মুক্তিযোদ্ধাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের পুস্পস্তবক হাতে নিলেন অমুক্তিযোদ্ধা শহিদ সাদিক বাবুল। এমনই অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
রবিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে বঙ্গবন্ধুর অস্থায়ী প্রতিকৃতির সামনে এ ঘটনা ঘটান তিনি। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা তার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন। তবে অভিযুক্তের দাবি তিনি মুক্তিযোদ্ধা।
অভিযুক্ত শহিদ সাদিক বাবুল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপির বড় ভাই। ভাই প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে তিনি এ ধরণের আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধাদের।
জানা গেছে, ঘটনার সময় মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন চলছিল। অন্যন্যা সংগঠনের মতো মুক্তিযোদ্ধারাও ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা এমএ হালিম, চাঁদ আলী, সিরাজুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম, হেকমত আলী, মুসা করিম, ইলিয়াস, আব্দুল জলিলসহ ৪০ থেকে ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা পুস্পস্তবক হাতে নিয়ে অপক্ষো করেন। এ সময় হঠাৎ করে শহিদ সাদিক বাবুুল ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল মালেককে ধাক্কা দিয়ে সরে যেতে বলেন। এসময় মুক্তিযোদ্ধা চাঁদ আলী স্টিক ছেড়ে দিলেও আব্দুল মালেক পুস্পস্তক হাতে ধরে বলেন আপনি এখানে কেন এসেছেন, আমি সরবো না বলে তিনি পুস্পস্তবকের স্টিক ধরে থাকেন। এসময় অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। অনুষ্ঠান নষ্ট হয়ে যেতে পারে ভেবে তারা চুপ করে থাকেন। কিছুক্ষণ পরেই জেলা প্রশাসক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমাণ্ডার ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ক্যাপ. আব্দুল মালেককে ডেকে নিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। অনুষ্ঠান শেষে মুক্তিযোদ্ধারা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম বলেন, অনুষ্ঠানের মধ্যে বাবুল নামের একজন অমুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের ক্ষমতায় মুক্তিযোদ্ধাদের ধাক্কা দিয়ে সরান এবং নির্লজ্জের মতো মুক্তিযোদ্ধা সেজে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করার চেষ্টা করেন। একজন অমুক্তিযোদ্ধা এ ধরণের আচরণ করতে পারেন না। আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধারা মিলে পরবর্তিতে অন্য কর্মসূচীও গ্রহণ করবো।
মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল মালেক বলেন, হঠাৎ করে প্রতিমন্ত্রীর বড়ভাই বাবুল সেখানে গিয়ে আমাক্কে ধাক্কা দিয়ে সরে যেতে বলেন। আমি শক্ত করে পুস্পস্তবক ধরে তাকে জানায় আপনি অমুক্তিযোদ্ধা হয়ে কেন এখানে এসেছেন। এসময় অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা তাকে আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তখন অনুষ্ঠানের স্বার্থে আমরা নিরব হয়ে যায়।
সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমাণ্ডার আবুল কাশেম জানান, আমি অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি। তবে আমি শুনেছি প্রতিমন্ত্রীর বড়ভাই বাবুল মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অশোভণ আচরণ করেছেন। যা তিনি অন্যায় করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে কেন তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে পুস্পস্তবক অর্পণ করতে যাবেন। এ ধরণের আচরণ মেনে নেওয়া হবে না।
অভিযুক্ত বাবুল নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বলেন, আমার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট আছে। আমি ভাতার জন্য মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নেয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের ধাক্কা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি তাদের ধাক্কা দেয়নি। ক্যাপটেন মালেককে বলেছিলাম আপনি মাঝখানে থাকেন। তিনি একপ্রান্তেই থাকলেন। তিনি আরো জানান, যারা বলেছে আমি মুক্তিযোদ্ধা না তারাতো মেহেরপুরের না , তারা বাইরের, তারা কিভাবে জানবে আমি মুক্তিযোদ্ধা কি না?
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা মুক্তিযুদ্ধ সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমাণ্ডার ড. মুনসুর আলম খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাকে এক মুক্তিযোদ্ধা মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।