প্রশাসনে বর্তমানে ৫১টি গ্রেড-১ পদ থাকলেও বেশিরভাগ পদ পদোন্নতি ছাড়াই ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে। অর্থাৎ এসব পদে গ্রেড-২ ধাপের কর্মকর্তা পদায়ন করা হয়েছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনোকষ্ট নিয়ে কাজ করছেন।
তারা মনে করেন, গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দিয়েই একজন অতিরিক্ত সচিব অথবা সমমর্যাদার কর্মকর্তাকে পদায়ন করা উচিত। অথচ এ ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হচ্ছে। কাউকে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দিয়েই পদায়ন করা হচ্ছে, আবার কাউকে পোস্টিং দেয়া হচ্ছে পদোন্নতি ছাড়াই।
এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে এসব পদে জুনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তাদের গ্রেড-১ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সিনিয়র ব্যাচের ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণের অভিযোগ প্রবল।
প্রসঙ্গত, মূলত প্রশাসনে সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর একজন পদস্থ কর্মকর্তা জাতীয় বেতন স্কেলের সর্বোচ্চ গ্রেড-১ ধাপে উন্নীত হন। এর নিচে গ্রেড-২ অতিরিক্ত সচিব/সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত।
কিন্তু গত কয়েক বছরে নানা কারণে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার চাপ বাড়তে থাকে। কিন্তু সরকার চাইলেও তাদের ৫০ ভাগ কর্মকর্তাকেও সচিব বানাতে পারবে না।
কেননা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাইরে সচিব করার সুযোগ নেই। এক সময় বড় মন্ত্রণালয় ছাড়া অতিরিক্ত সচিব পদায়ন করা হতো না। অর্গানোগ্রামে পদও ছিল না। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে কমপক্ষে ৫-৬ জন অতিরিক্ত সচিব কাজ করছেন।
বেশিরভাগ অতিরিক্ত সচিব দায়িত্ব পালন করছেন উপসচিব অথবা যুগ্ম সচিবের চেয়ারে। অনেকে সিনিয়র সহকারী সচিবের চেয়ার/কক্ষে দায়িত্ব পালন করেই উপসচিব ও যুগ্ম সচিবের মতো ডাকসাইটে কর্মকর্তার গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল পার করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রে বিব্রত ও অমর্যাদাকর হলেও এটিই এখন বাস্তব চিত্র।
এ জন্য আর্থিক সুবিধাসহ সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির প্রশ্নে সচিব পদে পদোন্নতিযোগ্য অতিরিক্ত সচিবদের সচিবের পরিবর্তে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেয়ার বিকল্প ফর্মুলা বের করা হয়।
প্রস্তাবটি সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর গেজেট আকারে এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রকাশ করা হয় ২০১৮ সালের ১১ জুন। ছোট্ট নীতিমালার সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় তফসিল নাম দিয়ে ১৮টি পদ সৃষ্টি করা হয়।
পরবর্তী সময়ে সৃষ্টি করা হয় আরও ১২টি পদ। প্রথমে প্রশাসন ক্যাডারের গ্রেড-২-এর প্রেষণ পদগুলো গ্রেড করা হলেও পরবর্তী সময়ে অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তার লাইনপোস্টের শীর্ষ পদগুলোকেও ধাপে ধাপে গ্রেড-১-এ উন্নীত করা হয়।
সেই থেকে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেয়ার অভিনব যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু সৃষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী গ্রেড-১ যেহেতু পদোন্নতি সংশ্লিষ্ট পদ, তাই ওই পদে কাউকে পদোন্নতি না দেয়া পর্যন্ত কেউ কর্মরত থাকলেও কিংবা পোস্টিং দিলেও তিনি গ্রেড-২-এর কোনো কর্মকর্তা হিসেবেই বিবেচিত হবেন। বর্তমানে এমন একটি সংকটই বিরাজমান।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী অতিরিক্ত সচিব তালিকা থেকে বর্তমানে গ্রেড-১ পদগুলোয় পদোন্নতি পেয়ে কাজ করছেন ১৬ জন কর্মকর্তা।
তবে এর বাইরে লাইন পোস্টের শীর্ষপদসহ আদার্স ক্যাডার থেকে বেশ কয়েকজন মহাপরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী ইতোমধ্যে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
কিন্তু এখনও বেশ কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা গ্রেড-১-এর চেয়ারে দায়িত্ব পালন করলেও তারা পদোন্নতি পাননি। অনেকটা ভারপ্রাপ্ত সচিবের মতো তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকার যাকে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেয়ার প্রয়োজন মনে করবে, তাকে এসএসবির বৈঠক থেকে ধাপে ধাপে পদোন্নতি দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, যারা অতিরিক্ত সচিব পদে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর সচিব নামক সোনার হরিণের দেখা পান না, তারা শেষমেশ গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি নিয়ে কিছুটা সান্ত্বনা পুরস্কার পাওয়ার মতো স্বস্তি পেতে চান।
তবে বর্তমানে এ রেসেও অনেকে টিকতে পারছেন না। কারণ পদসংখ্যা মাত্র ৫১টি। এটাকে বেশি টানাটানি করে বড় করারও উপায় নেই। কেননা, যেনতেন পদকে গ্রেড-১ হিসেবে সৃষ্টি করা যাবে না।
গ্রেড-১ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা পদগুলো হল : ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান, সিভিল সার্ভিস একাডেমির চেয়ারম্যান, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালক, কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতরের মহাপরিচালক পদ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, রসায়ন শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর চেয়ারম্যান, মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক, পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, ডাক বিভাগের মহাপরিচালক, প্রধান তথ্য অফিসার, প্রধান বন সংরক্ষক, গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের মহাপরিচালক, রেলওয়ের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, হিসাব মহানিয়ন্ত্রক, কম্পোট্রোলার জেনারেল অব ডিফেন্স ফাইন্যন্স, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, খাদ্য অধিফতরের মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি মহাপরিচালক, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক। এ ছাড়া আরও রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীন আয়কর এবং শুল্ক আবগারির প্রত্যেক ক্যাডার থেকে ২টি করে ৪টি পদ।
বর্তমানে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা হলেন : বাংলাদেশ টেলিভিশনের ডিজি এসএম হারুন অর রশিদ, পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক সুপ্রিয়া কুমার কুণ্ড, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহান আরা বানু, এনডিসি, পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান রাম চন্দ্র দাস, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক ড. মো. নজরুল আনোয়ার, ওএসডি শাহাদাত হোসেন, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল বাশার মোহাম্মদ আবদুল ফাত্তাহ, সোসিয়াল সার্ভিসেসের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম, স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. রইচ উদ্দিন, প্রাথমিক গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালবক আলমগীর মোহাম্মদ মনসুরুল আলম, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আফজাল হোসেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক রাশেদুল ইসলাম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক পারভীন আক্তার এবং চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সনদ কুমার সাহা প্রমুখ।