“আসসালামুওয়ালাইকুম, ওয়ালাইকুম সালাম। হ্যালো আপনি কি লিপি ওসমান বলছেন? জ্বি বলছি, প্লিজ আমার কথাগুলো শুনুন। ভাবী আমার সন্তান দুটিকে বাঁচান, নিশ্চিত আমি করোনায় আক্রান্ত। আমার স্বামী করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলোশেনে আছে। আমিও মনে হয় নিশ্চিত আক্রান্ত হয়ে গেছি। জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়া শুরু হয়ে গেছে। দুটি সন্তান ঘরে একটি মেয়ে ক্লাস নাইনে পড়ে আর ছোট ছেলেটি টুতে। আমার পরিববার বা সন্তানকে দেখার কেউ নাই। আমার ডাক্তার এসে নমুনা নিয়ে যাওয়ার কথা সিটি করপোরেশন থেকে। তারা জানিয়ে দিয়েছেন আসতে পারবে না। বাচ্চা দুটিকে নিজ থেকে আলাদা করতে পারছি না। ওরাও আক্রান্ত হয়ে যাবে। বাসায় টাকা নেই। তবে এটি এম কার্ডে টাকা আছে। খাবার নেই । বাচ্চা দুটিকে নিয়ে কি করব।
বাঁচার ও চিকিসা সেবা না পাওয়ার এই আকুতি নারায়ণগঞ্জ শহরের জামতলা এলাকার করোনা উপসর্গে আক্রান্ত এক নারীর। তার নাম নাজমা সুলতানা শিমু। তার স্বামী মেহেদী হাছান গত সোমবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জ কাঁচপুর সাজেদা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আক্রান্ত গৃহিনী শিমু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান পত্নী জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপির ফোন নম্বর সংগ্রহ করে মোবাইল ফোনে বুধবার রাতে এ কথাগুলো বলেন।
বিষয়টি তাৎক্ষণিক জানিয়ে লিপি ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানকে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। ওই সময় এমপি শামীম ওসমান নারীর ফোন নম্বর দিয়ে তার চিকিৎসায় অবহেলা সংক্রান্ত খোঁজ খবর নিতে গণমাধ্যম কর্মীদের অবগত করেন।
মুঠোফোনে করোনা উপসর্গে আক্রান্ত ওই নারী বুধবার রাত ৯টায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মুঠোফোনে বলেন, “আমার হাজব্যান্ড মেহেদী হাছান একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির নিটিং ম্যানেজার। তাকে গত সোমবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কাঁচপুর সাজেদা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন আমিও মনে হয় নিশ্চিত আক্রান্ত। আমার স্বামীর আক্রান্ত হওয়ার খবর জানাজানি হওয়ায় আমাদের পরিবার অনেকটা বিচ্ছিন্ন। কেউ বাসায় আসছে না। বাসায় খাবার নেই। ওষুধ নেই। করোনার শেষ উপসর্গ ডায়রিয়া শুরু হয়ে গেছে। সংসারে আমার স্বামী, আমি আর দুই বাচ্চা। আর কেউ নেই। এখন আমিও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। নিশ্চিত করোনা আক্রান্ত মনে হচ্ছে। আমার পরিবারের সবার স্যাম্পল সেই সোমবার থেকে নেওয়ার কথা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ডাক্তার এসে। কিন্তু কেউ আসেনি গত তিন দিনেও। আজকেও (বুধবার) ফোন দিলাম নাসিকের ডাক্তারকে। বলল, আসতে পারবে না। তাদের নাকি অনেক কাজ। ইমার্জেন্সি ছাড়া আসবে না। আমার ইমার্জেন্সি কি মরে বুঝাব বলেন? বাচ্চা দুটিকে আলাদা করতে পারিনি। জানি না আমার বাচ্চা দুটির কি হয়।”
তিনি আরও বলেন, “উপায়ন্তর না পেয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের স্ত্রীর ফোন নম্বর সংগ্রহ করে এই পরিস্থিতির কথা জানাই। তিনি তাৎক্ষণিক আমার বাড়িতে রান্না করা খাবার পাঠানোর কথা বলেছেন। ব্যবস্থা করেছেন ডাক্তারের।
এ বিষয়ে এমপি পত্নী সালমা ওসমান লিপি জানান, এখন অভিযোগের সময় নাই। পরিবারটিকে সহায়তা করতে হবে। আমি আমার হাজব্যান্ড শামীম ওসমানকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছি।
কি ব্যবস্থা নিয়েছেন মুঠেফোনে জানতে চাইলে এমপি শামীম ওসমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “নাসিক চিকিৎসা দিচ্ছে না, কি দিচ্ছে তা এখন বলার সময় কম। আগে চিকিৎসা। আমি পরিবারটির অসহায়ত্বের কথা শুনে নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না। এলাকাটি সিটি করপোরেশেন এলাকায়। দায়িত্ব নাকিসকের। আমি সংশ্লিষ্ট কোথাও ডাক্তার না পেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও ফোন দিয়েছি। যতদূর পারি চেষ্টা করেছি। ওই আক্রান্ত পরিবারের জন্য সার্বক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা করেছি। ওনাদেরর পরিবারের যা লাগে উনি ভদ্র মহিলা ফোন দিলেই পৌঁছে যাবে। ওনাকে হসপিটালাইজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
অসুস্থ ওই নারী শিমু জানান, ভাবী ও এমপি সাহেব তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। একজন স্বেচ্ছাসেবী ফোন দিয়ে জানিয়েছেন যেকোনও সময় যে কিছু লাগলে তাকে ফোন দিতে। ওনারা ডাক্তারের ব্যবস্থা করেছেন। আজকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ডাক্তার এসে নিয়ে যাবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও জানান, আমার বাচ্চা দুটির দায়িত্ব লিপি ওসমান নিজে এক ভাড়াটিয়াকে দিয়েছেন এবং উনি সার্বক্ষণিক খবর রাখছেন।
করোনার উপসর্গে আক্রান্ত নারী শিমু অভিযোগ করে বলেন, “সিটি করপোরেশনের অবহেলায় অনেক আঘাত পেয়েছি। আমার এ অবস্থায় তারা কোনও কর্ণপাত করল না”।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে দায়িত্বরত চিকিৎসক নিজাম আলী বুধবার রাতে মুঠোফোনে জানান, ওনার খবর আমরা পেয়েছি। আমাদের লোকবল খুব কম। অনেক কাজ করতে হচ্ছে। সিরিয়াল আছে। দুপুর ২টার মধ্যে স্যাম্পল কালেক্ট করে ৫টার মধ্যে জমা দিতে হয় ঢাকায়। নইলে স্যাম্পল অ্যাকটিভিটি নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, আজকে (বুধবার) আর যেতে পারব না।। তবে বৃহস্পতিবার চেষ্টা করব। আপনি ওনার ঠিকানা ম্যাসেজে পাঠিয়ে দিন।
চেষ্টা করব অর্থ কি প্রশ্ন করলে জানান, অনেক কাজ কোথা থেকে কোথায় যাব? লোকবল নেই।
সুত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন