আমার ২০২১ সালে জাহাজ নিয়ে চায়না থেকে কানাডার ভ্যানকুভার পোর্ট এ যাওয়ার পথে বেরিং সাগর এর মধ্য দিয়ে আলিউশিয়ান আইল্যান্ড এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। এটি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের বেরিং সাগরে অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জ।
আলিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ৬৯ টির মত দ্বীপ রয়েছে যার মধ্যে ১৪ টি বড় আগ্নেয়গিরি।আলিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের বেশিরভাগ অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা রাজ্যের অন্তর্গত, তবে কিছু অংশ রাশিয়ান ফেডারেলের অন্তর্ভুক্ত। এই দ্বীপপুঞ্জ আলাস্কা উপদ্বীপ থেকে পশ্চিমে রাশিয়ার কামচাতকা উপদ্বীপের দিকে প্রায় ১২০০ মাইল বা ১৯০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিদ্যমান। এই দ্বীপপুঞ্জের উত্তরে রয়েছে বেরিং সাগর দক্ষিনে প্রশান্ত মহাসাগর। এখানে প্রায় আট হাজার মানুষ বসবাস করে।
এটি হলো চমৎকার সুন্দর দ্বীপপুঞ্জ এবং সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য অভয়াজন্য। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী, সামুদ্রিক পাখি, মাছ এবং শেলফিশের বৃহত্তম একটি অংশ। এছাড়াও এখানে রয়েছে স্টেলার সামুদ্রিক সিংহ, সামুদ্রিক ওটার, শর্ট -টেইলড অ্যালবার্টরস এবং তিমি মাছের মত প্রাণী। জাহাজ নিয়ে আইল্যান্ড এর পাশ দিয়ে গেলে দেখা যায় পাহাড়ের ওপর তুষারপাত। পাহাড়ের উপর তুষারপাত এবং উপত্যকায় তুষারপাতের দৃশ্য সত্যই মনোরম। যে কোন মানুষকেই মুগ্ধ করে দেবে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য।
এই অঞ্চলটি প্রত্যন্ত এবং অল্প জনবসতিপূর্ণ। তবে এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ মাছ পাওয়া যাওয়ার কারণে ফিশিং জাহাজ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই আইল্যান্ডের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ শোনা যায়, দেখা যায় তিমি মাছ। যদিও তিমি মাছের কিছু অংশই কেবল দেখা যায়।
আমাদের তোলা ছবিতে সামুদ্রিক পাখি এবং তিমি মাছের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। সেই সাথে দেখা যাচ্ছে তুষারপাতের পর পাহাড়ের দৃশ্য।
বেরিং সাগর উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের অংশ। এই সাগরের অধিকাংশ এলাকা বেশিরভাগ সময় কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে। শীতকালে দক্ষিনে সেন্ট ম্যাথিউ দ্বীপ পর্যন্ত সাগরটি জমাট বেঁধে যায়। বেরিং সাগর বিশ্বের বহু বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর জন্মস্থান ও নিরাপদ আশ্রয়। বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির তিমি এখানে জন্ম নেয়। এছাড়াও প্রতিবছর বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক কোটি শীতের পাখি এ অঞ্চলেই জন্ম নেয়।
আলিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের পাশ দিয়ে জাহাজ নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা ছোট বড় বিভিন্ন রকম তিমি মাছ দেখতে পাই। তিমি মাছ বা জাহাজের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আমরা নিরাপদ দূরত্ব দিয়ে সেই জায়গাগুলো অতিক্রম করি। দেখলেই বোঝা যায় অঞ্চলটি সামুদ্রিক প্রাণীদের অভয়ারণ্য।
লেখক: মাস্টার মেরিনার
এক্স ক্যাডেট,বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী চট্টগ্রাম।