আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ। এ ধাপে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরইমধ্যে মিরপুর উপজেলায় জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। দ্বিতীয় ধাপের মিরপুর উপজেলা নির্বাচনে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে এ উপজেলায় যে ভোট হবে। তাতে চেয়ারম্যান পদপার্থীদের লড়াই জমবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। এবারের মিরপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে মোট ৯ জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম দোয়াত কলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন আনারস এবং শরিফুল ইসলাম লিটন মোটর সাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জোয়ার্দ্দার (তালা), মাসুদুর রহমান মাসুদ (টিউবওয়েল), সোহাগ আহম্মেদ (উড়োজাহাজ) এবং শাকিলুর রহমান বিটু (টিয়া পাখি) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মর্জিনা খাতুন (হাঁস) এবং এ্যাডভোকেট মর্জিনা খাতুন (কলস) প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। চেয়ারম্যান পদে মুলত এ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম ও কামাল হোসেনের লড়াই জমে উঠেছে।
এদিকে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচার জোরদার করার পাশাপাশি নিজ নিজ কৌশল প্রয়োগ করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনের শেষ প্রান্তে এসে নানামুখী মেরুকরণ হচ্ছে। প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আসছে বিভিন্ন সমীকরণ। ভোটাররা মনে করছেন, দোয়াত কলম ও আনারস প্রতীকের মধ্যে ভোটের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। শেষ পর্যন্ত ফলাফল কি হয় তা দেখার জন্য উপজেলাবাসীর চোখ এখন নির্বাচনের দিনের দিকে।
নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। তাই মিরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্ধারিত এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। বাসায় ফিরে পরের দিনের কর্মসূচি নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। কে কার চেয়ে বেশি কৌশল প্রয়োগ করে নিজের অবস্থান জোরদার করবেন এ নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। আর এ কৌশল প্রয়োগ করেই যার যার ভোট ব্যাংকের বাইরে থাকা ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা চলছে। আর এ নির্বাচনের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। প্রশাসনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে।
ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আসছে বিভিন্ন সমীকরণ। ছোট-বড় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠনের সমর্থন এবং প্রশাসনিক লোকজনের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে নানামুখী সমীকরণ আলোচনায় আসছে। প্রার্থীদের মধ্যে কার পাল্লা ভারি তাও নির্ভর করছে এই সমীকরণের ওপর। এখন পর্যন্ত মিরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরিবেশ প্রশংসনীয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনের লোকজন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই সুষ্ঠু ভোট হলে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীই বিজয়ের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন।
মিরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার প্রচারযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড, আব্দুল হালিম। অপরদিকে আওয়ামীলীগের আরেকপ্রার্থী কামাল হোসেনও প্রচারযুদ্ধে পিছিয়ে নেই।
ভোটারদের একাংশ বলছেন, সততা, নিষ্ঠা ও পরিচ্ছন্নতায় এগিয়ে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. আব্দুল হালিম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন। এসময় অকল্পনীয় উন্নয়ন হয়েছে এ উপজেলায়।
গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত নির্বাচিত হওয়ায় দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করছে। আগামীতে এ উপজেলার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চান এ্যাড. আব্দুল হালিম।
এদিকে মিরপুর উপজেলা নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল হোসেন গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তার অনুসারী চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাড. আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তিনি বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুল হালিম তার পেটুয়া বাহিনী দিয়ে আমার নির্বাচনের কর্মী, সমর্থকদের হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। তারা আমার পোষ্টার, ফেষ্টুন ছিঁড়ে ফেলছে। ভোটারদের ভোট দিতে কেন্দ্রে যেন না যায় সেজন্য সাধারণ ভোটারদেরকেও নিষেধ করছে। আমি এ বিষয়ে জেলা রির্টানিং অফিসার ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের সকল দফতরসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও অবগতি করেছি।
অপরদিকে ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ অনাগ্রহ দুটোই রয়েছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে ভোটের দিনের পরিবেশের ওপর। পরিবেশ ভালো থাকলে মানুষ ভোট দিতে যাবে।
বারুইপাড়া ইউনিয়নের নতুন ভোটার আলামিন বলেন ভোট দেবেন প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজ, সততা , আমি এবার প্রথম ভোট দেবো। অবশ্যই যোগ্যতা দেখে ভোট দেবো। তবে সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে ভোটকেন্দ্রে যাবো।
উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ অনাগ্রহ দুটোই রয়েছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে ভোটের দিনের পরিবেশের ওপর। পরিবেশ ভালো থাকলে মানুষ ভোট দিতে যাবে।
মালিহাদ ইউনিয়নের আব্দুর রহমান বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ চিন্তায় আছি, কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারব কিনা জানিনা।
বিগত ৫ বছরের ধারাবাহিক উন্নয়নের বর্ণনা তুলে ধরে দোয়াত কলমের প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাড. আব্দুল হালিম জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধারাবাহিক উন্নয়নে পাল্টে গেছে এ উপজেলার দৃশ্যপট। মাহবুব উল আলম হানিফের দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতায় উপজেলায় শান্তি সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নানা অবকাঠামো উন্নয়ন করেছেন। অসংখ্য মসজিদ, মন্দির ও বিহার নির্মাণ, বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ, রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ-কালভার্টসহ অগণিত উন্নয়ন দৃশ্যমান। এছাড়া কৃষিখাতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে মিরপুরবাসী তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। সর্বোপরি জনগণের সার্বিক উন্নয়ন এবং ব্যক্তি পর্যায়ের বিকাশে সব পক্ষকে নিয়ে দলমত নির্বিশেষে কাজ করা হবে। এছাড়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সমৃদ্ধ মিরপুর গড়ে তোলার কথা জানান এ চেয়ারম্যান প্রার্থী।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বিবি করিমুন্নেছা জানান, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের জন্য সব ধরনের কঠোর ব্যবস্থা থাকবে। কোথাও কোন প্রকার আচরণ বিধিলঙ্ঘন হলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।