শিক্ষার নামে গলাকাটা বাণিজ্য করছে জিনিয়াস ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের বেতন ও ভর্তি ফিসের জন্য চাপ প্রয়োগ না করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বার বার বলা হলেও কর্ণপাত করেনি জিনিয়াস স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুল বন্ধ থাকলেও অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে আবার কখনো বাসায় গিয়ে বার বার চাপ প্রয়োগ করে নেওয়া হয়েছে পুরো বেতন। এছাড়াও সেশন চার্জের নামে প্রায় ১৬’শ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি নেওয়া হয়েছে ১৭’শ ৫০ টাকা করে। যার গাণিতিক অর্থ প্রায় ২৮ লাখ টাকা। এ নিয়ে অভিভাবকদের নানা অভিযোগ থাকলেও বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সাধ্য না থাকলেও বাধ্য হয়েছেন সবাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো তারপরও পুরো বেতন দিতে হচ্ছে আমাদের। একসাথে অনেক টাকা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার উপর আবার বছরের শুরুতেই দিতে হচ্ছে ১৭’শ ৫০ টাকা সেশন চার্জ। টাকা কম নিতে বা মওকুফ করতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বার বার অনুরোধ করেও কোন লাভ হয়নি।
স্কুল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতি মাসে প্লে থেকে ২য় শ্রেণী পর্যন্ত বেতন নেওয়া হয় ৬’শ টাকা, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত ৮’শ টাকা, ৫ম শ্রেণী ১ হাজার টাকা, ৬ষ্ট ও ৭ম শ্রেণী ৯’শ টাকা, ৮ম শ্রেণী ১১’শ টাকা, ৯ম ও ১০ম শ্রেণী ১২’শ টাকা। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা আয় হয় বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আল-আমিন ইসলাম বকুল। আন-নুর ফাউন্ডেশনের নামে চলছে বিদ্যালয়টি। যার সভাপতির দায়িত্বে আছেন আল-আমিন ইসলাম বকুল নিজেই।
আল-আমিন ইসলাম বকুল মেহেরপুর জেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে বিতর্কিত সংগঠন জামায়াত ইসলামের সূরা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও তিনি মুজিবনগরের আন-নুর টেকনিক্যাল ও বিএম কলেজের প্রিন্সিপাল। তার স্ত্রী রিতা পারভিন বর্তমানে প্রিন্সিপালের দায়িত্বে আছেন জিনিয়াস ল্যাবরেটরী স্কুল অ্যান্ড কলেজের। তবে স্কুলটির পরিচালক আল-আমিন ইসলাম বকুল জামায়াত নেতা হলেও স্রোতের মুখে গা ভাসিয়ে বিভিন্ন সময় তিনি ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকে স্কুল কমিটির সভাপতি বানিয়ে স্কুল পরিচালনা করছেন।
বিদ্যালয়ের ভাইস প্রিন্সিপাল সামসুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে দুই শিফটে ৫৫ জন শিক্ষক পাঠদানের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৬ হাজার ৫’শ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত তাদের বেতন দেওয়া হয় প্রতি মাসে। স্কুলে যা আয় হয় তা স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে খরচ হয়ে যায়। তবে সামসুর রহমানের দেওয়া তথ্যের অমিল পাওয়া গেছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই যদি হিসেব করা যায় খরচ বাদে আরও প্রায় ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত থেকে যায়। এই টাকার পুরো অংশই যায় বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আল আমিন ইসলাম বকুলের পকেটে।
বিদ্যালয়ের উপার্জিত টাকার অংশ জামায়াত সংগঠনেও যায় বলে জানা গেছে। একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে জানা যায় প্রতি বছরই এককালীন চাঁদা হিসেবে দেয় লাখ লাখ টাকা। গত ২০২০ সালে ১২ ডিসেম্বর দিয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। যা বায়তুল মাল নামে রশিদের মাধ্যমে গ্রহন করেছে সংগঠনের ক্যাশিয়ার।
পরিচালক আল-আমিন ইসলাম বকুল জানান, স্কুলটি আমাদের মেহেরপুরের সবার। স্কুলটি নষ্ট না করে সহযোগীতা করার আবেদন জানান। একই সঙ্গে সংবাদ না করারও আবেদন জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, কিছু দিন আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করার কথা ছিল, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা, শিক্ষার্থীদের বেতন ও সেশন চার্জ নির্ধারণ করা প্রসঙ্গে। তবে এখনো পর্যন্ত সে ব্যাপারে কোন নির্দেশনা পাইনি। যার কারনে প্রতিষ্ঠান গুলোর ম্যানেজিং কমিটি যেটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সে মোতাবেক স্কুল গুলো পরিচালনা হচ্ছে। তবে করোনাকালিন সময়ে এই ভাবে শিক্ষার্থীদের বেতন বা সেশন ফী’র জন্য চাপ না দিয়ে সদয় হওয়া উচিত।
জিনিয়াস ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আশিকুজ্জামান সবুজ পেশায় একজন ঠিকাদার। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য আশকার আলীর সন্তান। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি নিয়মের বাইরে চলছে বলে আমার মনে হয় না। সকল কিছু নিয়ম মেনেই করা হয়।