সংবাদমাধ্যম এগিয়ে গেলেও কাজী সালাহউদ্দিন লুফে নেন না। দেশের এমন সেলিব্রেটি হয়েও অন্যদের মতো প্রচারের স্রোতে গা ভাসান না। নিজেকে আড়ালে রাখতে গিয়ে সঠিক তথ্যটা আড়ালেই পড়ে গেছে বহুবার। একটু ভিন্নতা এসেছে এবার।
সম্প্রতি ফিফায় বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগসহ চারজনের যাওয়ার ব্যাপারে নানা সমালোচনার গুঞ্জন ডালপালা মেলেছিল। সমালোচনার তীর ছিল বাফুফের সভাপতি সালাহউদ্দিনের দিকে। গতকাল বিকালে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় সালাহউদ্দিন দাবি করলেন ফিফায় যারা গিয়েছেন তাদেরকে কি কারণে ডাকা হয়েছে তার কিছুই তিনি জানেন না।
সালাহউদ্দিন বললেন, ‘ফিফার অতি গোপনীয় কথা বলতে পারি না। পরিষ্কার লেখা ছিল কনফিডেন্সিয়াল। আমি যদি জিজ্ঞেস করি তাহলে ফিফার চোখে আমি বিপদে পড়ব। ফিফা যাদের নামে চিঠি দিয়েছে তাদের সঙ্গেই কথা বলেছে। তারপরও আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম সোহাগকে। সেও আমাকে কিছু বলেনি। এখন কথা হচ্ছে যাদের নামে চিঠি এসেছে তাদের বাইরে এ বিষয়টা কারোরই জানার কথা না। নিশ্চয়ই এদের মধ্য থেকে কেউ প্রকাশ করেছে।’
সোহাগ বললেন, ‘আমরা অনুমান করছি কার কাছ থেকে খবর বেরিয়েছে।’ শুনেই সালাহউদ্দিন বললেন, ‘আমি অনুমান করতে পারছি না। যিনি প্রকাশ করেছেন তিনি ক্রাইম করেছেন।’
সালাহউদ্দিন বললেন, ‘ফিফা এখন এই সব নিয়ে ভাবছে। তারাও বিভিন্ন কমপ্লায়েন্স নিয়ে আছে। একবার বলছিল দুই বছর পর পর বিশ্বকাপ আয়োজন করবে, সেটি পারেনি।
আরেক বার বলল, লিগ চালু করবে, সেটাও পারেনি। কোনো ফেডারেশনে কি হয়েছে সেটা নিয়ে ভাবছে। এমন তালিকায় ৪০ দেশ রয়েছে। যারা ফিফার ফান্ড গ্রহণ করে তাদেরকে ফিফার ডাকে দৌড়াতে হচ্ছে। ইউরোপের অনেক দেশ ফান্ড নেয়ও না, দৌড়াতেও হয় না।’
সালাহউদ্দিন চাইছেন যতক্ষণ না পর্যন্ত ফিফা প্রকাশ না করছে তা নিয়ে আমরাও কোনো কিছু বলতে পারব না।
গোটা পৃথিবী সেপ ব্ল্যাটার এবং মিশেল প্লাতিনির বিষয়ে প্রকাশ করা হলে তখন তাদেরকে চোর চোর বলে গাল দেওয়া হলো। সেই খবর সব জায়গায় বড় করে প্রচার হলো। ফিফা যখন ব্ল্যাটার এবং প্লাতিনিকে ক্লিয়ার করে দিল সেই খবর কয়জন জানলো। পত্রিকায় একবার পড়লাম ফুটবলার এমবাপ্পে ৩০০ মিলিয়ন ইউরোতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। আজ একই পত্রিকায় পড়লাম ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এমবাপ্পে।
জেমি ডে বকেয়া পাচ্ছে না কেন?
বাফুফে সভাপতি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তার পাওনা দিতেই হবে। আমরা তাকে রাখিনি। বকেয়া যা আছে সেটা পাঠাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। ৮৬ হাজার ডলার সঙ্গে আরো কিছু যোগ হয়েছে। এই ডলার পাঠাতে হলে সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজন হয় এবং সেটি ধাপে ধাপে এগিয়ে যায়। পৃথিবীর ৯০ ভাগ কোচ যাওয়া-আসার মধ্যেই থাকে।’
সালাহউদ্দিন বললেন,‘ জেমির কারণে ফান্ড ব্লক করেছে সে রকম চিঠি পাইনি। জেমির সঙ্গে দুই বছরের জন্য চুক্তি করেছিলাম। কিন্তু জেমি বছরের বেশির ভাগ সময় লন্ডনে থাকবে। তাকে আনতে গেলে সে আসতে চাইবে না। এটা তো হয় না।’
বিদেশি কোচ নিয়োগ থেকে বেরিয়ে আসা যায় কি না? সালাহউদ্দিন বললেন, ‘দেশি কোচদের দিয়ে চেষ্টা কম হয়নি। যাকেই দায়িত্ব দিয়েছি সে তো রেজাল্ট দিতে পারেনি।’ যেসব দেশি কোচকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাদের অনেকের নাম উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন।
৬০ ভাগ ফুটবলারই আনফিট
জাতীয় দলে নেওয়া যেতে পারে এমন ফুটবলার খুঁজতে দেওয়া হলে সালাহউদ্দিন কীভাবে বাছাই করবেন। তিনি বললেন, ‘লিগের খেলা দেখলে বুঝা যায় ৬০ ভাগ ফুটবলার আনফিট। জাতীয় দলে খেলার মতো ফিটনেস নেই। খেলোয়াড়রা ক্লাবে থাকেন। সেখান থেকেই গড়ে উঠবেন। কিন্তু এখানে সেটা নেই। খেলোয়াড়রা বছর জুড়ে ক্লাবের কাছে থাকে। তারা তাদের মতো করে ফুটবলারদের গড়ে তুলছেন। আমার কাছে বাজেট থাকলে আমি টাকা খরচ করে ফুটবলার নিয়ে রাখতাম, জাতীয় দলের জন্য।
দুই একটি ক্লাব সঠিকভাবে কাজ করছে। আমরা যেমন মেয়েদেরকে এক জায়গায় রাখছি। ক্লাবের ফুটবলারদের নিয়ে সেভাবে পরিকল্পনা করতে পারছি না। যেটা পারছি মেয়েদের নিয়ে। তাহলে ছেলেদের ফুটবলে রেজাল্ট পাব কীভাবে। ইউরোপের ক্লাবগুলো পেশাদার প্রথায় চলে। তারা সেভাবে খেলোয়াড়দের গড়ে তুলছে। জাতীয় দলে আসলে কোচ শুধু খেলার ছকটা দেখিয়ে মাঠে নামায়। আমাদের এখানে দুই একটা ক্লাব ছাড়া নিজেদের মাঠও নেই।’
প্রিমিয়ার লিগের মান
লিগের মান নিয়ে অসন্তোষ আছে বাফুফে সভাপতির। ক্লাবগুলো সেভাবে অবকাঠামো তৈরি করতে পারেনি। ক্লাব ফুটবলের স্ট্যান্ডার্ড কমলে জাতীয় দলের ব্যর্থতাও বেড়ে যাবে। এখন দেখবেন এক তরফা লিগ হচ্ছে। দুই-একটা ক্লাব ট্রফি জয় করছে। অন্যান্য ক্লাব যদি শক্তিশালী দল না গঠন করে তাহলে লিগের মান বাড়বে না। খেলোয়াড়দের মান বাড়বে না। তার পরও বলব দক্ষিণ এশিয়ার লিগের তুলনায় ভালো।’
সূত্র: ইত্তেফাক