মেহেরপুরে ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যেমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। সরকারি মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারে মূল্য বেশি থাকায় সরকারি গুদামে মিলার ও কৃষকরা ধান-চাল সরবরাহে অনিহা দেখাচ্ছেন। এ বিষয়ে নোটিশ দিয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পুনরায় সময় বাড়ানো হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা দেখছে না খাদ্য অফিস। এছাড়াও লটারিতে নাম ওঠা কৃষক ব্যাতিত তালিকা ভুক্ত সকল কৃষক ধান বিক্রি করতে পারবে এমন প্রস্তাবেও সাড়া নেই।
এ বছর মেহেরপুর জেলায় চাল ক্রয়ের সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৪শ ৩৮ মেট্রিকটন চাল। তবে এখনো পর্যন্ত এর শিকেভাগও অর্জিত হয়নি। জেলায় চাল সরবরাহের জন্য সরকারি লাইসেন্সভুক্ত ১৯জন মিলার রয়েছেন। তারাই মূলত প্রতি বছর এই সরকারি চাল সরবরাহ করে থাকেন। তবে এ বছর নোটিশ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। খোলা বাজারে চালের মূল্য ৪০-৪২ টাকা কিন্তু সরকারি নির্ধারিত মূল্য ৩৬ টাকা। প্রতি কেজি চালে প্রায় ৪-৬ টাকা লোকসান হচ্ছে বলে চাল সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি করেছে বেশ কিছু মিলার। তবে চাল সরবারাহে ব্যর্থ হলে মিলারদের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে বলে জানিয়েছে খাদ্য অফিস।
এদের মধ্যে লোমান রাইস মিলের মালিক আলী কদর বলেন, আমার বরাদ্দ ছিল ১শ ২৩ টন চাল। এখনো পর্যন্ত কোন চাল সরবরাহ করতে পারিনি। খোলা বাজারে চালের দাম অনেক বেশি। এছাড়াও ধানও কিনতে হচ্ছে প্রায় ২৬ টাকা কেজি দরে। তাই এবার চাল সরবরাহে বিরাট লোকসানের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তবে পুন:নির্ধারিত তারিখের মধ্যেই সব চাল সরবরাহ করে দেবো।
খুশি রাইচ মিলের মালিক আজিরুল ইসলাম বলেন, আমার বরাদ্দ ছিল ৮২ মেট্রিকটন। ইতিমধ্যে প্রায় ১০টন মতো সরবরাহ করতে পেরেছি। বাজার মূল্য বেশি দাবি করে তিনি বলেন, লোকসান হলেও লাইসেন্স টিকিয়ে রাখতে বরাদ্দের সব চাল সরবরাহ করবো।
আব্বাস রাইস মিলের মালিক আব্বাস আলী বলেন, আমার বরাদ্দ ৭০ মেট্রিকটন। এখনো পর্যন্ত কোন চাল দিতে পারিনি। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে ১০-১৫ টন দিবো। বাকি গুলো নির্ধারিত তারিখের মধ্যেই দেওয়ার চেষ্টা করবো।
বিগত বছর গুলোতে ধান বিক্রির জন্য কৃষকের হুড়োহুড়ি দেখা গেলেও এবছরে এর চিত্র ভিন্ন। ৩ হাজার ১শ ৩০ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের লক্ষ্য মাত্রা থাকলেও অর্জিত হয়েছে মাত্র ১শ ২৭ মেট্রিকটন। প্রতি বছর লটারির মাধ্যমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হয়। এবারও তাইই করা হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ায় লটারি বাদে তালিকাভুক্ত সকল কৃষক ধান বিক্রি করতে পারবে বলা হলেও তাতেও তেমন সাড়া নেই।
সরকারের কাছে ধান বিক্রি কেন করতে রাজি হচ্ছে না এমন প্রশ্নে কয়েকজন কৃষক জানান, সরকারের দাম খোলা বাজারের দাম প্রায় সমান। তাই ঝামেলাই না গিয়ে বাড়ির কাছে আড়ৎদারের মাধ্যমে বিক্রি করছি।
জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সকল মিলারদের চাল সরবরাহের জন্য নোটিশ দিয়েছি। তারা অবগত করেছে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাল সরবরাহ করবেন। যদি এতে ব্যর্থ হয় তবে মিলারদের লইলেন্স কালো তালিকাভুক্ত হবে। একই সাথে লাইসেন্স বাতিলও হতে পারে। খাদ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ব্যবহত হচ্ছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারের মূল্য বেশি তাই এমনটি হচ্ছে। তবে যেকোন পরিস্থিতিতে সরকারি চাহিদা পূরণ করতে আমরা সক্ষম হবো।