মাল্টা বাগান করে সফল হয়েছেন কুষ্টিয়ার নারী উদ্যোক্তা ময়না খাতুন। তিনি ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চন্ডিপুর এলাকার প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী।
৫-৬ বছর হলো ময়না খাতুন মাল্টা বাগান গড়ে তোলার পর তিনি সফলতা লাভ করেছেন এবং উপজেলার রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন তিনি।
এ নারী উদ্যোক্তার স্বামী প্রায় দুই যুগ দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকলেও মাল্টা বাগান নিয়ে ব্যতিব্যস্ত তিনি। অবশ্য এ বাগান তৈরির ব্যাপারে উৎসাহও প্রদান করে আসছেন তার স্বামী আব্দুর রাজ্জাক।
সরেজমিন গিয়ে ময়না খাতুনের মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে সবুজ পাতার আড়ালে ও ডালে ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় মাল্টা। বাতাসে মাল্টার টক-মিষ্টির গন্ধ। দুইজন শ্রমিক বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত। আর কোন গাছের পাতা ছিড়তে হবে গাছের গোড়া পরিষ্কার করতে হবে এসব নির্দেশনা দিচ্ছেন ময়না খাতুন।
পুরো বাগানটি একটি সবুজের ছায়াঘেরা। গেলো বছর তিন লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন তিনি। এ বছর তার বাগানে বেশ অনেক মাল্টা এসেছে। লাখ চারেক টাকার মাল্টা বিক্রি হবে বলে আশাব্যক্ত করেন তিনি।
মাল্টা বাগানেই কথা হয় ময়না খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, স্বামীর অনুপ্রেরণায় ২০১৭ সালে সিলেট থেকে ৫৭০টি বারি মালটা-১ এর চারা এনে ৬ বিঘা নিজের জমিতে মাল্টা বাগান গড়ে তুলি। বর্তমানে মাল্টার বাগান এখন দেখার মতো হয়েছে। আশান্বিত ফলও পেতে শুরু করেছি। কয়েক দিনের মধ্যে বিক্রি করা শুরু করবো বলেও জানান তিনি।
বাগান থেকেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়ে যায় বলে কোন ঝামেলাই হয়না বিক্রি করতে। এছাড়াও তার বাগানে সিডলেস ও চায়না লেবু এবং কিছু লিচু গাছও রয়েছে। প্রতিকেজি মাল্টা ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও অনেক দর্শনার্থীরা এই বাগান পরিদর্শনে আসেন। এতে তিনি আনন্দও পান।
তবে নারী হিসেবে তাকে সফল হতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। শুনতে হয়েছে নানান জনের নানান কথা। তবুও দমে যাননি তিনি। নিজ প্রচেষ্টায় এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে। এতোকিছুর পরেও একজন নারী হিসেবে ফলের বাগান গড়ে তোলা সেটি ছিলো অনেকটা দু:সাহসের ব্যাপারও বটে। ভবিষ্যতে নারীদের উজ্জীবিত হওয়ার জন্য কিছু করার ইচ্ছা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রায়ই দেখা যায় এই মাল্টা বাগান পরিদর্শনে অনেক দর্শনার্থী আসেন।
তেমনি কথা হয়, বিভাস চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন, বাগানে এসে নিজ হাতে ফল পেড়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। বাগান ঘুরে নিজের কাছে অনেক ভালো লাগে এবং তরতাজা গাছপাকা মাল্টাও কিনতে পাওয়া যায়।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুল গোলাম রাজন বলেন, ‘মাল্টা একটি অর্থকরী ফসল। মাল্টা বারি-১ একটি উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু ফল। ময়না খাতুনের মাল্টার বাগানে আমি সবসময়ই নানান পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ভেড়ামারায় তার মতো এতোবড় মাল্টার বাগান আর নেই। তাকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কেবল পরামর্শ প্রদান করেছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, একজন নারী হয়েও ময়না খাতুন এতো সুন্দর মাল্টা বাগান করে উপজেলাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তার বাগানে কোন প্রকার ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। এমন সুন্দর বাগান এ অঞ্চলে মাল্টা উৎপাদনে অনেককেই উৎসাহিত করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।