সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও পুজিঁর অভাব সহ নানা কারনে খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে মেহেরপুরের তাঁত শিল্প। যেগুলো টিকে আছে সেগুলোও প্রায় বন্ধের পথে। বিলুপ্ত প্রায় তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সব ধরনের সহযোগীর কথা বলছে উপজেলা প্রশাসন। তবে দ্রুত এদের পাশে না দাঁড়ালে হয়তো হারিয়ে যাবে তাঁত শিল্প।
গাংনী উপজেলার রাজাপুর গ্রামের সহিদা খাতুন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন, অন্য কোন আয়ের উৎস না থাকায় শেষ বয়সে এসেও অবসর সময়ে চালাচ্ছেন তাঁত। আপন মনে বুনাচ্ছেন নানা রঙের গামছা। সংসারের কাজ শেষ করে যে সময়টুকু পান সেই সময়টুকু বসে না থেকে গামছা তৈরী করেন। এখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে কোন রকম সংসার। একই অবস্থা অন্য তাঁতিদের। তাঁতের পাশাপাশি দিনমুজুর সহ অন্য কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন তাঁরা। গ্রামটির চারশ পরিবারের মধ্যে এখন তাঁত আছে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ পরিবারে।
এক সময় রাজাপুর গ্রামে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, বুনুনে ব্যস্ত থাকলেও তা আজ প্রায় বন্ধের পথে। তাঁত পল্লিতে প্রতিটি বাড়ি থেকেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁতের খট খট শব্দে মুখর থাকতো। এখানে বুনানো নানা রঙের গামছা কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা। সুতার দাম বৃদ্ধি সহ গামছা বানিয়ে লাভ না হওয়ায় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন কারিগররা। ইতো মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকশ তাঁত।
যেগুলো আছে সেগুলোতে এখন শুধু গামছা তৈরী করছে কারিগররা।
গৃহবধু সহিদা খাতান জানান, আগে সুতার দাম ছিল কম এতেই সংসার চলতো। তাঁত চালিয়ে ছেলে মেয়েদের বড় করে বিয়ে দিয়েছি।
আমাদের কোন জমি জায়গা নাই গামছা বানিয়েই খেতে হয়। এখন সুতার দাম প্রতি বছরই বেশি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা গামছার দাম কম দেয় লাভ হয় না। এখন আমরা কি করে খাব। এ ছাড়া আর আমাদের কোন উপায় নাই। বাধ্য হয়েই তাঁত চালাতে হয়।
একই কথা জানালেন অন্য কারিগররাও, আগে সুতার দাম কম ছিল আমাদের লাভ হতো এখন আর আমাদের লাভ হয় না। ২৫ বছর ধরে এই কাজ করে আর সংসার চলে না তাই এখন গরু ছাগল পালনের পাশাপাশি পুরুষরা মিস্ত্রির কাজে যায়। কেউ গাড়ি চালায় কেউ রিক্স চালায় এভাবেই চলে। এইতা করে সংসার চালানো যাবে না, চলছে না বলে অনেকেই বন্ধ করে দিয়ে জন খাঁটে।
সুতার দাম বেশি এইতা করে আমাদের লাভ নাই। চারটা গামছা বানিয়ে ৩৫ টাকা থাকে কিন্তুু বানাতে অনেক কষ্ট করতে হয়।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান বলেন, আমাদের এখানে দেশীয় যে শিল্প গুলো বিশেষ করে তাঁত শিল্প, মৃৎ শিল্প এগুলো যেন যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকে এবং আমাদের যে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তা সারা বিশে^ ছড়িয়ে পড়ে এ বিষয়ে আমরা সদা তৎপর রয়েছি।
সেই মুল্যেবোধ বা স্পর্শকাতর অনুভুতির জায়গা থেকে আমরা চাই যারা তাঁত শিল্প জড়িয়ে আছে তারা যেন সর্বোচ্চ সরকারী সুবিধায় অংশিদার হতে পারে। এবং তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগীতা করা হবে।
নুহু বাঙ্গালী, বামন্দী