ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের ওপর কোনো উৎসে কর দিতে হবে না। তথ্যটি স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হোটেলে ফেলিসিটি ইন্টারনেট ডাটা সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বিএফএসআই ক্লাউড এবং সাইবার সিকিউরিটি’ শীর্ষক নলেজ শেয়ারিং অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের আশ্বস্ত করে বলেন, তাদেরকে কোনো উৎসে কর দিতে হবে না। তারা ট্যাক্সের আওতার বাইরে।
গত কয়েকদিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছিলো যে, দেশের ফ্রিল্যান্সারদের বৈদেশিক আয়ের ওপর ১০% কর দিতে হবে। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য আসতে শুরু করে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বিভিন্ন মহলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে, ফ্রিল্যান্সারদের কর দিতে হবে। এটা করে একটি চক্র বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৪ বছরে প্রযুক্তিবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের উন্নয়ন ও বিকাশে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য প্রশিক্ষণ, উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে অনুদান প্রদান, তাদের আইডিসহ নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে।’
বিভ্রান্তিটি তৈরি করা হয় গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ কর্তৃক ইস্যুকৃত ‘আয়কর আইন, ২০২৩ এর ১২৪ ধারা (আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর 52Q) অনুযায়ী সেবা, রেভিনিউ শেয়ারিং ইত্যাদি বাবদ প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের উপর উৎসে কর কর্তন ও জমাদান প্রসঙ্গে’ ইস্যুকৃত একটি প্রজ্ঞাপন থেকে। তাতে বলা হয়, নতুন আয়কর আইন অনুসারে সকল উৎসকর নির্ধারিত কোডের অনুকূলে জমা দিতে হবে। এই প্রজ্ঞাপনে কোথাও ফ্রিল্যান্সারদের ১০% উৎসকর দেওয়ার কথা বলা নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রজ্ঞাপনের সংযুক্তি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর অঞ্চল-১১ এর ১২ সেপ্টেম্বরের চিঠিতে ফি, সেবা চার্জ বা পারিশ্রমিক বা প্রকৃতির রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে কাজের বিনিময়ে বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ কোনো ব্যক্তির হিসাবে পরিশোধ বা জমা প্রদানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রাপকের হিসাবে অর্থ পরিশোধ বা জমা প্রদানকালে উক্ত পরিশোধিত বা জমাকৃত অর্থের ওপর ১০% হারে কর কর্তন করার কথা উল্লেখ থাকায় এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়। প্রকৃত পক্ষে, বিদেশ থেকে অর্জিত অর্থে কর আছে বটে, তবে তা ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর পরিদর্শক শাদনান মাহমুদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনটি একদমই রুটিন প্রজ্ঞাপন। প্রজ্ঞাপনের কারণ হল সেবা খাত, রেভিনিউ শেয়ারিং খাত এইসব খাত থেকে বিদেশ থেকে যে আয় আসে, সেই আয়ের উপর যে কর তা আগে বিভিন্ন কর অঞ্চলে জমা দিতে হতো। নতুন আয়কর আইন আসার পর সরকার নিয়ম করেছে যে, এই খাতের কর বিভিন্ন কর অঞ্চলে জমা না দিয়ে মাত্র একটা কর অঞ্চলের কোডে জমা দেয়া লাগবে। ওই কর অঞ্চল ঢাকা-১১ সেটিই একটা চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে মনে করিয়ে দিয়েছে। এর বেশি আর কোন কথা চিঠিতেও লেখা নেই।।
২০১৮ সালে Income-tax Ordinance, 1984 (Ord. No. XXXVI of 1984) এর সংশোধন করে ফ্রিল্যান্সারদের ওপর কর প্রত্যাহার করা হয়। আয়কর আইনে ফ্রিল্যান্সারদের কর দেওয়ার বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে।