বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলনের মধ্যে সীমান্ত হত্যা থেমে নেই। গতকাল সোমবার ঢাকার বিজিবির প্রধান কার্যালয় পিলখানায় চারদিনের এ সম্মেলন শেষ হয়েছে। এর মধ্যে গত রবিবার চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার ঠাকুরপুর সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে ওমিদুল ইসলাম (১৯) নামের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে বুধবার দিনাজপুরের বিরল সীমান্তে জাহাঙ্গীর আলমের লাশ পাওয়া যায়। এছাড়া এই মাসে বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে আরও তিন বাংলাদেশি নিহত হন।
প্রতিমাসেই এভাবে নির্মমভাবে বিএসএফ এর গুলিতে বা নির্যাতনে প্রাণ হারাতে হচ্ছে বাংলাদেশিদের। যদিও বিএসএফ এর দাবি সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান, মাদকদ্রব্য প্রতিরোধে তারা এ গুলি চালায়।তারপরও শ্যূট-অন-সাইট নীতি বাতিল করে তারা অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারকারী বা পাচারকারীদের ধরতে অহিংস উপায় ব্যবহার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে অনেক আগেই। তারপরও এখনোও বাস্তবে সে প্রতিশ্রুতির কার্যকর হয়নি।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে, ২০২০ সালের সাড়ে ৮মাসে সীমান্তে হত্যা হয়েছে ৩৯ বাংলাদেশীর। এর মধ্যে বিএসএফ এর গুলিতে মারা গেছে ৩২ জন। বাকিরা বিএসএফ সদস্যদের শারীরিক নির্যাতনের কারণে মারা গেছে।
২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলিতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ছয় জন। আহত হয়েছেন ৪৮ জন। অপহৃত হয়েছেন ৩৪ জন। ২০১৮ সালে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। আর ২০১৭ সালে ২৪ জন।
আসকের তথ্য মতে, ২০০৯ সাল থেকে গতকাল পর্যন্ত সীমান্তে ৫২২ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে। আর ১৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বিএসএফ সদস্যদের শারীরিক নির্যাতনের পর। আসকের এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৫ সালের পর থেকে মাঝের তিন বছর সীমান্ত হত্যা কমতে থাকলেও ২০১৯ সালে হঠাৎ তা বেড়ে যায়। এই ধারা এ বছরও অব্যাহত আছে।
২০১১ সালে একটি সেমিনারে হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচের এশিয়া বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক, ব্যাড এডামস, সীমান্তে হত্যা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “Routinely shooting poor, unarmed villagers is not how the world’s largest democracy should behave.”
একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ এ ধরণের আচরণ থেকে বের হয়ে অহিংস পদ্ধতি অবলম্বন করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তি দিয়ে উদাহরণ সৃস্টি করতে পারে। তবেই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলমান বন্ধুত্ত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটল থাকবে।