বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের নাম ‘করোনা ভাইরাস’। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই মহামারীতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২৪ জনে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চতুর্থ দফায় আগামী ২৫ এপ্রিল (শনিবার) পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়িয়েছে সরকার। করোনার এই রকম আতঙ্কের মধ্যেই শুরু হচ্ছে ডেঙ্গুর মৌসুম।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২৬৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। গত বছর মার্চের শেষদিকে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। পরবর্তীতে রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সে সময় নানা পদক্ষেপ নিলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, জেলায় জেলায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। কেবল সরকারি হিসেবেই মারা যায় ১৬৬ জন।
এখন চলতি বছরের এপ্রিলে এসে করোনা আতঙ্কের মধ্যেই উঁকি দিচ্ছে ডেঙ্গু। জানা গেছে, ডেঙ্গু ও করোনা দুটোই ভাইরাসজনিত রোগ হলেও বেশ কিছু উপসর্গ আলাদা। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের আলাদা প্রশিক্ষণের আওতায় আনার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে সন্দেহ হলেই পরীক্ষার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। বলা হচ্ছে, দুটোই ভাইরাসজনিত জ্বর হওয়ায় আলাদা করা কিছুটা দূরূহ। তবে চিকিৎসকরা বলছে সহজেই তারা এই দুই জ্বরকে পৃথক করতে পারেন।
তাদের মতে, ডেঙ্গু এবং করোনার উভয় ক্ষেত্রেই মূল উপসর্গ জ্বর। গলাব্যাথা করোনায় থাকলেও ডেঙ্গুতে নেই। আবার করোনায় বমিভাব থাকলেও এই উপসর্গ নেই ডেঙ্গুতে। ডেঙ্গুতে শরীরে র্যাশ দেখা দিলেও করোনায় তা থাকে না। ডেঙ্গুর মাথা ব্যথা হয় চোখের পেছনের দিকে, করোনায় স্বাভাবিক মাথাব্যথা। ডেঙ্গুতে শরীরে প্রচন্ড ব্যথা হলেও করোনায় এই উপসর্গ থাকে না। করোনায় ক্রমে শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে শুকনো কাশি, যদিও ডেঙ্গুতে তা হয় না।
এ ব্যাপারে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আল আমিন সেতু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দু’টোতেই জ্বর থাকবে। এবং দুটোতেই জ্বর হাই গ্রেডে থাকে। কিন্তু অন্য উপসর্গগুলো থেকে সহজে আলাদা করা যায়। ডেঙ্গুতে বেশি উপসর্গ থাকে। হাচি-কাশি-গলাব্যথা শুধু করোনাতে থাকে।’ এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মেডিকেল কলেজ সবখানেই বিশেষ প্রশিক্ষণের আওতায় এনেছে তারা।
ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ’র ডিএমপি ডা. আফসানা আলমগীর খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চিকিৎসকরা এটা জানেনই যে করোনার উপসর্গগুলো আলাদা এবং ডেঙ্গুর উপসর্গগুলো আলাদা। তার হিস্ট্রিতে যদি থাকে সে করোনায় আক্রান্ত তাহলে তাকে সরাসরি আইসোলেশনে নিয়ে যাবে।’ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু কিংবা করোনা যেকোনো উপসর্গেই তাদের দ্রুত পরীক্ষার আওতায় আনা জরুরি।
সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন