বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল যা শয়তানের ত্রিভুজ নামে পরিচিত। এটি উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি ব্যস্ততম অঞ্চল। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে বেশ কয়েকজন লেখক বই লিখেছেন। ১৯৫০ সালে প্রথম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে অনেক রহস্যের কথা শোনা যায়। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল অবস্থিত।
বারমুডা আইল্যান্ড, পোর্তো রিকো এবং ইউএসএ এর ফ্লোরিডা এই তিনটি স্থান যোগ করলে একটি ত্রিভুজ পাওয়া যায়। এটি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নামে পরিচিত। শোনা যায় এখানে অনেক সামুদ্রিক জাহাজ এবং উড়োজাহাজ নিখোঁজ হয়েছে।
আমার সি ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার শিপ নিয়ে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল অতিক্রম করার সুযোগ হয়েছে। আমি সর্বশেষ ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে শিপ নিয়ে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল পার হয়ে ইউএসএ এর একটি পোর্ট নিউ ইয়রলেন্স গিয়েছিলাম।
এখান দিয়ে শিপ যাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে শিপ নিখোঁজ হওয়ার পেছনে যে কারণগুলোর থাকতে পারে সেগুলো হল :
১.চৌম্বকীয় অনিয়মিততা।পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্রে একটি স্থানীয় পরিবর্তনের কারণে শিপ এর ম্যাগনেটিক কম্পাস বা দিকদর্শন যন্ত্র সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে।
২.চতুর্মুখী কারেন্ট বা জলস্রোত।
৩.পানির নিচে থাকা বিপদজনক রিফ বা প্রবাল প্রাচীর।
৪.সমুদ্রে সৃষ্ট হারিকেন বা ঘূর্ণিঝড় এর প্রভাব।
এছাড়াও অনেক অজানা কারণ থাকতে পারে। উপরে উল্লেখিত কারণে সামুদ্রিক জাহাজ বা উড়োজাহাজ বিপদে পড়তে পারে। তবে এও জানা যায় কিছু কিছু লেখক বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে অতিরঞ্জিত ভাবে লিখেছেন যা এখনো রহস্য আবৃত।
বারমুডা অঞ্চল দিয়ে বিশ্বের বাণিজ্যিক জাহাজ এবং প্রমোদ তরী চলাচল করে। জাহাজগুলো আমেরিকা, ইউরোপ ও ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াত করে। এ অঞ্চলের আকাশ পথ দিয়েও বিভিন্ন রুটে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত বিমান চলাচল করে। বারমুডা ত্রিভুজের বিস্তৃতির বর্ণনায় বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত দিয়েছেন। তবে লিখিত বর্ণনায় যে সাধারন অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে রয়েছে ফ্লরিডার আটলান্টিক উপকূল, পুয়ের্তো রিকো, মধ্য আটলান্টিকের বারমুডা দ্বীপপুঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লরিডা ইস্টেটস এর দক্ষিণ সীমানা। এসব অঞ্চলেই অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে শোনা যায়। এই ত্রিভুজের উপর দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে স্টেটস অফ ফ্লোরিডা হয়ে উত্তর আটলান্টিকের দিকে প্রবাহিত হয় উষ্ণ সমুদ্র স্রোত। এই তীব্র গতির স্রোত ভাসমান বস্তুকে স্রোতের দিকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এখানে আবার হঠাৎ করে ঝড় ওঠে এবং থেমে যায়,গ্রীষ্মে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এইসব কারণে এই অঞ্চলে জাহাজ ডুবি একটি স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। অনেক জাহাজ ও বিমান এসব অঞ্চলে চালকের ভুলের কারণেও দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে।
তবে একবিংশ শতাব্দীতে জাহাজের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি,টেলিযোগাযোগ, রেডার, জিপিএস, স্যাটেলাইট প্রযুক্তির কারণে এসব অঞ্চলে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে এসেছে। বর্তমানে জাহাজে প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে আবহাওয়া এবং ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই পূর্বাভাস পাওয়া যায় এবং সেভাবেই জাহাজ পরিচালনা করা হয়। জাহাজের নাবিক ও জাহাজের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনবোধে জাহাজের রুট পরিবর্তন করা হয়।
লেখক: মাস্টার মেরিনার, ক্লাস ওয়ান ও এক্স ক্যাডেট ,বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রাম।