ভৌগলিক দিক থেকে মেহেরপুর জেলা হিসাবে সবচেয়ে ছোট কিন্তু ঐতিহাসিক ভাবে বড় মর্যদায় অলংকৃত এবং অনেক কারণে গুরুত্বপূর্ণ জেলা। যতদিন বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জাতিকে ঐতিহাসিক মেহেরপুর জেলাকে প্রতি বছর ১৭ই এপ্রিল সর্বোচ্চ সম্মানে স্মরণ করতেই হবে।
এই দিনেই স্বাধীনতার মহানায়ক বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে জাতীয় চার নেতার সাহসী নেতৃত্বে প্রথম সরকার, শপথ ও রাজধানী ঘোষনা করে নতুন বাংলাদেশের শুভযাত্রা শুরু হয়েছিল আর মেহেরপুর জেলাবাসির কপালে পড়েছিল রাজটিকা।
পৃথিবীর মানচিত্রে ১৭ই এপ্রিলের এই বীরোচিত ইতিহাস চির অম্লান হয়ে থাকবে। যদি আমরা এই রাজটিকা সৌভাগ্যকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হই, এ জন্য আমারাই দায়ী। স্বপ্নের স্বাধীনতা অর্জনের একদিনের নবজাতক শিশু বাংলাদেশ আজ তার বয়স প্রায় অর্ধশত বছর।
অনেক শাসনের হাত বদল হলেও প্রতিহিংসার ধ্বংসাত্মক রাজনীতি, ভয়াবহ দুর্নীতি, শোষণ, বৈষম্য, স্ব্াধীনতা বিরোধী শক্তির উত্থান, জঙ্গিবাদ, মাদক, সন্ত্রাস, বাল্য বিবাহ, মানব পাচার, লোমহর্ষক শিশু ও নারী নির্যাতন, আইন যেন জিম্মি, প্রজা যেন রাজার ভূমিকায়, স্বাধীনতা যেন পরাধীন আর যতটা দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ কথায় সফল করেছি কিন্তু আজও গড়তে পারেনি পুরোপুরি।
কিন্তু কেন? কি জন্য? কাদের কারণে এই ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি? জনগণ আজ জানতে ও দেখতে চায় এর গভীর অনুসন্ধান, গবেষণা আর কঠোর পদক্ষেপ। বিশ্ব ইতিহাসে বিরল আমাদের অসীম ত্যাগ আর বিসর্জন। অমৃত যে স্বাধীনতা আজ আমরা ভোগ করছি তা মোটেও সহজ ছিলনা, এ ঋণ কখনো শোধীবার নয়।
১৯৮৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী মেহেরপুর জেলা ঘোষনা হলেও আজো উন্নয়নে অবহেলিত ও উপেক্ষিত ঐতিহাসিক মেহেরপুর জেলা। স্থানীয় যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বা অবহেলায় যেভাবেই বলিনা কেন এবং সুধী সমাজও এর দায়ভার এড়িয়ে যেতে পারেননা।
সময়ের প্রয়োজনে আপনাদের দুয়ারে-দুয়ারে পৌঁছে দিতে চাই ঐতিহাসিক মুজিবনগর খ্যাত মেহেরপুর জেলার উন্নয়ন ইস্যু এবং একটি সুন্দর স¦নির্ভর আধুনিক মেহেরপুর গড়ার আহবান। ঐতিহাসিক ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুর জেলার রাজটিকা, আমরা মেহেরপুরকে রাজকীয় ভাবে সাজাতে চাই, এটাই হোক আমাদের স্বপ্ন, প্রতিজ্ঞা এবং প্রতিশ্রুতি।
শুরু একজন করলেও শেষ সকলে মিলেই করতে হবে। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন দিনের নতুন আশায় থেমে থাকা অন্ধকার থেকে শুরু হবে আলোর পথে চলা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ ধন্যবাদ বেশ কিছু উন্নয়ন ইতোমধ্যে সমাপ্ত করেছেন, কিছু চলমান রয়েছে এবং কিছু উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি প্রদান করায়।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী এবং বাস্তবায়নকারী জেলা হিসাবে মেহেরপুরের উন্নয়নের জন্য কিছু কাজের সুপারিশ রেখে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
১। পীর আউলিয়া ফকির দরবেশ, লালন, বাউল পূণ্য স্থান, আদর্শ কৃষি উর্বর জমিন, ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনে জলন্ত স্মৃতি আর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে ১৯৭১ সালে ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন, শপথ ও রাজধানী ঘোষনা করা এবং একটি স্বাধীন দেশের শুভ জন্ম ।
আগামী ২০৫০ সালকে সামনে রেখে মেহেরপুর জেলার তিন উপজেলার (মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর এবং ১৮ ইউনিয়ন, ২ পৌরসভা) এর জনসংখ্যা, আবাদি জমি, আবাসন, কৃষি, খাদ্য, জ্বালানী, পানি, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, যোগাযোগ, পরিবহণ, অবকাঠামো, কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, ব্যয়ভার, স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ এবং স্বনির্ভরতা অর্জনে সার্বিক দিক গভীর গবেষণা ও গঠনমূলক আলোচনা সমালোচনার মাধ্যমে একটি দীর্ঘ মেয়াদি মাস্টার প্লান দ্রুত তৈরি করা।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর এবং আমঝুপি ও ভাটপাড়া নীলকুঠিকে সর্বাধুনিক ইকো পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা। মুজিবনগর কেন্দ্রিক ১০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি আধুনিক হোটেল, সরকারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে বহুতল মোটেল বা রেস্টহাউজ করা।
একটি আধুনিক শুটিং স্পট, মিনি ডিজিটাল সিনেমা হল, শিশু পার্ক সহ মুজিবনগর টু আমঝুপি নীলকুঠি ট্রাম ট্যুরিজম ও নৌ স্পীডবোট ট্যুরিজম যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা। সাংবিধানিক ভাবে ১৭ এপ্রিল প্রথম সরকার দিবস, জাতীয় শপথ দিবস ও রাজধানী ঘোষনা এবং নিয়মমাফিক সবসময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন চায়।
ঐতিহাসিক ১৭ই এপ্রিল যথাযোগ্য মর্যাদায় রাষ্ট্রিয়ভাবে উদযাপন চাই। এই দিবসটি পালনে জাতীয়ভাবে সকল স্তরে উদযাপন চালু চাই। ১৭ই এপ্রিল সাত দিন ব্যাপি মুজিবনগরে পর্যটন কেন্দ্র ঘিরে বিশেষ আয়োজনের ব্যবস্থা করা। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি, বসার স্থান ও ওয়াশরুম ব্যবস্থা রাখা।
ঐতিহাসিক স্থানটি পুরোপুরি গণপূর্ত অথবা জেলাপরিষদ অথবা জেলা প্রসাশন অধীনে একক তদারকি ও সংস্কারভার অর্পণ করা প্রয়োজন এবং বিশেষ বরাদ্দ রাখা ব্যবস্থা করা। মুজিবনগর পিকনিক স্পটটি আরও আধুনিকায়ন করে গড়ে তোলা। ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম বাগানটি সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন। মুজিবনগর পর্যটন কেন্দ্রিক বেসরকারী ভাল উদ্যোক্তাদের বিশেষ পৃষ্টপোষকতা পায় সে ব্যপারে পথ তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া।
আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে মুজিবনগর পৌরসভা চালু করা। প্রথম সরকার ও রাজধানী হিসাবে একটি মিনি পার্লামেন্ট ভবন স্থাপন এবং প্রতি বছর অন্তত একটি অধিবেশনের ব্যবস্থা করা। যা স্বনির্ভর ও আধুনিকতা অর্জনে নতুন পথ দেখাবে। মুজিবনগরকে আন্তর্জাতিক মানের ইকো পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে আরো আয়োতন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
এ ক্ষেত্রে মুজিবনগর সংলগ্ন চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা থানার নাটুদাহ ইউনিয়নকে সংযুক্ত করা। মেহেরপুর জেলা মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহি অবহেলিত স্থান গুলোকে চিহ্নিত করন, সংরক্ষণ এবং পর্যটন কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠিত করা। ঐতিহাসিক মার্চ বাঙ্গালীর জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় (৭ই মাচ, ১৭ই মার্চ, ২৬ শে মার্চ) তাই মাস ব্যাপি পালনে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ। জেলা উন্নয়নে চায় জেলা ঐক্য, এছাড়া একটি জেলার সার্বিক উন্ন্য়ন সম্ভব নয়। ধর্ম দল যার যার মেহেরপুর হবে সবার।
২। এই উপমহাদেশের সব চেয়ে প্রভাবশালী ও শক্তিশালী দেশ বৃহত্তর ভারত। ভারত বাংলাদেশের সাথে স্থল বন্দরে যে ব্যবসা বাণিজ্য হয় তার মধ্যে অন্যতম সেরা ব্যবসা পয়েন্ট মেহেরপুর। সেই দিক বিবেচনা করে এই মেহেরপুর জেলায় রেল ও আধুনিক যোগাযোগ সহ সর্বাধুনিক একটি স্থল বন্দর চালু করা। যা মেহেরপুরসহ বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমৃদ্ধি অর্জনকে এগিয়ে নিতে ব্যপকভাবে সাহায্য করবে। যা টাকার অংকে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।
এখানে উল্লেখ্য যে ইতিমধ্যে মেহেরপুরের সন্তান এ এস এম ইমন মেহেরপুরে স্থলবন্দর চাই আন্দোলনের মুখপাত্র হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যে আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে সকলেই একাত্মতা প্রকাশ করেছে। (চলবে)