মেহেরপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টেগেশন সেল যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এবার অনলাইন জুয়ার মাষ্টারমাইন্ড কোমরপুর গ্রামের মধু হালদারের ছেলে প্রসেনজিৎ হালদার (২৫) ও চা বিক্রেতা নজরুল ইসলামের ছেলে সুমন আলী (২৪) কে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছে থেকে দুটি সিম ও নগদ দুই লাখ এক হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ওসি সাইফুল আলম ও সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের কর্মকর্তা এসআই মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি বিরাট ইউনিট সোমবার দিনব্যাপী কোমরপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে এই দুই অনলাইন জুয়াড়িকে গ্রেফতার করে।
ডিবি পুলিশের ওসি সাইফুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অনলাইন জুয়ার মাষ্টার মাইন্ড প্রসেনজিৎ হালদারের দুটি সাইট সাইট আছে। এই সাইট চালান সুমন আলী। দুজনকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, দুটি সাইটের একটিতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা এবং অপরটি থেকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার জুয়া খেলা হয়ে থাকে। সাইট দুটির মালিক এলাকার অনলাইন জুয়ার মষ্টিার মাইন্ড প্রসেনজিৎ হালদার। এছাড়া তাদের সাথে আরো কয়েকজন জুয়াড়ি যুক্ত আছেন বলে জানিয়েছেন এই দুই জুয়াড়ি।
গত ২৪ আগস্ট বদরুদ্দোজা ওরফে রয়েল আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সাইবার ক্রাইমকে জানিয়েছে, মেহেরপুর জেলাসহ বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার (ওয়ানএক্সবেট) এর মাষ্টার এজেন্ট কোমরপুর গ্রামের কোমরপুর গ্রামের সোনা গাইনের ছেলে মাহফুজুর রহমান ওরফে নবাব। এছাড়া এই সাইটের নবাবের নেতৃত্বে রয়েছে অনলাইন জুয়ার সাথে রয়েছে আরো ১৫ জন সাব এজেন্ট।
যাদের নামে মামলাও হয়েছে। তারা হলেন, গোপালপুর গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে শিশির বিশ্বাস, বিল্লাল গড়াইয়ের ছেলে দিপু, কোমরপুর গ্রামের বিলু সর্দারের ছেলে শামীম, একই গ্রামের আনারুল মিয়ার ছেলে রুবেল, টঙ্গীর শরিফের ছেলে পলাশ, মুজিবনগরের শিবপুরের মৃত শাহাজুলের ছেলে বিজয়, একই গ্রামের জিনারুলের ছেলে লিপু গাজী, মোনাখালী গ্রামের আজহারুলের ছেলে মিলন, সাইদুর রহমান খোকনের ছেলে সাগর, কোমরপুর গ্রামের বাশার বিশ্বাসের ছেলে সজীব, ভাটপাড়া গ্রামের মৃত সিরাজ মণ্ডলের ছেলে বাবু, মেহেরপুর শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার বখতিয়ার মাস্টারের ছেলে রুবেল, গাংনীর গাড়াডোব গ্রামের মৃত কিয়াম উদ্দিনের ছেলে আনোয়ার। এসকল অনলাইন এজেন্টরা এখন এলাকাছাড়া হয়ে পড়েছেন। কোনভাবেই তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
পড়ুন মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার দূর্গে হানা
গত ১৩ সেপ্টেম্বর মেহেরপুর প্রতিদিনে প্রকাশিত ‘অনলাইন জুয়ার দূর্গে হানা’ শিরোনামে সংবাদে উঠে এসেছিলো মেহেরপুর জেলা থেকে দুই শতাধিক এজেন্ট অনলাইন জুয়া সাইটের মাধ্যমে প্রতি মাসে রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করছেন প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। তবে বিস্তারিত অনুসন্ধানে এ চিত্র আরো ভয়াবহ বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। গতকাল আটক দুজনের কাছে থেকে দুটি সিম (চ্যানেল) থেকে প্রতিদিন ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে। তাদেরকে কারা পৃষ্ঠপোষকতা করে এসকল তথ্যও উঠে এসেছে। এদিকে অনলাইন জুয়ার সংবাদ প্রকাশের পর থেকে পৃষ্ঠপোষকরা যাতে জড়িয়ে না পড়েন তারা বিভিন্ন মাধ্যমে সমঝোতা করার প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
পড়ুন অনলাইন জুয়ার খপ্পরে মেহেরপুরের অর্ধশত তরুণ
জানা গেছে, গত ২৪ আগস্ট অনলাইন জুয়ার এজেন্ট বদরুদ্দোজা রয়েলকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ আরো ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে যারা অনলাইন জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। এর কিছুদিন পর ১১ সেপ্টেম্বর পুলিশ ওই ১৬ জনের মধ্যে শামিম নামের এক এজেন্টের পরিচালনাকারী নিমাই হালদার নামের একজনকে আটক করে। তবে রয়েলকে আটকের প্রায় এক মাস হতে চললেই বাকি ১৬ এজেন্টের কেউ গ্রেফতার হয়নি। ফলে অনলাইন জুয়ার রমরমা ব্যবসা এখনো তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে থেকে চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রয়েল নামের ওই অনলাইন জুয়াড়িকে গ্রেফতারের পর দায়ের করা হয় মামলা। মামলাটি তদন্তের একপর্যায়ে এই চক্রের সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য, তাদের ২৩০টি জুয়ার সাইটের মালিক ও তাদের এজেন্ট সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া গেছে।
মেহেরপুর ডিবি পুলিশের অভিযানের পাশাপাশি মেহেরপুর প্রতিদিনের একটি টিম অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। আগামি পর্বে এমন কিছু অনলাইন জুয়ার এজেন্টদের সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ হবে যারা ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছেন।
এ সংক্রান্ত আরো মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত তিন যুবক আটক