মেহেরপুর সীমান্তের বুড়িপোঁতা-বাজিতপুরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ তিনজনকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিরুদ্ধে।
ওই তিনজনকে নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল রোববার (৩০ জানুয়ারী) বিকালে ঘন্টা ব্যাপি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বুড়িপোঁতা ও বাজিতপুর গ্রামবাসি।
এ ঘটনার সুস্ঠ তদন্ত দাবী করে দোষী বিজিবি সদস্যেদের বিরুদ্ধে আইনুনাগ বিচারের দাবিতে বুড়িপোঁতা গ্রামে এ মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধনে এলাকার শত শত বৃদ্ধ, যুবক এমনকি শিশুরা অংশ নেন।
তবে ৬ বিজিবি চুয়াডাঙ্গার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমান্ত এলাকাগুলোতে মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় সেখানে নিয়মিত চেকিং করা হয়ে থাকে।ওই তিনজন সন্দেহতিতভাবে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের চেকিং এর সময়ে তারা বাঁধা দিলে বাকবিতন্ডা হয়।
মানববন্ধনে স্থানীয় বুড়িপোঁতা ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, আলমগীর হোসেন, মকলেছুর রহমানসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা বাজিতপুর ক্যাম্পের দোষী বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
বুড়িপোঁতা গ্রামের আলমগীর হোসেন ও মকলেচুর রহমান মানববন্ধনে বলেন, শহর থেকে বড় বড় গাড়ি নিয়ে সীমান্তে এসে তাদের সাথে চুক্তি করে ফেনসিডিল, গাঁজাসহ নানা ধরনের মাদক সেবন করে চলে যায়। এলাকার টিহিৃত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়না। চোরাকারবারীরা তাদের সাথে চুক্তি করে চোরাকারবারী করে চলেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়না। অথচ, সীমান্ত এলাকার নিরীহ মানুষ, কৃষক, ছাত্রসহ নানা পেশার মানুষকে বিনা কারণে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে বিজিবি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আগে শুনতাম পাকিস্থানী বাহিনী এদেশের মানুষকে বিনা কারণে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালাত। এখন দেখছি বিনা কারণে, বিজিবি বাহিনীর লোকজন সীশান্তের মানুষের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। সীশান্তের মানুষ বারবার বিজিবির হাতে নির্যাতিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উপর মহলের সাথে অনেকবার বসা হয়েছে। তারা বারবার সীমান্তবারি কাছে এসে সরি বলে মাফ চেয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। আবার একই ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে, বছর দুয়েক আগে এই গ্রামের বকস মিয়া (৪৫) নামের এক প্রতিবন্ধীকে ক্যাম্পের সামনে ধরে নিয়ে গিয়ে চরম নির্যাতন করে। এর কিছুদিন পর ওই প্রতিবন্ধী মারা যায়।এছাড়া একই গ্রামের কিন্টারগার্টেনের দুই স্কুল শিক্ষকসহ বেশ কয়েকজনকে নির্যাতন করেছে।এবার তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা সীমান্তবাসি আগামীকাল আদালতে যাবো।বিজিবির বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে বলে জানান তিনি।
গত শনিবার (২৯ জানুয়ারী) বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে বুড়িপোঁতা গ্রামের আব্দুল জাব্বারের ছেলে নর্দান ইউনিভার্সিটির বিএসসি (প্রকৌশলী)ছাত্র রুবেল আহম্মেদ (২৬), তার বন্ধু একই গ্রামের আজগর আলীর ছেলে মেহেরপুর সরকারী কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ইয়াজ আহমেদ (২৫) ও ইমাদুল হকের ছেলে কৃষক শামীম রেজা (৩৫)কে মাঠের জমি দেখতে যাওয়ার সময় বাজিতপুর বিজিবি ক্যাম্পের সামনে থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে বিজিবি সদস্যরা রাস্তার উপর উপর্যপুরি লাঠিপেটা করে আহত করেন।পরে তাদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে মেহেরপুর ২৫০ সয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
রুবেল আহমেদ ও ইয়াজ আহমেদ জানান, শনিবার বিকালের দিকে আমরা বাজিতপুর মাঠে আমাদের নিজের জমি দেখতে যাওয়ার যাচ্ছিলাম। বাজিতপুর ক্যাম্পের সামনে পৌছানো মাত্র একজন বিজিবি সদস্য আমাদের গন্তব্য কোথায় জানতে চান। মাঠের জমি দেখতে যাচ্ছি বলার সাথে সাথে ওই বিজিবি সদস্য আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। অন্য সদস্যকে লাঠি আনতে বলেন। সে লাঠি এনে আমাদের বিনা কইফিয়তে আমাদের বেধড়ক পেটাতে থাকে।আমরা এর সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষী বিজিবি সদস্যদের বিচার চাই।
এঘটনার জের ধরে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রামবাসি বিজিবির বিপক্ষে ফুঁসে ওঠেন। এবং বিজিবি ক্যাম্প ঘেরাও করার শিদ্ধান্ত নেন। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিয়ে বিজিবির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে মিমাংসা করার আশ্বাস দিলে গ্রামবাসি শান্ত হন।
চুয়াডাঙ্গা, ৬ বিজিবি’র অধিনায়ক লে: কর্ণেল মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান জানান, বাজিতপুর বুড়িপোঁতা সীমান্ত এলাকাগুলোতে মাদক বিক্রি ও মাদক খোরদের আনা গোনা আছে। যে কারণে বিজিবি সদস্যরা অপরিচিত লোকজনকে নিয়মিত চেকিং করে থাকেন। ওই সময়ে বিজিবি সদস্যরা অন্যান্যদের মতই তাদের চেকিং করেছিলেন। তারা বলেছেন, আমরা বুড়িপোতা গ্রামের লোক। ওপাশে একটি পানের দোকান আছে। ওখানে পান খেতে যাবো। বাঁধা দিলে তারা জোর করে সেখানে যেতে চাই। পরে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে ধাক্কা-ধাক্কি হয়েছে। তারপরেও গ্রামবাসি যদি কোনো কিছু বলতে চাই আমরা তাদের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। তবে বুড়িপোঁতা গ্রামের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন সব সময়ই বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। হিরোইনসহ আটক হওয়ার পরেও তাকে ভাল মানুষ পরিচয় দিয়ে ছাড়ানোর জন্য ক্যাম্পে এসে তদবির করে বলেও জানান তিনি।