এবং দেবাশীষ কুমার বাগচী নিজ নিজ ঠিকাদারী লাইসেন্স সহ বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে যৌথভাবে দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারী ব্যবসা পরিচালনা করতেন। ব্যবসা পরিচালনাকালে শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুলের কাছে দেবাশীষ কুমার বাগচীর ১,৮০,০০,০০০/- (এক কোটি আশি লক্ষ) টাকা পাওনা হয়। একপর্যায়ে শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুল ও দেবাশীষ কুমার বাগচী যৌথ ব্যবসার পরিসমাপ্তি ঘটাতে সমুদয় ব্যবসা ও ব্যবসা সংক্রান্ত দলিলাদী নিজ-নিজ হেফাজতে নেন এবং দেবাশীষ কুমার বাগচীর পাওনা ১,৮০,০০,০০০/- (এক কোটি আশি লক্ষ) টাকা পরিশোধের উদ্দেশ্যে গত ২৪ জুলাই ২০২৩ তারিখে শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুলের নামীয় রুপালী ব্যাংক লিঃ, মেহেরপুর কর্পোরেট শাখা, মেহেরপুর -এর চলতি একাউন্ট নম্বর ৩১৮৬০৫০০০০০৪১-এর একটি চেকের মাধ্যমে ১,৮০,০০,০০০ টাকা দেবাশীষ কুমার বাগচীকে পরিশোধ করেন। এবং দেবাশীষকে বলেন ব্যাংকে চেকটি জমা দিলে টাকা পেয়ে যাবেন। চেক নম্বর ঈঞখঐ ৫৮৯১৬৫০ (রুপালী ব্যাংক লি)। চেকটিতে শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুলের সাক্ষর ও তার মালিকানাধীন শাদমান ফার্মেসীর সীলমোহর সহ চেকের অপর পৃষ্ঠায় দুইটি স্বাক্ষর দ্বারা সম্পূর্ণ চেকটি সম্পাদন করা ছিল।
শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুলের কথামতো দেবাশীষ কুমার বাগচী উক্ত চেকটি নগদায়নের জন্য গত ২৪ জুলাই ২০২৩ তারিখে দেবাশীষের ব্যাংক একাউন্ট অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, মেহেরপুর শাখার চলতি হিসাব নম্বর ০২০০০২০৮২৮২৪৮- এ জমা দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ১লা আগস্ট ২০২৩ তারিখে তাকে জানায় যে, উক্ত হিসাব নম্বরটি দুই বছর আগেই (২০২১ সালের ৪ এপ্রিল) তারিখে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুল দেবাশীষ কুমার বাগচীকে যে চেকটি প্রদান করেন সেই চেকের নম্বর উল্লেখ করেই চেক প্রদানের তারিখেই (২৪ জুলাই ২০২৩) চেক হারিয়েছে মর্মে থানায় একটি জিডি করেন এবং উল্লেখিত ব্যাংককে অবগত করেন।
পরবর্তীতে দেবাশীষ কুমার বাগচীকে রূপালী ব্যাংক লিঃ, মেহেরপুর কর্পোরেট শাখা গত ১লা আগস্ট ২০২৩ তারিখে চেক রিটার্ন মেমো বা চেক ডিজনার সার্টিফিকেট দেয়।
অতঃপর বিষয়টি দেবাশীষ কুমার বাগচী শহিদ সরফরাজ হোসেন মৃদুলকে জানানোর পর তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেও টাকা পরিশোধের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এতে দেবাশীষ কুমার বাগচীর দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে, শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুল তাকে ঠকাবার উদ্দেশ্যে উক্ত ব্যাংক হিসাবটি বন্ধ জানা সত্ত্বেও বন্ধ একাউন্টের চেক প্রদান করেন। দেবাশীষ মনে করেন চেক প্রদানের পরপরই থানায় মিথ্যা জিডি করে দেবাশীষের পাওনা টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনায় লিপ্ত হয়েছেন । অতঃপর গত ৩০ আগস্ট ২০২৩ দেবাশীষ কুমার বাগচী নেগশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট এক্ট ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারার বিধান মোতাবেক শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুলকে টাকা পরিশোধ করতে রেজিস্ট্রী ডাকযোগে একটি উকিল নোটিশ প্রেরণ করেন।একই দিনে (৩০ আগস্ট ২০২৩) শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুল মেহেরপুর অতিরিক্ত জেলা ম্যজিস্ট্রেট আদালতে চেক হারিয়ে যাওয়ার জিডির সুত্র ধরে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৪৯২/২৩, তারিখ ৩০-০৮-২০২৩। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চেকটি উদ্ধার করতে সার্চ ওয়ারেন্ট ইশ্যু করলে,মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের এস আই মোমিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গতকাল শুক্রবার দুপুরে দেবাশীষ কুমার বাগচীর বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালায়।
দেবাশীষ কুমার বাগচীর স্ত্রী ও একাধিক সাক্ষির উপস্থিতিতে পুলিশের ঘন্টাব্যাপী সময়ের এই তল্লাশি অভিজানে উল্লেখিত চেকটি পাওয়া যায়নি। তবে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা কালে দেবাশীষ কুমার বাগচীর সত্ত্বাধিকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স মেহেরপুর ট্রেডিং এর প্যাডে দেবাশীষের নিজ হাতে লিখিত ৩০ জুলাই স্বাক্ষরিত ও সীলমোহর যুক্ত একটি চিরকুট দেবাশীষের বেড রুমের আলমারিতে সাঁটানো অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে লেখা আছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মৃদুল ভাই দায়ী। আমার ১,৮০,০০০০০ (এক কোটি আশি লক্ষ টাকা) দিলো না। আমার চেক অগ্রনী ব্যাংকে আমার একাউন্টে জমা আছে।‘
এই ব্যপারে শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুলের সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এডভোকেট খ ম ইমতিয়াজ হারুন বিন জুয়েল দেবাশীষ কুমার বাগচীর উকিল নোটিশ প্রদানের সত্যতা মেহেরপুর প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন।