কিশোর বয়সে মনের অজান্তেই মা- বাবার দেখা দেখিতে এই কুমোর জিবনে জড়িয়ে গেছেন মঞ্জুরী পাল। স্বামীর সংসারে এসেও একই কাজ। রাত দিন কাদামাটির কাজ করে যেন হয়ে গেছেন মাটির মানুষ।
সংসারে রয়েছে এক মেয়ে ২ ছেলে। জমি জিরাত নেই। এ কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করানোর পর মেয়েকে বিয়ে দেন।
আর বড় ছেলে এমএ পাশ করে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। ছোট ছেলে পড়ছেন উচ্চ মাধ্যমিকে। অন্য ব্যবসা করার মতো অর্থ না থাকায় বাধ্য হয়ে এ পেশায় নিয়োজিত।
শুধু মঞ্জুরী পাল নয়, তার মতো শতাধিক পরিবারের লোকজন দিন রাত পরিশ্রম করেও দারিদ্রের কষাঘাত থেকে মুক্ত হতে পারছে না গাংনীর আমতৈল গ্রামের কুমোররা।
এক দিকে মাটি ও আনুষাঙ্গিক জিনিসের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে প্ল¬াস্টিকের চমকপ্রদ দ্রব্যাদির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নিপুণ শিল্পকর্ম খচিত মাটির জিনিষের কদর কমে গেছে। ফলে দৈন্যদশা বিরাজ করছে কুমোরদের মাঝে। স্বল্প সুদে ঋণ পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন শতাধিক কুমোর পরিবার।
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে আমতৈল গ্রাম। গ্রামের ২৭টি কারখানায় শতাধিক পরিবারের লোকজন মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত। নারী- পুরুষ সবারই কাদামাটির গন্ধমাখা শরীর।
এক সময় এদের নিপুণ হাতের শিল্পকর্মে তকতকে কাদামাটি হয়ে উঠে নিত্য ব্যবহার্য বাসন পত্র, ফুলের টব, নান্দা, খেলনাসহ কারু কাজ করা শোপিচ। বেশ কদরও ছিল এসব জিনিষের।
এনামেল ও প্লাস্টিকের তৈরি জিনিষের কদর বেড়ে যাওয়ায় মাটির তৈরি জিনিষের এখন আর সেই কদর নেই। এখন পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাটির পাট বা স্লাব। জেলার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাতেও বিক্রি হচ্ছে এসব স্লাব। এদের কাজের নিপুণতা ও সৌন্দর্য থাকলেও মলিন পোশাক, ও রোগ ব্যধির ফলে দ্রুত আসা বার্ধক্য একটা মলিন আবরণ ফেলে দিয়েছে।
কারখানার মালিক স্বপন জানান, আগে এক ট্রলি মাটির দাম ছিল ২০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০০০ টাকা। জ¦ালানীর দামও বেড়ে গেছে। কারখানার মালামাল তৈরি ও চুলার জন্য জমি লীজ নিতে হয়। এক বিঘা জমি লীজ নিতে বাৎসরিক ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়। বছরের মাত্র ৮ থেকে ৯ মাস চলে এ ব্যবসা।
অনেক কুমোর বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মৃৎ শিল্পে বিনিয়োগ করেছেন। আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে এমন কোন টাকা থাকে না যা দিয়ে সমিতির কিস্তি পরিশোধ করবেন। সরকার যদি স্বল্প সুদে কুমোরদের ঋণের ব্যবস্থা করতো তাহলে সকলেই স্বাবলম্বী হতে পারতো। একই কথা জানালেন মঞ্জুরী বালা পাল।
গাংনী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কাজি আবুল মনসুর জানান, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সরকার দুটি কর্মসূচি চালু করেছেন। একটি ভাতা কর্মসূচি অন্যটি ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি। কুমোররা যদি ঋণের জন্য আবেদর করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।