মেহেরপুরে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসিমা খাতুনের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন উল্টানোর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে আদালত তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে দিয়ে পুনরায় তদন্ত করিয়েছেন। সেখানেও তিনি হস্তক্ষেপ করেন বলে অভিযোগ করেন বাদি।
এদিকে, ভুক্তভোগী বাদি রেবেকা খাতুন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর কাছে জেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নাসিমা খাতুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, একই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিভাগীয় পরিচালক ও জেলা কর্মকর্তার কাছেও দিয়েছেন।
মেহেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতের একটি মামলার তদন্তে অর্থের বিনিময়ে বিবাদির পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী ঐ বাদি। এছাড়াও মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে বাদি পক্ষকে দমানোর চেষ্টাও করেছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ পত্র থেকে জানা গেছে, নাসিমা খাতুন মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা না থাকায় তিনি অতিরিক্ত জেলা কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। গত বছরের ৬ নভেম্বর মেহেরপুর গাংনী উপজেলা ধর্মচাকি গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস এর মেয়ে রেবেকা খাতুন বাদি হয়ে মেহেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তার স্বামী মিজানুর রহমান ও শাশুড়ি আলেয়া খাতুনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
আদালত মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেন গাংনী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসিমা খাতুনের উপর। তদন্ত কর্মকর্তা বাদি, আসামি ও সাক্ষীগণকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে তাদের কাছে থেকে ঘটনা শোনেন এবং কাগজের কিছু অংশ সাদা রেখে প্রত্যেকের কাছে থেকে স্বাক্ষর করে নেন এবং বলেন আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। ৩ থেকে ৪ দিন পর খোঁজ নিয়ে জানা যায়,বাদিসহ সকল সাক্ষীর জবানবন্দী দেওয়া কাগজে দুই হাতের লেখা। সাক্ষীদের জবানবন্দী পড়িয়ে শুনালে সেগুলো তাদের দেওয়া জবানবন্দী না বলে প্রত্যায়ন দেয় এবং এতে প্রমাণিত হয় আসামি পক্ষের কাছে থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা নাসিমা খাতুন আদালতে মনগড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
অভিযোগকারী রেবেকা খাতুন জানান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তার অফিসে আমাদের ডাকেন। তিনি মৌখিকভাবে আমাদের সকলের কাছ থেকে ঘটনাটি শোনেন। পরে তিনি সাদা কাগজে আমাদের স্বাক্ষর নিয়ে চলে যেতে বলেন। আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন পড়ে শোনালে আমরা নারাজি দিই। আমাদের নারাজি আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত পরবর্তীতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন জানান, নাসিমা খাতুনের বাড়ি গাংনীতে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এখানে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে আছেন। এর আগেও “গাংনীতে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসিমা খাতুনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ হয়।
গাংনী মহিলা বিষয়ক অফিস সূত্রে জানা যায় , চলতি বছর ১২টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং ১ টি সিআর মামলাসহ মোট ১৩ টি মামলার তদন্ত দায়িত্ব পান তিনি। এর মধ্যে ৯টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন এবং ৪ টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসিমা খাতুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, আমি কোন মামলার তদন্তে কারও পক্ষপাতিত্ব করিনা। আপনি অফিসে আসেন বাকি কথা হবে বলে ফোন রেখে দেন।