বিদ্যুৎ বিভাগের সঞ্চালন লাইন থেকে আবাসিক ভবনে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে কোন সতর্কতা মূলক নীতির তোয়াক্কা করছে না মেহেরপুরের বিদ্যুত বিভাগ। ফলে পৌর শহর সহ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়িগুলি মৃত্যু ফাঁদে পরিনত হয়েছে। গত এক বছরে জেলাতে বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা শতাধিক, এরমধ্যে অপরিকল্পিত বৈদ্যুতিক সংযোগের কারনে মৃত্যুর সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়। এরকমই একটি দূর্ঘটনাতে প্রায় মৃত্যুর দারপ্রান্তে পৌছে গিয়েছিলেন মল্লিক পাড়ার খান মাহমুদ আল রাজি ওরফে রক্তিম।
বুধবার (৭ আগষ্ট) সন্ধ্যা ৬ টার সময় মল্লিক পাড়ার রমেশ ক্লিনিকের সন্নিকটে ছায়াপথ ভবনের প্রাচীর, প্রধান ফটক, তারকাটা ও একটি টিনের চালা বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। এসময় বাড়ির বাইরে বের হতে যেয়ে প্রধান ফটকে হাত দিয়ে বিদ্যুতায়িত হন রক্তিম। কয়েক সেকেণ্ড বিদ্যুতায়িত থেকে মাটিতে পড়ে যান তিনি। বাড়িটি মেহেরপুর প্রতিদিন অনলাইনের সাবেক ইনচার্জ ও কালবেলার স্টাফ রিপোর্টার রাফির মাতা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মাহমুদা খাতুনের।
সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, ছায়াপথ ভবনের পিছনে পশ্চিম পাশে হাসিব নামের এক ঠিকাদারের বাড়ির বৈদুতিক সংযোগ দেওয়া হয়েছে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে। কোন রকম খুঁটি ছাড়া সামনের বাড়ির কাঠাল গাছের ডালে পেচিয়ে বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও তারকাঁটার উপর দিয়ে মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে মেইন সংযোগের তারটি। সেখান থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে অবস্থিত বাড়িটিতে সংযুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বৈদুতিক তার মাটিতেই পড়ে থাকতে দেখা যায়। এসময় বিদ্যুতায়িত ছায়াপথ ভবনের প্রাচীরের তার কাটার বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বলে থাকতে দেখা যায়। এ সময় ওজোপাডিকো মেহেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন কে মোবাইলে ঘটনাটি অবহিত করা হয়। নির্বাহী প্রকৌশলী নির্দেশে ওজোপাডিকোর রেসকিউ টিম এসে বৈদুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এ সময় ঠিকাদার হাসিব বৃহস্পতিবার সকালে নিয়ম মেনে অন্য একটি পোল থেকে খুটির মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংযোগ নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। তার অনুরোধে সে সময় ওজোপাডিকো কর্মচারীরা আবার তার বৈদ্যুতিক সংযোগটি একই যায়গায় সংযুক্ত করে দেন।
জানাযায়, একই কারনে ছায়াপথ ভবনটি ইতোপূর্বে আরও ৪ বার বিদ্যুতায়িত হয়েছিলো। এছাড়াও বাড়িটির মালিক মাহমুদা খাতুন বিদ্যুত অফিসে তার সরাতে ২০১৯ ও ২০২১ সালে দুইবার লিখিত অভিযোগ করলেও বিদ্যুত সঞ্চালন তারটি এখন পর্যন্ত সরানো হয়নি। ঠিকাদারি সূত্রে ওজোপাডিকোর কর্মচারীদের সংগে সুসম্পর্ক থাকায় তাদের মাধ্যমে বিষয়টিতে প্রভাব খাটিয়েছেন ঠিকাদার হাসিব।
দূর্ঘটনার শিকার রক্তিম মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন,’বিকালে বৃষ্টি ছেড়েগেলে আমি পার্শবর্তী মুদী দোকানের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিলাম। গেটে হাত দিতেই প্রচণ্ডভাবে শক খেয়ে আমি মাটিতে পড়ে যায়। গতবছর আমার বড় ভাবিও একই ঘটনার শিকার হয়েছিলো। এখানে কোন মৃত্যু হওয়ার আগ পর্যন্ত মনেহয় বিদ্যুত বিভাগের টনক নড়বে না।
এসময় প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় সেখানে উপস্থিত ওজোপাডিকোর লাইন ম্যান ও রেসকিউ টিমের সাথে। এসময় তারা বৃহস্পতিবার সকালেই অন্য একটি পোল থেকে বাশের খুঁটির মাধ্যমে সংযোগ লাইনটি সরিয়ে দেবেন বলে জানান।
ছায়াপথ ভবনের মালিক মাহমুদা খাতুন বলেন, ‘এধরণের দূর্ঘটনা এবারই প্রথম না। প্রতিবছরই দুই-একবার করে একই কারনে রাড়ির সদস্যরা দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ওজোপাডিকো বরাবর আমি দু-দফা লিখিত অভিযোগ করলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এবারও যদি লাইনটি না সরানে হয় তবে আগামীকালকেই আমি জানমালের নিরাপত্তার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হবো।
মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধানে শহরে এ ধরনের অনেকগুলি ঝুকিপূর্ণ বৈদুতিক সংযোগের সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারাবাহিক ভাবে বিষয়গুলি প্রকাশ করা হবে।