মুজিবনগরে সরকারি নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে এক শ্রেণির মুনাফা লোভী প্রভাবশালীদের ইন্ধনে চলছে অবৈধ পুকুর খননের মহোৎসব।পুকুর খননের কাজ ইতিমধ্যে প্রায় শেষের দিকে। পুকুর খননকরা কালীন সময়ে উত্তোলন করা মাটি এবং বালি বর্তমানে গোপনে কন্ট্রাকটারের মাধ্যমে বিক্রি করছে বিভিন্ন ইট ভাটাই।
মুজিবনগর উপজেলার কয়েকটি ফসলি জমিতে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। এতে করে পাশের কৃষি জমিগুলো হুমকির মুখে পরে যাচ্ছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায় ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা লঙ্ঘন করে মুজিবনগর উপজেলার তারানগর গ্রামে মাদারতলার পিছনে একটি জায়গায় ফসলি জমি নষ্ট তারনগর গ্রামের মৃত,রসুল কসাইের ছেলে আরশাদ কসাই বিভিন্ন ক্ষমতার জোর দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তার পুকুর খননের কাজ।
ইতি মধ্যে পুরোটা খনন হয়ে গেলে, পুকুরে বালি তুলে রেখে বাধায় করে রেখেছে আরশাদ কসাই।আর উত্তোলনকৃত বালি গোপনে বিক্রি করছে বিভিন্ন ইটভাটাই।পুকুর খনন করার সময় মাটির সাথে উত্তোলন হচ্ছে বালু। যেগুলো গাড়ি প্রতি ১৫ শত থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে করে অধিক মুনাফা অর্জন হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এলাকার প্রভাবশালীরা এসব পুকুর খনন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে এলাকায় ফসলি জমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ওপরও দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয় নিয়ে গ্রামবাসি সহ খননকৃত পুকুরের পাশের জমির মালিকদের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।এভাবে পুকুর খনন চলতে থাকলে নিকট ভবিষ্যতে উপজেলায় ফসলি জমি থাকবে না বলে মতপ্রকাশ করছেন এলাকার সুধিসমাজ।
গণমাধ্যম কর্মীরা পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহ করতে মাঠে গেলে নামপ্রকাশে অনেকে বলেন, ছবি তুলে, নিউজ করে লাভ নেই। এর আগেও অনেক সাংবাদিক এসেছে।কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
কৃষি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন করছে তারানগর গ্রামের মৃত রসুল কসাইের ছেলে আরশাদ কসাই।যার পুকুর খনন করতে করতে নিজের জমি ছেরে চলে এসেছে সরকারী রাস্তার ভিতর।এতে করে রাস্তাটা অনেক ঝুকির মধ্যে পরে যাচ্ছে।
আরশাদের জমির পাশেই রয়েছে তারানগর গ্রামের জহন্নর নামের একজনের বাশবাগান, তিনি সাংবাদিক দেখে বলেন, আপনাদের তো শুধু ছবি আর ভিডিও করায় কাজ।
১০-২০ টাকা দিলেই আপনারা চুপ হয়ে যান।এর আগে অনেক অফিসার, সাংবাদিক এসেছে। কিন্তু পরে তাদের আর কোন খোজ পাওয়া যায়নি। আপনাদেরও আর খোজ পাওয়া যাবে না।ঠিকিই বড় বড়া মানুষের ক্ষমতা দেখি পুকুর খনন করে চলেছে। কারও কাছে বলে আমাদের লাভ নেই।
পুকুর খনন বন্ধ করার বিষয়ে তিনি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাই তিনি বলেন, একবার মৌখিক ভাবে তৌশিলদারকে বলেছিলাম কিন্তু কোন কাজ হয়নি। তখনিই বুঝলাম আমাদের চুপ করে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
এলাকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের অভিযোগ, কোনো অনুমতি ছাড়া প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের জমি পুকুরের জন্য দখল নিয়ে নিচ্ছে অনেকে।
পুকুর খনন বন্ধের বিষয়ে কেউ বাগোয়ান ইউনিয়ন তৌশিলদারের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,পুকুর খনন বন্ধের বিষয়ে লিখিত কিংবা মৌখিকভাবে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে আমি গতকাল পুকুর খননের বিষয়টি জানতে পারার পর আমার অফিসের পিয়নকে ঘটনাস্থলে পাঠাইছিলাম। তবে বৃষ্টির কারনে আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে।
আমি পুরো বিষয়টি ইউএনও স্যারের নলেজে দিয়েছি। এবং ইউএনও স্যারের নির্দেশে তাকে কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে।
পুকুর খননের বিষয়ে আরশাদ কসাই বলেন, আমি সরকারী রাস্তায় পুকুর খনন করনি ।
যেটুকু কেটেছি আমার নিজের জমিতে।আমি ৫ বিঘা জমির উপর পুকুর খনন করার প্লান করেছিলাম।এ প্রযন্ত ৩ বিঘা জমির উপর খনন করা হয়েছে বাকি আছে ২ বিঘা। তাছাড়া মানুষের অনেক শত্রু থাকে, কেউ হয়তো আমার উপর শত্রুতা করে আপনাদের কাছে সরকারী রাস্তার বিষয়ে ভূল তথ্য দিয়েছে।
মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকার বলেন, পুকুর খননের বিষয়গুলো একেবারে অবৈধ। পুকুর খনন বন্ধে বারবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। আরশাদের বিষয়টি আমি গতকাল সোমবার শুনেছি। শোনার পর তৌশিলদারকে পাঠিয়ে কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে।
পরবর্তিতে পুনরায় কাজ শুরু করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।