স্বাধীনতার সূতিকাগার ঐতিহাসিক মুজিবনগরের আমবাগানের পরিচর্যা, রক্ষনা-বেক্ষণ ও উদ্ভিদ সমূহ সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় সাড়ে ৮৬ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারী মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি আবেদন পাঠানোর পর গত ১৬ নভেম্বর কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক মুজিবনগরে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর আম্রকাননে বাংলাদেশের বিপ্লবী সরকার গঠণের মধ্য দিয়ে এই মুজিবনগর আম্রকাননটি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিণত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে সারাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী দর্শনার্থী আসেন। স্বাধীনতার তীর্থভূমি মুজিবনগরে গড়ে উঠেছে স্মৃতিশোধ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স। আর বিশাল আয়তনের এই আম্রকাননে জুড়ে ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নানা ইতিহাস।
তথ্যমতে, প্রায় ৩০ একর আয়তনের এই আম্রকাননে অতীতে ১২৬০ টি আম গাছ থাকলেও বর্তমানে গাছ রয়েছে ১১০৭ টি। আম্রকাননের অধিকাংশ গাছ শতবর্ষী হওয়ায় গাছগুলি মারা গেছে। দূর্বল হয়ে পড়েছে বেশ কিছু গাছ। এছাড়া আগাছা জন্মানো ও গাছের ঘনত্ব বেশী হওয়ায় পর্যাপ্ত পুষ্টিও পাচ্ছেনা গাছগুলো। এসব কারনে মনোমুগ্ধকর ও ঐতিহ্যবাহী বাগানটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে দিন দিন মলিন হয়ে পড়েছে।
বাগানটির নানা দিক বিবেচনা করে মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কমিটি একটি পরামর্শক কমিটি গঠণ করেন। পরামর্শক কমিটিতে মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপরিচালক (ডিডি)’র নেতৃত্বে একটি পরামর্শক কমিটি গঠণ করা হয়। সেখানে বারাদী হর্টিকালচারের উপপরিচালক ও মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সদস্য রাখা হয়। সেই কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে গাছগুলোর যথার্থ পরিচর্যার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী দুটি পরিকল্পনা দাখিল করেন।
স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনায় রয়েছে স্থানীয় অর্থায়নে গোবর ও অন্যান্য জৈব সার প্রয়োগ করার কথা এবং দীর্ঘ মেয়াদী বাস্তবায়নের লক্ষে আম্রকাননে উন্নত সেচ ব্যবস্থা সংযোজন, আগাছা পরিস্কার, সমন্বিত সার ও কিটনশক প্রয়োগসহ নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যায় ধরা হয়।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক আম্রকাননটি ফিরে পাবে নব যৌবন। ইতোমধ্যে গত ১৬ নভেম্বর সকালের দিকে কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন।