মানসিক চাপ ও শারীরিক সুস্থতা দুটি বিষয় একে অন্যের সাথে জড়িত। যদি একটা মানুষ মানসিক অতিরিক্ত চাপে থাকে তার প্রভাব সবার আগে শরীরে পড়বে এবং শরীরের বাসা বাঁধবে নানান রকমের সমস্যা, তৈরি হবে নানান ধরনের অসুস্থতা।
মানসিক চাপ কমাতে কিংবা মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে প্রয়োজন শারীরিক সুস্থতা। শরীরকে ফিট রাখতে হবে মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য। সেজন্য করনীয় হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা,পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার ধাবার খাওয়া এবং এর পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা তা হলো দৈনিক কিছু ব্যায়াম করা। যা শারীরিকভাবে ফিট রাখার পাশাপাশি মানসিকভাবে ফিট রাখবে এবং শরীরের কিংবা মনের হাজারো ক্লান্তি দূর করবে।
মানসিক চাপ আমাদের দৈনন্দিনের সঙ্গী। কিন্তু সেই সঙ্গীকে মেনে নিলে হবে না। এই চাপের সাথে আপোষ করলে চলবে না। এই মানসিক চাপ মোকাবেলায় কিছু শারীরিক ব্যায়াম প্রয়োজন সেগুলোই উল্লেখ করা হলো:
মানসিক চাপ কমাতে দৌড়ান
অন্যান্য ব্যায়ামের পাশাপাশি দৌড়ানো অন্যতম একটি ব্যায়াম। দৌড়ানোর সাথে অন্য কিছু কোন তুলনা হয় না। প্রতিদিন যদি কোন ব্যক্তি ১০-১৫ মিনিট দৌড়াতে পারে সে অনেক ধরনের শারীরিক জটিলতা ও অসুস্থতা এড়াতে পারবে। পেশিগুলোর সঠিক সঞ্চালনের জন্য নিয়মিত দৌড়ানোর বিকল্প নেই। তথ্য সূত্রে জানা গেছে, দৌড় হলো মানসিক চাপ কমাবার অন্যতম মহৌষধ। এমনকি ভালো ফলাফল না পেলেও নিয়মিত দৌড়ানো আপনাকে অতিরিক্ত কাজের সময়ে খিটখিটে মেজাজ থেকে দূরে রাখবে। এটা এমনই ধরনের ব্যায়াম যেটা প্রয়োজনমতো সক্রিয় চিন্তা-ভাবনা জাগ্রত করে। এবং অহেতুক দুশ্চিন্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেয়। মানসিক চাপ দূর করে নিজের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে নিয়মিত দৌড়ানোর বিকল্প নেই।
কাজের ফাঁকে বিশ্রাম
অফিসে কিংবা বাসায় যেখানেই কাজ করুন না কেন কাজের ফাঁকে বিরতি নেই কিছুক্ষণ বিশ্রাম করুন একটু হাঁটাচলা করতে পারেন। হয়তোবা ফোনে কথা বলার সময় টানা চেয়ারে না বসে থেকে একটু হাঁটাচলা করুন দুপুরে লাঞ্চ করার পর সরাসরি চেয়ারে না বসে থেকে একটু হাঁটা চলা করুণ। মাঝেমধ্যে অফিসে লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছুটা বিরতি নিন। চেয়ারে বসে আড়মোড়া কাটুন। মাথার পেছনে হাত রেখে পা সোজা করে কাঁধের পেশিগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করুন। এতে কাঁধের পেশিগুলোতে আরাম অনুভূত হবে। দেখবেন মুহূর্তেই বিরক্তিভাব দূর হয়ে আরাম অনুভব করবেন। দীর্ঘসময়ে বসে থাকলে কাঁধের ও পিঠের পেশিগুলো অসাড় হয়ে যায়। ফলে বিরক্তিভাব চলে আসে। তাই হাঁটাহাঁটি করা ও ব্যায়াম করা ফ্রেশনেস ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট সাহায্য করবে।
মানসিক চাপ কমাতে সূর্যের আলো
শারীরিক এবং মানসিক দুই সুস্থতার জন্যই সূর্যের আলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যেসব দেশের সূর্য দেখা দেয় না সে সব দেশের মানুষের মধ্যে মারাত্মক পরিমাণে হতাশা বিরাজ করে। শরীর সচল থাকলে এন্ডোরফিন নামক একটি হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মানসিক চাপ কমিয়ে অবস্থার উন্নতি করে। সূর্যের আলোয় থাকলে মস্তিষ্কে বাড়ে সেরেটোনিনের মাত্রা, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ঘর বন্ধ কিংবা গুমোট অথবা যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো প্রবেশ করে না সেই সব জায়গায় একটু এড়িয়ে চলাই ভালো।
মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম
যোগ ব্যায়াম করলে মন স্থির হয় আর মন স্থির থাকলে মানসিক চাপ অনেক অংশেই কমে যায়। শরীর ও মনের অতি উপকারী যোগব্যায়াম এটা কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না যে, যোগব্যায়াম সত্যিকার অর্থেই দেহ এবং মনের জন্য যথেষ্ট উপকারী। যোগব্যায়াম শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীর ও মনের যোগসূত্র স্থাপন করে থাকে। তাই এখনি মাদুর বা পাটি বিছিয়ে লেগে পড়ুন যোগব্যায়ামে এবং দূর করুন আপনার অহেতুক উদ্বেগ ও হতাশাগুলো দূরে রাখে।
প্রিয় কিছুর সাথে সময় কাটান
মানসিক চাপ দূর করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে প্রিয় কিছুর সাথে সময় কাটানো বা প্রতিদিন এমন কোন কাজ করা যেটি আসলে আপনি ভালোবেসে। যেমন অনেকে বই পড়তে ভালোবাসে সে প্রতিদিন কিছুটা সময় বই পড়তে পারে। কেউ গান শুনতে ভালোবাসে সে দিনের কিছুটা সময় গান শুনতে পারে। পরিবারের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করা, বাগানে গিয়ে গাছে জল দেওয়া এই ধরনের কাজগুলো করলে মানসিক চাপ অনেক অংশেই কেটে যায়।
সূত্র: ইত্তেফাক