অপেক্ষার পালা শেষ। শনিবার থেকে মেট্রোরেলের হুইসেল বাজবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে চাইলেই মিলবে মুক্তি। এর মাধ্যমে রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিলে তৈরি হচ্ছে নতুন গতির পথ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও ৯টি স্টেশনের পর এবার যুক্ত হবে নতুন ৭টি স্টেশন, যা জানান দিচ্ছে নগরের উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের নতুন সংযোগের।
মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ শনিবার (৪ নভেম্বর) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন রোববার (৫ নভেম্বর) থেকে শুরু হবে এই পথে বাণিজ্যিক যাত্রা। আর এর মধ্য দিয়ে রাজধানীর উত্তর থেকে দক্ষিণে চলাচলকারীদের যাপিত জীবনে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে অতিরিক্ত চার কর্মঘণ্টা! উত্তরা থেকে মতিঝিল শুনলেই নিয়মিত যারা এই পথে চলেন তাদের ভাবনায় চলে আসে দুই থেকে তিন ঘণ্টার পথ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পাশাপাশি মোটা অংকের ভাড়া দিতে হয় উবার বা সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে। অথচ মাত্র বিশ থেকে বাইশ কিলোমিটার পথ। ছয় কিলোমিটার গতিতে চলা এই নগরবাসী তাই বরাবরই রাজপথে বড্ড অসহায়।
এসব এখন পিছে ফেলে রাজধানীবাসী ফিরে পাবে প্রাণ। প্রাথমিকভাবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল ৩টি স্টেশনের যাত্রায় উত্তরা থেকে ৩১ মিনিট সময় লাগলেও সব কটি স্টেশন চালু হলে লাগবে ৩৮ মিনিট। অর্থাৎ হিসাব বলছে, উত্তরা থেকে একবার মতিঝিল যেতে কর্মঘণ্টা বাঁচবে দুই ঘণ্টা। এবার যাওয়া-আসার এই হিসাব মেলালে প্রতিদিন এই পথে সাধারণের ঝুলিতে যুক্ত করবে চার কর্মঘণ্টা।
প্রথম পর্বে ওপরের গতির পাশপাশি নিচের সড়কের সুফল এখন দৃশ্যমান। তাই এই পথেও যাত্রী যখন উপরে উঠবে চাপ কমবে নিচে, কিছুটা হলেও ফিরবে স্বস্তি। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমে আসবে বলে ধারণা করছেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা। প্রথম ধাপে উত্তরা-আগারগাঁও দুই পাশের মতো শাটল সার্ভিস দিয়ে ফর্মগেট, শাহবাগ ও মতিঝিলের মতো স্টেশনগুলো থেকে যদি মেট্রো যাত্রীদের বের করে দেয়া যায়, তাহলে মিলবে পুরোপুরি সুফল।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, যাত্রীরা প্রত্যেকেই যাতায়াতে দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় বাঁচাতে পারবেন বলে ধারণা করছি। এ ছাড়াও এর ফলে নিচের রাস্তায় চাপ কমবে। এতে যানজট থেকে অনেকটা স্বস্তি পাবেন নগরবাসী। পুরো কার্যক্রম শুরু হলে মানুষের চলাচলে অনেক স্বস্তি মিলবে।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানী ঢাকায় দেশের প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। এরপর উত্তরা-আগারগাঁও মেট্রোরেলের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরই মধ্যে এই অংশের সব স্টেশন চালু হয়েছে। এখন মেট্রোরেল সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলাচল করছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটারের পুরো রুটটি ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে ভ্রমণ করে মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল।
শনিবার উদ্বোধন হওয়ার পরে রবিবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে উত্তরা ও মতিঝিলে একই সময় ছাড়বে নিয়মিত মেট্রোরেল। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথম প্রথম মতিঝিল থেকে উত্তরা (২০.১ কিলোমিটার পথ) যেতে ৩৮ মিনিট সময় লাগবে।
মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে উত্তরা অংশের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গত ১ নভেম্ব) রাজধানীর পরিবাগে ডিএমটিসিএল কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ উদ্বোধনের দিন বন্ধ থাকবে মেট্রোরেলের স্বাভাবিক চলাচল। ওইদিন মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল যাবেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে ৭ জুলাই মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে ট্রেনের পরীক্ষামূলক যাত্রার উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। মূলত মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাড়তি অংশ নির্মাণ, প্রতিটি স্টেশনের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হওয়ায় খরচ বেড়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা।
মেট্রোরেল প্রকল্প নেয়া হয় ২০১২ সালে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে।