মেহেরপুরে চাঞ্চল্যকর আটলান্টিকা হোটেল কাণ্ড মামলায় বাংলািভশেনর বিশেষ প্রতিনিধি, দেশ রুপান্তর ও বিডিনিউজ২৪ এর মেহেরপুর প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন ওরফে তুহিন আরন্যকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার বিকাল ৩ টার দিকে মেহেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে জামিন আবেদন করে আত্মসমর্পণ করলে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। তুহিন আরন্য এর আগে প্রথম আলো, এনটিভি ও নিউজ ২৪ চ্যানেলের মেহেরপুর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মেহেরপুর প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
মামলায় আসামির পক্ষে মারুফ আহমেদ বিজনের নেতৃত্বে একদল আইনজীবী এবং সরকারি পক্ষে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক কৌসুলির দায়িত্ব পালন করেন।
এর আগে একই আদালত একই মামলায় ডিবিসির মেহেরপুর প্রতিনিধি আবু আক্তার করণ, দেশটিভির প্রতিনিধি রেক্সোনা আরা, ও কথিত সমাজকর্মী নিলুফার ইয়াসমিন রুপাকেও জেল হাজতে পাঠায় আদালত।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাভিশনের সাংবাদিক তুহিন আরন্য, ডিবিসি চ্যানেলের সাংবাদিক আবু আক্তার করণ, দেশ টিভির সাংবাদিক রেক্সোনা আরা, ও নিলুফার ইয়াসমিন রুপাসহ ১৭ আসামিকে অভিযুক্ত করে হোটেল আটলান্টিকা কাণ্ড মামলায় পুলিশ আদালতে চার্জশিট দেয়।
এরপর তারা উচ্চ আদালতে চার্জশিটের তথ্য গোপন করে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিনে ছিলেন। উচ্চ আদালতের জামিনাদেশ শেষ হলে বৃহস্পতিবার ওই তিনজন এবং মঙ্গলবার তুহিন আরন্যকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন মেহেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল মেহেরপুরের চার সাংবাদিকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪১৭/৩৮৫/৩৮৬/৫০৬ ধারাসহ ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮(১),৮(২), ৮(৩), ৮(৪) ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমানিত হওয়ায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন- বাংলাভিশনের মেহেরপুর প্রতিনিধি মুস্তাফিজুর রহমান ওরফে তুহিন আরন্য, ডিবিসি টেলিভিশনের মেহেরপুর প্রতিনিধি আবু আক্তার করন, দেশ টিভির প্রতিনিধি রোকসানা আরা, এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি মিজানুর রহমান জনি, কথিত সাংবাদিক নাজনিন খান প্রিয়া, ছন্দা খাতুন, আটলান্টিক হোটেল মালিক মতিয়ার রহমান, তার ছেলে মামুন জোয়ার্দার, আব্দুস সালাম, হাসিবুল হক জয়, নেহাল আল মুকিত, শাহাজান আলী, মোছা. রুপা, নুসরাত, বর্ষা, সুমন রহমান বিমান ও বিপাশা।
এদের মধ্যে মিজানুর রহমান জনি, নাজনিন খান প্রিয়া, ছন্দা খাতুন, মতিয়ার রহমান, মামুন জোয়ার্দার, হাসিবুল হক জয়, শাহাজান আলী, নেহাল আল মুকিত পুলিশের হাতে আটক হয়ে হাজতবাস করেছেন। বর্তমানের তারা জামিনে আছেন। বাকিরা উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিনে ছিলেন। এদের মধ্যে চারজন পৃথক দিনে মেহেরপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
পুলিশের চার্জশিট থেকে জানা যায়, একটি নারী চক্র গড়ে তুলে মেহেরপুর শহরের আভিজাত শ্রেনীর হোটেল আটলান্টিকার মালিক মতিয়ার রহমান ও তার ছেলে মামুন বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা বা অভিজাত শ্রেনীর মানুষকে সুন্দরী নারী দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তা ভিডিও ধারণ করেন। এবং সেই ভিডিও দিয়ে ব্লাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল। এই চক্রে বিভিন্ন এলাকার প্রায় ডজ্জনখানেক সুন্দরী নারী জড়িত ছিলো। তাদের পৃষ্ঠপোষক করতো অভিযুক্ত মেহেরপুরের চার সাংবাদিকও।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ নভেম্বর মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের মনোয়ার হোসেন নামের এক এনজিও কর্মী সদর থানায় নারী চক্রের প্রধান হোতা প্রিয়া খানকে আসামি করে দণ্ডবিধির ৪১৭/৩৮৫/৩৮৬/৫০৬ ধারায় একটি মামলা করেন।