মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ৯টি ইট ভাটায় অভিযান চালিয়ে ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং আয়ান ব্রিকস নামের একটি ইট ভাটার আংশিক উচ্ছেদ করে ভাটা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিফুর রহমানের নেতৃত্বে উপজেলাজুড়ে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
মুজিবনগর উপজেলার ভবানীপুরে রফিকুল ইসলামের গাজী ব্রিকসে ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, ফারুক হোসেন এর জবা ব্রিকসে২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, গোপালনগর গ্রামের মোজাম্মেল হকের বিবিই ব্রিকসে ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, মোনাখালী গ্রামের এমএনবি ব্রিকসে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, গৌরীনগরের তৌফিকুল বারীর, মুকুল ব্রিকসে ২ লক্ষ টাকা, দারিয়াপুরে রোকনুজ্জামানের হীরা ব্রিকসে ২ লক্ষ টাকা, নুরুল ইসলামের ডালিম ব্রিকসে ২ লক্ষ টাকা, মোনাখালীর মোঃ লাভলুর এমএনসি ব্রিকসে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, একই এলাকার মোঃ আব্দুর রশিদের শাপলা ব্রিকসে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিফুর রহমান জানান, মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটাতে অভিযান পরিচালনাকালে ভাটাগুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকা, অবাধে কাঠ পোড়ানো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিকট স্থানে এবং ফসলী জমি ধ্বংস করে ইটভাটা তৈরি করার অপরাধে মুজিবনগর উপজেলার নয়টি ইটভাটার কাছ থেকে ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।এ সময় মুজিবনগরের কেদারগঞ্জ বাজারে অবস্থিত আয়ান বিক্সকের আংশিক উচ্ছেদ করে ভাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান- এই অভিযান পর্যায়ক্রমে জেলার সব উপজেলায় চলবে। তিনি জানান-আদালত ইটভাটার মাটি পড়ে সরকারী রাস্তার ক্ষতি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, সড়ক চলাচলকারীদের জন্য জীবনের হুমকী বিষয়টিকে দন্ডবিধির ২৯০ ও ৪৩১ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছেন। সেই সাথে জেলায় অধিকাংশ ইটভাটা লাইসেন্সবিহীন, অবৈধ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন এবং ফসলী জমি ধ্বংস করে স্থাপন হওয়ার বিষয়টি ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ধারা ৪ ও ৮ এর লঙ্ঘন এবং উক্ত আইনের ধারা ১৪ ও ১৮ অনুযায়ী অর্থদন্ড ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক আতাউর রহমান বলেন, মেহেরপুর জেলায় ৯৩টি ইট ভাটার মধ্যে ১টি মাত্র ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে। অবৈধ এই সমস্ত ইটভাটা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে তালিকা দিয়েও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই অভিযান শুরু হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইটভাটা মালিক অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পরিবেশের অধিদপ্তরের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলকে প্রতিবছর মোটা অংকের টাকা দিয়ে ইটভাটা গুলো চালাতে হয়। পরিবেশ লাইসেন্স দিলে আমাদের নিতে সমস্যা নেই। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা করি। লক্ষ লক্ষ টাকা ভ্যাট ও ট্যক্স দিই। এরপরেও প্রতিবছর এভাবে আমাদের জরিমানা করা হয়।
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট-১ম আদালতের বিচারক এস এম শরিয়ত উল্লাহ অবৈধ ইটভাটা বন্ধ সহ ইট ভাটার মাটি পড়ে সরকারী রাস্তার ক্ষতি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, সড়ক চলাচলকারীদের জন্য জীবনের হুমকী বিষয়টিকে দন্ডবিধির ২৯০ ও ৪৩১ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গণ্য করে স্ব-প্রণোদিত আদেশ জারী করে ২৩ জানুয়ারীর মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল পূর্বক ব্যবস্থা নিতে বিশেষ পুলিশ সুপার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুষ্টিয়াকে এবং উপ-পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়াকে নির্দেশ দিয়েছেন।