বড় বড় গর্ত আর খানা খন্দে ভরা ভাঙ্গা চোরা জনবহল রাস্তাটি এখন সীমান্ত এলাকার হাজারো মানুষের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
দূর্ভোগের এই চিত্রটি প্রায় ১০ কিলোমিটার মেহেরপুর-কাথুলি সড়কের। রাস্তাটি রয়েছে মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্বাবধানে।
মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তি উজুলপুর, কুলবাড়িয়া, চাঁদপুর শিবপুর, সহোগলপুর, গাঁড়াবাড়িয়া, কাথুলি, তেঁতুলবাড়িয়া, ধলা, খাসমহল, রংমহলসহ আশে পাশের প্রায় ২০/২৫ টি গ্রামের মানুষ জেলা শহরে আসেন এই রাস্তাটি দিয়ে। এছাড়া এলাকার প্রশিদ্ধ সব্জীসহ অন্যান্য ফসলও জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে রাস্তাটি দিয়ে। এই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিনই এলাকার প্রশিদ্ধ সব্জীসহ অন্যান্য কৃষি পণ্য ট্রাক, স্যালো ইঞ্জিনচালিত আলগামন নসিমনসহ অন্যান্য যানবাহনে করে মেহেরপুর জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। এই এলাকা থেকে প্রতিদিনই অর্ধশত ট্রাক কৃষি পণ্য যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
সরে জমিনে দেখা গেছে, মেহেরপুর শহরতলির কায়েম কাটার মোড় থেকে গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তি কাথুলি মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি ভাঙ্গা চোরা ও খানা খন্দে ভরা। কোনো কোনো স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টির পাশাপাশি রাস্তার উপর হাটু পানি জমে গেছে। এ যেনো এক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই কুলবাড়িয়া ও গাঁড়াবাড়িয়া বাজারের উপর হাটু পানি জমে যায়। ফলে পথচারীদের দূর্ভোগের সিমা থাকেনা।
অটো চালক তারিকুল ইসলাম বলেন, সড়কের ১০ কিলোমিটার রের মধ্যে ৯ কিলোমিটার রাস্তায় খারাপ। ভাঙা চুরা রাস্তায় যাওয়া আসার ফলে গাড়ির বল বিয়ারিংসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে যাচ্ছে। সপ্তাহ পার না হতেই আবারও পার্টস লাগাতে হয় গাড়িতে।
উজুলপুর গ্রামের অটো চালক আতিয়ার রহমান বলেন, রাস্তার কোনো বাপ মা নেই। তাই এই হাল। দীর্ঘদিন যাবৎ রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেলেও কেউ দেখেনা। মাঝে মধ্যে সড়ক ও জনপথের লোকজন সংস্কারের নামে কিছু পাথর ছিটিয়ে চলে যায়। দু একদিন পর আবার আগের মতই হয়ে যায়।
সদর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের লিজন বলেন, প্রতিদিনই দু একবার মেহেরপুর শহরে যেতে হয়। ভাঙ্গা চুরা রাস্তায় অটো বা আলগামনে চড়ে মাজা কোমর ব্যাথা হয়ে যায়।
গাংনীর ধলা গ্রামের সাহার আলী বলেন, আমরা সীমান্তবর্তি গ্রামের বাসিন্দা। মেহেরপুর জেলা শহরে আসি এই রাস্তা দিয়ে। রাস্তাটি এতটাই খারাপ হয়ে গেছে। এটি চলাচলের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
রামকৃষ্ণপুর ধলা গ্রামের ব্যবসায়ী রমজান আলী ও রিয়াজতুল্লাহ বলেন, আমরা সব্জী নিয়ে মেহেরপুর কাঁচা বাজারে আসি। এই ৮/৯ কিলো মিটার রাস্তায় চলতে গিয়ে জীবন থাকেনা। সরকারের এত উন্নয়ন চারিদিকে দেখা যায়। শুধু এই রাস্তাটির কাছেই সরকারের উন্নয়ন হয়না? প্রশ্ন করেন তিনি।
কুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রহমত আলী ও হাসমত আলী বলেন, আমাদের এলাকাটা সব্জী এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানকার সব্জী ট্রাক লোড হয়ে ঢাকা, চিটাগাংসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। অথচ, রাস্তাটির কারণে, কোনো ট্রাক এখানে আসতে চাইনা। রাস্তাঘাট ভাঙা চুরার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া দাবী করেন তারা।
আড়ৎ ব্যবসায়ী জমির আলী বলেন, এখানকার কৃষি পণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। এখানকার কৃষি পণ্য ও সব্জী যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। মেহেরপুর-কাথুলি রাস্তাটির কারণে, সব চেয়ে বেশী ভোগান্তিতে আছে ব্যবসায়ীরা। খারাপ রাস্তাটির কারণে বাইরের গাড়ি ঘোড়াও এখানে আসতে চাইনা।
মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাব ডিভিশনাল প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, মেহেরপুর-কাথুলি রাস্তাটির অবস্থা এখন খুবই খারাপ। রাস্তাটিতে ছোট খাটো সংস্কার করলে টিকানো যাবেনা। এখানে বড় ধরনের সংস্কার কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, গত অর্থ বছরে মেহেরপুর সওজ থেকে জেলার তিনটি রাস্তার উন্নয়নের জন্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার চেয়েছিলাম। প্রতিমন্ত্রী স্যার ২ টি রাস্তার উন্নয়নে ডিও লেটার দিয়েছেন। সে দুটি রাস্তার সংস্কার করা শেষ হয়েছে। রাস্তাটি বড় ধরণের সংস্কার কাজ করার জন্য মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্যের কাছ থেকে ডিও লেটার নিয়ে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় এখনো বরাদ্দ দেইনি। বরাদ্দ দিলে ওই রাস্তাটিতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ করা হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত) মুনঞ্জুরুল করিম বলেছেন, সংস্কার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ওই রাস্তাটির সংস্কার কাজ করা হবে।
এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি।