দুই বছরের লোকসান কাটিয়ে ফুলের রং এ স্বপ্ন রাঙ্গাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহের ফুলচাষিরা। এ বছর ফুলের চাহিদা অনেক। সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা। দামও বেশি, ফুলের বর্তমান দাম বিগত ১৫ বছরের থেকে সর্বোচ্চ বলছেন চাষিরা।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস এলেই এ জেলার ফুলচাষি ও ফুলকর্মীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বিভিন্ন জাতীয় উৎসবে মূলত এলাকায় উৎপাদিত ফুলই ব্যবহৃত হয়। চলতি মাসেই রয়েছে তরুণ-তরুণীদের প্রাণের উৎসব বসন্তবরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এছাড়া রয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস। এসব উৎসবের কয়েকদিন আগে থেকেই বাজারে ফুলের চাহিদা বেড়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় ফুলের আবাদ হয়েছে ২১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে জেলা সদরের গান্না, কোটচাঁদপুর উপজেলার ইকড়া, কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, মহেশপুর উপজেলার নেপা, শ্যামকুড় এলাকায় সবচেয়ে বেশি ফুলের আবাদ হয়।
জেলায় আবাদ করা মোট ফুলের মধ্যে গাঁদা ফুলই শতকরা ৭০ ভাগ। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় মাঠের পর মাঠে চাষ করা হয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরাসহ নানান ফুল।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে সব ধরনের উৎসব অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় ২০২০ ও ২০২১ সালে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়েন ফুলচাষিরা। অনেকেই এ সময়ের মধ্যে অন্য চাষাবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
কিন্তু ২০২১ সালের শেষের দিকে সংক্রমণ কমে আসায় সরকার থেকে অনেক অনুষ্ঠানাদির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। ফলে আবারও ফুলচাষে ফিরে আসেন চাষিরা। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারির পর থেকে বাজারে সব ধরনের ফুলের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
বালিয়াডাঙ্গা, গান্না বাজার ও কালীগঞ্জের মেইন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর থেকে শত শত কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফুল ভ্যান, স্কুটার ও ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন পরিবহনযোগে নিয়ে আসছেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড ভরে যায় লাল, সাদা আর হলুদ ফুলে ফুলে।
সারাদেশের আড়তগুলোতে ফুল পাঠাতে আসা ফুল চাষিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তারা সারাবছরই ফুল বিক্রি করেন। তবে প্রতিবছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও থাকে ভালো।
কোটচাঁদপুরের ইকড়া গ্রামের ফুলচাষি সেলিম হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে আমার চন্দ্রমল্লিকা ক্ষেতে প্রচুর কুঁড়ি আছে। এই ফুল দু-একদিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হবে। তাই গাছে মাচা করে দিচ্ছি। এতে গাছ হেলে পড়বে না, ফুলেও ময়লা লাগবে না। মানটাও অনেক ভালো থাকবে।
একই এলাকার গাঁদা ফুলচাষি হাফিজ জানান, এবার ফুলের দাম অনেক বেশি। তার এক বিঘা জমি থেকে গত একমাসে ৭০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে আরও বেশি দাম পাবেন আশা করছেন তিনি।
এই ফুলচাষি আরও বলেন, বর্তমানে ফুলের বাজারদর গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরকম দাম থাকলে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানান, এ মুহূর্তে ফুলের মান ভালো রাখতে কৃষকদের নন-ইউরিয়া সার ও জৈবসার ব্যবহারে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।