করোনার প্রভাব পড়েছে মেহেরপুরের গবাদিপশু খামারে। ঈদ-উল আযহার বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। তারপরও কোরবানির পশু কেনাতে তেমন একটা সাড়া নেই ক্রেতাদের মাঝে। মেহেরপুরের গরু দেশের বিভিন্ন বড় বড় হাটে বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়। কিন্তু এবার এখনও পর্যন্ত পশুহাট নির্ধারণ না হওয়ায় বড় গরুর চাহিদাও তেমন একটা নেই। স্থানীয়ভাবে কয়েকটা বিক্রি হলেও দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট খামারিরা। সব মিলিয়ে এবার কোরবানির ঈদের যেন খামারিদের চোখে-মুখে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। লাভের আশায় পশু পালন করতে গিয়ে এখন পুঁজি ধরে রাখাই মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়াও করোনা প্রভাবে অনলাইন প্লাটফর্মে কোরবানির পশু বিক্রির চেষ্টা করছে অনেক খামারি। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে বিজ্ঞাপন। কিন্তু সেখানেও ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ নেই।
মেহেরপুর জেলায় এ বছর ৪৩৫ টি খামারে ও পারিবারিকভাবে প্রায় লক্ষাধিক গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিন্তু ঠিক দাম পাওয়া নিয়ে আতঙ্কগ্রস্থ খামারিরা। উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হলেও করোনা প্রভাবে দাম কমেছে গবাদি পশুর। এমতাবস্থায় প্রায় শতকোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছে পশুপালন খামারিরা।
অনেকেই ক্ষুদ্র লোন নিয়ে গরু-ছাগলের খামার করেছে। উদ্দেশ্যে ছিল কোরবানির সিজনে ভালো দামে বিক্রি করে পারিবারি চাহিদা মেটাবে। কিন্তু ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ অনেকে। সেক্ষেত্রে খামার বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি প্রনোদনার দাবি করেছে অনেক খামারিরা।
জেলা শহরে বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে নেপালি, অস্ট্রেলিয়ান, ফ্রিজিয়ান, হরিয়ানা, পাকিস্তানি, দেশিসহ নানা জাতের গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। গরু পালন লাভজনক হওয়াতে বসতবাড়িতেও গরু পালন করা প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা বছর গরু পালনের পর এখন এসেছে কাঙ্খিত বিক্রির সময়। কোরবানির চাহিদা লক্ষ্য করেই শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা চলছে।
সৌদি ফেরত সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের আক্তার হোসেন জানান, দেশে ফিরে গত বছর একটি গরুর খামার গড়ে তুলি। বিদেশে উপার্জিত টাকায় উন্নত জাতের গরু পালন শুরু করি। কোরবানিকে সামনে রেখে ১০টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাপারীদের তেমন সাড়া দেখছি না। কয়েকজন আসলেও কাঙ্খিত মূল্য দিতে নারাজ।
গাংনীর গরুর খামারে এনামুল হক জানান, গ্রামের প্রতিটি বাড়ি যেন এক একটি খামার। পরিবার প্রধান নারী-পুরুষ মিলে পরিচর্যা করেন গরু গুলোকে। পরম যত্নে নিজের সন্তানের মতই আদর করা হয় এই গরু গুলোকে। যেন আমাদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। কোরবানির পশুর হাটে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হলে এবারও লাভবান হবো। কিন্তু করোনার কারণে এবার লোকসান হবে বলে এটাই নিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে।
সদরের বুড়িপোতা গ্রামের নার্গিস খাতুন ও আম্বিয়া খাতুন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে একটি করে গরু লালন পালন করেছে। আশাছিল কোরবানির সময় বিক্রি করে পারিবারিক স¦চ্ছলতা ফিরিয়ে আনবে। এখন গরুর চাহিদা না থাকায় ঋণ পরিশোধ নিয়ে আতঙ্কিত তারা।
সদর উপজেলার শালিকা গ্রামের খামারি জিল্লুর রহমান জানান, তার খামারে ৫২ টি গরু আছে। পশু পালনের খাদ্য উপকরণের দাম বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার কারণে অনলাইনেও ক্রেতাদের তেমন কোনো সাড়া মিলছে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন এবার অনেক খামারিরা পুঁজি হারিয়ে ফেলবে। বন্ধ হবে অনেক খামার।
গরুর ব্যাপারী নুরুল হোসেন জানান, গত কোরবানির ঈদে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরুর দাম করে বায়না করতেন। ঈদের আগে আগে এসব গরু গুলোকে ঢাকা, চিটাগাং সহ দেশের বড় বড় গরুর হাটে তুলতাম। এবার করোনার কারণে ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অগ্রিম বায়না করতে পারছিনা। বর্তমানে প্রতিটি ব্যাপারীর কপালে আশঙ্কার ভাজ।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম জানান, এবার মেহেরপুর জেলায় নিবন্ধিত অনিবন্ধিত খামারে ও পারিবারিকভাবে ১ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। করোনার মধ্যেও মানুষ কোরবানির পশু কিনবে বলে আশা করছি। যেহেতু এখনও সময় আছে, খামারিদের হতাশ না হওয়ার আহবান জানান তিনি।