মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার এজেন্ট বিক্রয়ের সময় হাতে নাতে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে সজিব খান (২৫) নামের অনলাইন জুয়ার আরেক হোতা।
গতকাল শনিবার বিকালে মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। আটক সজিব খান মুজিবনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের শহিদুল খানের ছেলে। ডিবি পুলিশের হাতে প্রথম আটক অনলাইন জুয়ার এজেন্ট বদরুদ্দোজা রয়েলের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো সে।
জানা গেছে, শ্যামপুর এলাকার সালাহউদ্দিন নামের এক সাবেক সেনাবাহিনীর সদস্যকে অনলাইন জুয়া মেলবেট এর এজেন্ট বিক্রি করবে বলে ১৬ লাখ টাকা নেয় সজিব খান। গতকাল শনিবার বিকালে এজেন্ট সিম বিক্রি করার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেহেরপুর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম সেখানে অভিযান চালিয়ে সজিব খান কে আটক করে। এসময় সজিব খানের কাছে থাকা মোবাইল ফোন সার্চ করে জানা যায়, ফরিদপুরের নগরকান্দা বাজারের ঠিকানা ব্যবহার করে সেখান থেকে ‘মায়ের দোয়া টেলিকম’ নামে নগদ এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে মেলবেট জুয়ার এজেন্ট হিসেবে জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তার সাথে অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করেন গোপালপুর গ্রামের শহিদুল শাহর ছেলে নাসির শাহ। সম্প্রতি নাসির শাহ মেহেরপুরের এক সাংবাদিককে কয়েক লক্ষ টাকা দিয়েছেন যাতে তার সংবাদ প্রকাশ না করা হয়, এমন তথ্য মেহেরপুর প্রতিদিনের কাছে রয়েছে।
গত ২৪ আগষ্ট ডিবি পুলিশ প্রথম গোপালপুরে অভিযান চালিয়ে বদরুদ্দোজা রয়েল কে আটক করে। রয়েল তার স্বীকারোক্তিতে ১৫ জনের নাম বললেও তার সহযোগী সজিব খান ও নাসির শাহ এর নাম স্বীকার করেনি। যাতে করে সজিব ও নাসির ধরাছোয়ার বাইরে থেকে জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। রয়েলের কাছে থেকে উদ্ধারকৃত আলামত থেকে তদন্ত করে ডিবি পুলিশের সজিব খানের সম্পৃক্ততা পায় এবং তাকে নজরদারীতে রাখে। অবশেষে সদর উপজেলার শ্যামপুর এলাকা থেকে তাকে হাতে নাতে এজেন্ট সিমসহ আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তবে পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেয়ে নাসির আগে থেকে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলা থেকে দুই শতাধিক এজেন্ট অনলাইন জুয়া সাইটের মাধ্যমে রাশিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছেন প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। আর এই অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত মেহেরপুরের সরকার দলীয় কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, মুজিবনগরের প্রভাবশালী এক নেতা, সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন শীর্ষ নেতা, স্কুল ও কলেজের কয়েকজন শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেনীর প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তি।
কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং কয়েকজন সাংবাদিক এসকল জুয়াড়ুদের কাছে থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন। মেহেরপুর প্রতিদিনে ‘অনলাইন জুয়ার দূর্গ’ নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পর থেকে রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকদের মাসোহারা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ওই সকল নেতা ও সাংবাদিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রতিদিনই কোটি টাকা পাচার হচ্ছে দেশের বাহিরে। এতে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি বিপথে যাচ্ছেন তরুণ ও যুবকরা।
মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে অনলাইন জুয়া নিয়ে অনুসন্ধান এবং কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে অনলাইন জুয়া নিয়ে উঠে এসেছে নানা তথ্য। সম্প্রতি সাইবার ক্রাইম বিভাগ একটি মামলা করেছেন।
মেহেরপুর অনলাইন জুয়ার দূর্গে হানা দিয়ে মেহেরপুরের ডিবি পুলিশ, মুজিবনগর থানা পুলিশ ও সাইবার নিরাপত্তা বিভাগ কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে ১২ জন অনলাইন জুয়ার হোতাকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে মেহেরপুর প্রতিদিন ধারাবাহিক অনুসন্ধানি প্রতিদেবন প্রকাশ করায় অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতরা ভিন্ন কৌশল বেছে নিয়েছেন। অনেকে গা ঢাকা দিয়ে জেলার বাইরে গিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং জেলার বাইরে থেকে বিকাশ, রকেট, নগদসহ অন্যান্য কোম্পানীর এজেন্ট সংগ্রহ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রেফতার এড়ানোর জন্য। (চলবে..)
অনলাইন জুয়ার সকল সংবাদ দেখতে পড়ুন নিচের লিংকগুলো
মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার দূর্গে হানা
মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার মাস্টারমাইণ্ড প্রসেনজিৎ সহযোগীসহ আটক
মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার আরো চার হোতা আটক
মেহেরপুরের অনলাইন জুয়ার শীর্ষ এজেন্ট শামিম অধরা
ধরাছোঁয়ার বাইরে অনলাইন জুয়ার অন্যতম চার হোতা মুকুল-জামান-নুরুল-মাদার
মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার আরও এক মাস্টার এজেন্ট পলাশ
অনলাইন জুয়ার এজেন্ট শামিমকে নিম্ম আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
অনলাইন জুয়ার শীর্ষ এজেন্ট শামিম কারাগারে
অনলাইন জুয়ার খপ্পরে মেহেরপুরের অর্ধশত তরুণ
মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার আরেক এজেন্ট সাদ্দাম আটক