একই দিনে একই সময়ে মেহেরপুর শহরের দুটি স্থানে পৌর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে পৃথকভাবে। এনিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। কোনটা ঠিক হয়েছে, কোনটি ঠিক হয়নি নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা উঠে আসছে। তবে নতুন করে পৌর আওয়ামী লীগের বিভক্ত সবার সামনে চলে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শনিবার বিকালে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে কমিউনিটি সেন্টারে একত্রে ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন এমপি। সেখানে সভাপতিত্ব করেন পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এমদাদুল হক ডাবু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক ও সদস্য শামীম আরা হীরা। বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস, দপ্তর সম্পাদক মোখলেছুর রহমান খোকন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা শরিফুল ইসলাম, আনারুল ইসলাম প্রমূখ।
অপরদিকে, জেলা পরিষদের মিলনায়তনে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. ইয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অসম্পূর্ণ ৩টি ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রসুল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অতিথি হিসেবে ছিলেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মিয়াজান আলী, মেহেরপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক শহিদুল ইসলাম পেরেশান, সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেহেরপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আল মামুন।
ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে সম্মেলন না করে এক স্থানে জড়ো করে সম্মেলন করায় আওয়ামী লীগের দেওয়লিয়াত্ত প্রমান করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে না গিয়ে একস্থানে সকল ওয়ার্ডের সম্মেলন করে আওয়ামী লীগকে দেওয়ালিয়াত্তের সাথে তুলনা করেছেন জেলা কমিটির সভাপতি। এটা জেলা আওয়ামী লীগের জন্য নিন্দনীয় ও ঘৃণিত কাজ হয়েছে। আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে সভাপতি এক্ষেত্রে শতভাগ ব্যার্থ হয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সদস্য অ্যাড. আব্দুস সালাম বলেন, সম্মেলন হতে হয় উৎসবমূখর পরিবেশে। ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলনকে ঘিরে কয়েকদিন উৎসব বিরাজ করার কথা ছিলো। কিন্তু এক স্থানে একত্রে সম্মেলনটি করায় নিষ্প্রাণ সম্মেলন হয়েছে। এই সম্মেলনকে আরো সুন্দরভাবে করা যেত।
তিনি আরো বলেন, অ্যাড, ইয়ারুল ইসলামকে সাথে নিয়ে আক্কাস আলী ৬টি ওয়ার্ডের সম্মেলন করেছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী মিটিংয়ে ওই কমিটিরগুলোকে বাতিল করা হয়। পরবর্তিতে শনিবার বিকালে আবার ৬টি কমিটি সভাপতিও সাধারণ সম্পাদককেই নির্বাচিত করা হয়েছে। তাহলে বাতিল করার কি প্রয়োজন ছিলো।
জানা যায়, শনিবার বিকেলে মেহেরপুর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে পৌর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে পৌর আওয়ামী লীগের ৯টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়।
পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী বলেন, সভাপতি অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করায় তাকে দল থেকে বহিস্কৃত করা হয়। যে কারণে তিনি পৌর কমিটির সম্মেলন করার এখতিয়ার রাখেন না।
অপরদিকে সভাপতি অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম বলেন, তাকে বহিস্কার করার পর নেত্রী ক্ষমা করে দিয়ে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নৌকা প্রতিক দিয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছিলো। এছাড়া পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলীসহ কয়েকজন নেতাকে নিয়ে ইতোপূর্বে ৬টি ওয়ার্ডের সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাকি ৩টা ওয়ার্ডের সম্মেলন করা হলো।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানা গেছে, শনিবারের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কণ্ঠভোটে নুরুল ইসলামকে সভাপতি ও তানসেন আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১ নম্বর ওয়ার্ড, রুহুল ইসলামকে সভাপতি ও গাজী সাইদুর রহমান বাদশাকে সাধারণ সম্পাদক করে ২ নম্বর ওয়ার্ড, জাহাঙ্গীর বিশ্বাসকে সভাপতি ও শরিফুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩ নম্বর ওয়ার্ড, নুরুল ইসলামকে সভাপতি ও ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪ নম্বর ওয়ার্ড, আল-আমিন শেখকে সভাপতি ও খলিলুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ নম্বর ওয়ার্ড, এমদাদুল হককে সভাপতি ও আশিকুর রবিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬ নম্বর ওয়ার্ড, বাইজিদ হোসেনকে সভাপতি ও তারিকুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭ নম্বর ওয়ার্ড, কেএম বদরুল হাসানকে সভাপতি ও আনিসুজ্জামান বকুলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং হামিদুল ইসলামকে সভাপতি ও ফিরোজুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়।
সভাপতির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কিতনটি ওয়ার্ড সম্মেলনে জালাল উদ্দিন খোকনকে সভাপতি ও মনিরুজ্জামান সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২ নম্বর ওয়ার্ড, বশিরউদ্দিনকে সভাপতি ও তারিকুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং শামসুল আরেফিনকে সভাপতি ও ইমতিয়াজ আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়।
পরে নির্বাচিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ফুলের মালা পরিয়ে একটি আনন্দ মিছিল বের করা হয়। আনন্দ মিছিলটি জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।