নানা চড়াই-উৎরাই ও কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে মেহেরপুরের অন্যতম জনপ্রিয় দৈনিক ‘মেহেরপুর প্রতিদিন’ পাঁচ বছর পেরিয়ে ছয় বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পত্রিকাটির প্রকাশক, সম্পাদক ও সাংবাদিক ভাইবোনদের পাশাপাশি সকল পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
দল-মত নির্বিশেষে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখায় মেহেরপুর প্রতিদিন মেহেরপুরের পাঠকের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি পত্রিকা।
সমাজের আয়না হিসেবে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন, অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সমাজের নানা অসংগতির তথ্য তুলে ধরা, ন্যায় ও সত্যের কথা বলা, সকল অন্যায়-অনিয়ম, দুর্নীতি, হত্যা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া সহ নানা সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে মেহেরপুর প্রতিদিন ।
এছাড়াও শির্ক্ষাথীদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটাতে দৈনন্দিন ইসলাম বিষয়ক লেখা প্রকাশ, নবীন ছড়াকার, কবি ও গল্পকারদের প্রতিভার বিকাশ ঘটানো এবং সৃজনশীলতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে প্রত্রিকাটি।
ছোট বেলায় কোন একটি বই-এ যেন পড়েছিলাম, একটি ছোট্ট গ্রাম, আর এই গ্রামের ভিতরে রয়েছে একটি পাঠশালা। পাঠশালার মেধাবী ছাত্র আব্দুল্লাহ। আব্দুল্লাহ পাঁচ ক্লাশে জলপানি পেয়ে পাশ করেছে। এরপর উচ্চক্লাশে লেখাপড়ার ব্যবস্থা আর গ্রামে নেই তাই এখন তাকে লেখাপড়ার জন্য যেতে হবে শহরে। মাথায় বিছানা আর কাপড়ের গাট্টি, হাতে খাবারের একটি ছোট্ট পুটুলি। যাত্রার শুরুতেই আব্দুল্লাহ দোয়া নেওয়ার জন্য গেল ওস্তাদজীর বাড়ীতে। মাথার গাট্টি আর হাতের পুটুলি মাটিতে নামিয়ে আব্দুল্লাহ বিনয়ের সাথে ওস্তাদজীর সামনে মাথা হেঁট করে দাড়াঁল। কাঁন্নাবিজড়িত কাঁপাকাঁপা কন্ঠের উচ্চারন, ‘ওস্তাদজী শহরে পড়’তে যাইতেআছি আমারে দোওয়া কইরেন’। ওস্তাদজী আদরের সাথে আব্দুল্লাহকে কাছে ডাকলেন, স্নেহভরা হাতটি রাখলেন তার মাথার উপর, বললেন, লেখাপড়া শিখে তুমি অনেক বড় হবে এ দোওয়া আমি করি না, আমি এ দোওয়াই করি লেখাপড়া শিখে যেন তুমি ‘মানুষ’ হও।
মানুষ আবার মানুষ হবে কিভাবে? বুঝে নেওয়া খুব সহজ নয় তবে মোটামুটি কথা হচ্ছে, মানুষের ঘরে জন্ম নিলেই যেমন মনুষ হওয়া যায় না, তার কিছু মানবিক গুনাবলী থাকতে হয় ঠিক তেমনি শুধুমাত্র ভালো কাগজ, ভালো ছাপা হলেই একটি ভাল পত্রিকা হওয়া যায় না। যেখানে থাকতে হয় সত্যিকারের সাংবাদিক, যারা সত্যকে উন্মোচিত করতে চির আগ্রহী।
আজকাল কিছু সাংবাদিক অনেক সময় সত্য তথ্যের ওপর নির্ভর না করে তথ্যদাতার মাধ্যমে পাওয়া খবর যাচাই বাছাই ছাড়াই ছেপে দেন। কিন্তু মেহেরপুর প্রতিদিন সেদিক থেকে আলাদা। মেহেরপুর প্রতিদিনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে যাচাই-বাছাই না করে সংবাদ প্রকাশ বিরল। এ জন্য সত্য তথ্যের ভরসা মেহেরপুর প্রতিদিন।
পাঠক নির্ভর করতে পারে, আস্থা রাখতে পারে, যদি কোনো সংবাদপত্র জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে। মেহেরপুর প্রতিদিন সেদিক থেকে পাঠকের কাছে একটি দায়বদ্ধ পত্রিকা। মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে যার দৃঢ় অবস্থান।
এমন অনেক পত্রিকাই আছে যারা সাহস করে অনেক রিপোর্ট প্রকাশ করে না বা করতে চায় না। কিন্তু সেখানে মেহেরপুর প্রতিদিন সত্য প্রকাশে আপসহীন। সত্য প্রকাশে এ পত্রিকাটি অনেক সময় ঝুঁকিও নিয়ে নেয়। জনগণকে বিভিন্ন ইস্যুতে সচেতন করার ক্ষেত্রেও মেহেরপুর প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে, যা সচেতন পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
সত্য প্রকাশের মাধ্যমে পত্রিকাটির সাহসী অভিযাত্রা অব্যাহত থাকুক। পত্রিকাটির পথচলা আরও শানিত হোক এবং একটি বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে মেহেরপুর প্রতিদিনের ভূমিকা আগামী দিনে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাক। মেহেরপুর প্রতিদিনের উপ সম্পাদকীয়তে আমি অনেক লিখেছি। এখনও লিখি। মেহেরপুর প্রতিদিনের সঙ্গে এটাও আমার যোগসূত্র। মেহেরপুর প্রতিদিন ভালো ভালো সংবাদ, ফিচার, সংকলন, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ছড়া ও কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে শুধু আমাদেরই নয়, বরং আমাদের ভক্ত পাঠকদের উৎসাহী করে তুলবে, এটাই কামনা করছি।
আমি মেহেরপুর প্রতিদিনের সাফল্য কামনা করছি। সততা, স্বচ্ছতা ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন এবং দেশীয় সংস্কৃতি বুকে ধারণ করে আপন সংস্কৃতির ধারায় পাঠকদের মন জয় করবে, সমাজের নানা অসঙ্গতি প্রকাশ করে মানুষকে সচেতন করে তুলবে, পাশাপাশি দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সবসময়ের কথা তুলে ধরবে এটাই প্রত্যাশা। মেহেরপুর প্রতিদিনের আগামীর পথচলা আরও সুন্দর হোক, শুভ হোক এই কামনাই করছি।
লেখকঃ লেখক ও গবেষক।