প্রায় আড়াই মাস আগের কথা। গত ৩০ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে ‘বিশ্বব্যাপী আপৎকালীন পরিস্থিতি’ ঘোষণা করে। সে দিনই ইসরায়েল চীন থেকে সমস্ত ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। কয়েক দিনের মধ্যে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায় এশিয়ার সংক্রমিত অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও। কিন্তু ততদিনে সংক্রমণের বীজ বপনের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
ইসরায়েলে প্রথম সংক্রমিতের খবর আসে ২১ ফেব্রুয়ারি। তিনি জাপান থেকে এখানে এসেছিলেন। তবে সংক্রমিতের সংখ্যা যত বেড়েছে, ইসরায়েল ততই বহির্বিশ্ব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে।
ইসরায়েলে যখন সংক্রমিতের সংখ্যা ৫০, তখন বিদেশ থেকে আসা সকলের জন্য ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়। ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে মহামারী ঘোষণা করার পরই ইসরায়েল আরও কড়া নিয়মকানুন জারি করে এবং মার্চের মধ্যে এ সেদেশেও লকডাউনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়।
বিভিন্ন দেশ করোনা সংক্রমণ রুখতে নানা রাস্তা বেছে নিয়েছে।
তবে লকডাউন ও পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া বিশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার করে এই মহামারীর মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে ইসরায়েল। কেমন সেই প্রযুক্তি?
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে করোনা-সংক্রমিত ব্যক্তিদের বর্তমান অবস্থা এবং গত ১৪ দিনে তাদের ভৌগোলিক অবস্থান ও গতিবিধি সংক্রান্ত তথ্য প্রচার করতে থাকে যাতে মানুষজন সচেতন হয় এবং সংক্রমণের হার কমানো সম্ভব হয়।
১৪ মার্চ ইসরায়েল সরকার ‘ট্র্যাক ভাইরাস’ নামে একটি অ্যাপের কথা ঘোষণা করে, যেটাতে সংক্রমিত ব্যক্তিদের অবস্থান দেখানো হবে। এই অ্যাপ যেকোনও ইসরায়েলি তার মোবাইল ফোনে রাখতে পারেন। অ্যাপটি ‘ইনস্টল’ করার সঙ্গে সঙ্গে ফোন ব্যবহারকারীর গতিবিধির উপরে নজর রাখা হবে। এই ব্যক্তি যদি নিজের অজান্তে কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির আশপাশে আসেন তা হলে তখনই তাকে সতর্ক বার্তা এবং কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।
এই ধরনের প্রযুক্তির সাহায্যেই বিভিন্ন দেশ আততায়ীদের ফোন ট্র্যাক করে ও তাদের শ্রীঘরে পাঠায়।
এই প্রযুক্তির সাহায্যে এখানে সংক্রমিত ব্যক্তিদের ট্র্যাক করে তাদের সংক্রমণ ধরা পড়ার আগের দু’সপ্তাহ ধরে তারা যে সমস্ত মানুষের সংস্পর্শে এসেছিল তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে এবং তাদের কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং বিরোধীরা এই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে সরব হলেও এটি আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবেলা করার জন্য এই প্রযুক্তি যথেষ্ট কাজে দিয়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন। ১৭ মার্চ থেকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এর সাহায্যে এক দিনে ৪০০ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। সূত্র: আনন্দবাজার