করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ভালো নেই মেহেরপুরের বই ব্যবসায়ীরা। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় গাইড বইয়ের চাহিদাও কম। যে কারণে অবসর সময় কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
মেহেরপুর শহরের লাইব্রেরি গুলো ঘুরে হাতে গোনা কিছু সৃজনশীল বই ছাড়া তেমন একটা চোখে পড়েনি। বেশিরভাগ সেলফ সাজানো হয়েছে স্কুল কলেজের খাতা, কাগজ ও কলম দিয়ে। এখন ব্যবসায়ীদের চোখে মুখে হতাশার চিহ্ন। ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বন্ধ করে খোঁজ করছেন অন্য ব্যবসার।
মেহেরপুর জেলায় ছোট বড় মিলে মোট ৮৫টি লাইব্রেরি আছে। মেহেরপুর সদরে আছে ৩০টি, গংনী উপজেলায় ৪০টি, মুজিবনগর উপজেলায় ১৫টি।
মেহেরপুর মহিলা কলেজ মোড়ে সব চেয়ে বড় লাইব্রেরি পপি লাইব্রেরি। এর স্বত্বাধিকারী সৈয়দ মেহেদী ইমাম পাপ্পু বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেঁচা-বিক্রি কম। কোন মতে দিন চলে যাচ্ছে। শুধু ব্যাবসাটি ধরে রাখতেই লাইব্রেরিটি এখনো চালু রেখেছি। বিক্রি কম হওয়ায় ব্যবসার ধরণ পাল্টেছে। বই বিক্রির পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যও বিক্রি করছি। আমার দোকানে ৪ জন কর্মচারি কাজ করে। তাদের একদিন পরপর ডিউটি করে দিয়েছি। বেতনও অর্ধেক করে দিতে বাধ্য হয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ভবিষ্যতে আরও অর্থনৈতিক মন্দায় পড়তে হবে।
দোয়েল বুক হাউজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল আজিজ বলেন, একসময় জমজমাট ছিল বইয়ের দোকান গুলো। এখন সেগুলো বিরান ভূমি। আগে এখানে সকাল ৯টায় আসতাম। বাসায় ফিরতাম রাত ১০টায়। কিন্তু এখন সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখছি। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই বসে থাকতে হচ্ছে। ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় টিকে থাকাই এখন অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্টুডেন্ট লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিপন জানান, বাড়িতে সময় কাটছে না তাই দোকান খুলে বসে আছি। বেঁচা-বিক্রি একদমই নেই। দুই একজন আসছে বিভিন্ন পোস্টার কাগজ কিনতে। এতে দিন হাজিরাতো দূরের কথা বিদ্যুৎ বিলের টাকাও হচ্ছে না।
পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দীন জানান, আমাদের ব্যবসা মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। করোনার প্রাদুর্ভাবে প্রায় ৫ মাস ধরে বন্ধ আছে প্রতিষ্ঠান গুলো। ফলে লাইব্রেরি ব্যবসায় বেশ ভাটা পড়েছে। পুরনো ছোট খাটো বইয়ের দোকান ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো আছে তাও নিভু নিভু অবস্থায় টিকে আছে। লাইব্রেরিতে কাজ করা কর্মচারিরাও পড়েছে বিপাকে। অনেকেই চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি প্রণোদনা দাবি জানাচ্ছি।