স্বাধীনতার সূতিকাগার মেহেরপুরের মুজিবনগর। বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নিয়েছিল এই ঐতিহাসিক স্থানে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই জায়গাটি দেখতে সারা বছরই পর্যটক আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় চলতি শীত মৌসুমেও বেড়েছে পর্যটকদের আনাগোনা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা আসছেন মুজিবনগর দেখতে। কিন্তু ভ্রমণের আনন্দে বাঁধ সেজেছে এখানকার ভ্যান চালকরা। পর্যটকদের গাড়ি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের পাখি ভ্যানে তোলা নিয়ে প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যায় ভ্যান চালকদের। সীমান্ত বর্ডার দেখানোর নাম করে কয়েকটি গ্রাম ঘুরিয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
কখনো কখনো রিজার্ভ করা ভাড়ার দ্বিগুন দাবি করে হয়রানি করছে পর্যটকদের। প্রতিনিয়তই ঘটছে এই ধরণের ঘটনা। এ নিয়ে অনেক সময় পর্যটকদের সাথে ভ্যান চালকদের বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে।
ঝিনাইদহ থেকে ঘুরতে আসা স্কুল শিক্ষক জামিরুল ইসলাম জানান, আমরা পিকনিক স্পটে বাস থেকে নামার সাথে সাথে কয়েকজন ভ্যানচালক বাসের কাছে হাজির হয়ে বর্ডার দেখতে নিয়ে যাবে বলে ভ্যানে তুলে নেই। তারপর মুজিবনগরের আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরিয়ে কয়েক ঘন্টা সময় পার করে আমাদের আবার পিকনিক স্পটে নামিয়ে দেয়। যেটা দেখতে এসেছি সেটাই দেখা হলো না।
নড়াইল থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা রিফাত জানান আমরা এই প্রথম পরিবার সাথে করে ঘুরতে এসেছি। ভ্যানচালকরা বিভিন্ন জায়গা দেখাবে বলে ভ্যানে তুলে নেই। কিন্তু গ্রাম ছাড়া সেরকম কিছুই দেখাইনি। আর এর বিনিময়ে জন প্রতি ৫০ টাকা করে নিয়েছে। অথচ কথা ছিল সীমান্ত বর্ডার দেখিয়ে আনবে ৩০ টাকা ভাড়ায়। এত টাকা কেন নিচ্ছে জানতে চাইলে চালকের সাথে বাকবিতণ্ডা বেধে যায়।
কুষ্টিয়া থেকে আসা সাকিব, রায়হানসহ কয়েকজন দর্শনার্থীরা জানান, ভ্যানচালকরা মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স না দেখিয়ে, সোনাপুর, নাজিরাকোনা, জয়পুর নামের বিভিন্ন গ্রামের বর্ডারে নিয়ে যায়। এতে করে অনেক সময়ও নষ্ট হয়। কিন্তু মুজিবনগর কমপ্লেক্স এর ভিতর ভ্যান ঢুকতে না দেওয়ায় আমাদের সেই হেটেই মুজিবনগর কমপ্লেক্স এ ঘুরতে হয়েছে। অযথা ভ্যানে চড়ে টাকাগুলো নষ্ট করা হলো। আমাদের যেটা বলে ভ্যানে তোলা হয়েছিল তার কোনটায় করেনি চালক।
এভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে পর্যটক হয়রানি কেন করা হচ্ছে জানতে চাইলে পাখী ভ্যানচালক ফয়জদ্দীন জানান, মুজিবনগর কমপ্লেক্সে ভাড়া মারার জন্য প্রায় ২ শত এর উপরে ভ্যান আছে। মুজিবনগর কমপ্লেক্সের ভিতরে ভ্যান প্রবেশ করতে না দেওয়ায় এই সমস্যাটা হচ্ছে। ভিতরে ভ্যান প্রবেশ করতে দিলে এই সমস্যাটা আর থাকবে না।
ভ্যানচালকদের সর্দার বাশির আলী জানান, এর আগে সিরিয়ালের সময় তাদেরকে আমি লিড দিতাম। তবে এবার করোনার কারণে লোকজন না আসায় সিরিয়ালের প্রয়োজন হয় না। তাই এখন সকল ভ্যানচালকরা যে যার মত করে ভাড়ায় খাটছে।
এ বিষয়ে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন সরকার জানান, বিষয়টি আমরা জানা ছিল না। পর্যটকরা যাতে হয়রানি না হয় সেজন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রয়োজনে চালকদের সাথে সমম্বয় সভা করে নিয়ম মাফিক চলাচলের জন্য বলা হবে।