মেহেরপুর ভৈরব নদ পুন:খনন ২য় পর্যায়ের প্রকল্পের আওতায় ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত জমির মালিকদের চাপাকান্নায় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সৌন্দর্য বর্ধণের লক্ষে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সহগলপুর থেকে সদর উপজেলা হয়ে মুজিবনগরের কিছু অংশ পর্যন্তÍ ভৈরব নদের দুই পাশে ১৬.৮ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যে কাজটি পেয়েছে কুষ্টিয়ার সৈকত এন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তাদের কাজটি দেখভাল করছেন মেহেরপুরের আর আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাহিনুরজামান পোলেনসহ চারজনের একটি গ্রুপ।
গতকাল সোমবার ভৈরব নদের ওয়াকওয়ের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা নিয়ে নদের তীরবর্তি মানুষের চাপা কান্না। না পারছে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে, না পারছে জমি হারানোর ব্যথা সইতে। যাদবপুর গ্রামের প্রায় ২০ থেকে ২৫ জনের মালিকানা জমি ওয়াকওয়ের জন্য হারাতে হচ্ছে। তারা কোথাও কোন সদুত্তর পাচ্ছেন না।
অপরদিকে, ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে দেখা গেছে, গাথুনিতে লোকাল বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। যা ফিলিংয়ের কাজে ব্যবহার করার কথা। ১:৪ অনুপাতে সিমেন্ট ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও স্থানীয়রা জানান, ১:১০ ভাগেও সিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে না। ফলে নির্মাণকাজ স্থায়ী হবে না বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। গাংনী উপজেলার সহগলপুর থেকে সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া পর্যন্ত যে অংশে ওয়াকওয়ে করা হয়েছে তানিয়েও স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। ওয়াকওয়ে কোন লেভেল করা হয়নি। উন্নয়নের নামে শুধু সরকারের টাকা নষ্ট হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের ভয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। বলেও কিছু হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
যাদবপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, তিনি ২০১৩ সালে ১৮ কাঠা জমি কিনেছেন। যা সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত আছে। ওই জমিতে বিভিন্ন ফলের বাগান ছিলো। ওয়াকওয়ে করার জন্য আমার বাগান কেটে জমি নিয়ে নেওয়া হয়েছে। জমি নেওয়ার আগে কোন ধরণের নোটিশও দেওয়া হয়নি। কিছু বলতে গেলে পোলেন মাস্তান বাজে ভাষায় গালিগালাজ করে এবং হুমকি দেয়।
একই গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, তার ১একর ১৩ শতকসহ ৭ ভাইয়ের ৩ একর ৩২ শতক জমি ওয়াকওয়ের জন্য নিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওয়াকওয়ের কাজ শুরুর আগে জেলা প্রশাসকের কাছে কাজ বন্ধ রাখার জন্য আবেদন করেও কোন ফল পাননি বলে অভিযোগ করেন।
তিনি আরো বলেন, ভৈরবের উপর দিয়ে রাস্তা করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড, কাজ করার আগে জরিপ করলো না কেন। পরে একদিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, ইউএনও, এসি ল্যাণ্ড এসে ঠিকাদারদের বললেন ওয়াকওয়েটা একটু নিচ দিয়ে করতে, কিন্তু ঠিকাদাররা কথা না শুনে উপরদিয়ে করে আমাদের জমি দখল করে নিয়েছে। কিছু বলতে গেলে ঠিকাদার পোলেনসহ তার লোকজন তেড়ে তেড়ে মারতে আসে।
মেহেরপুর শহরে ঘাটপাড়ার রাফিউল ইসলাম বলেন, তাদের সাড়ে তিন বিঘা জমির মধ্যে প্রায় এক বিঘা জমি ওয়াকওয়ের জন্য নিয়ে নেওয়া হয়েছে। পৌর এলাকার জমি অনেক টাকা দিয়ে আমাদের বাপ-দাদারা কিনেছেন। এখন সেই জমি উন্নয়নের নামে ওয়াকওয়ের জন্য দিয়ে দিতে হচ্ছে। এভাবে অনেকের জমি এতে চলে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থরা পৌর মেয়রের কাছে আবেদন করলে মেয়রের হস্তক্ষেপে শহরের অংশে কাজ বন্ধ রয়েছে।
গাংনী উপজেলার সহগলপুর গ্রামের নাসিম আহমেদ বলেন, ওয়াকওয়ে খুব বাজেভাবে কাজ করা হয়েছে। রাস্তার কোন লেভেল করা হয়নি। ফলে খুব দ্রুত ওই রাস্তা নষ্ট হয়ে যাবে। উন্নয়নের নামে সরকারের টাকা নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সৈকত এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন ওয়াকওয়ের কোন কাজ চলছে বলে স্বীকার করতে চাচ্ছিলেন না। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের কথা বললে তিনি জানান, মামনু, পোলেনসহ কয়েকজন দেখা শুনা করছেন। অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনে কথা না সরাসরি দেখা করে কথা জানাবেন বলে জানান।
মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান প্রধান বলেন, পানি আইন ২০১৩ অনুযায়ী নদের কিনারা থেকে ১০ মিটার (৩৩ ফুট) পর্যন্ত জমি নদের অর্থাৎ খাস খতিয়ান হয়ে যাবে। ওই জমি অন্য যে কারো নামে, এমনি যে কোন রেকর্ড থাকলেও সেটি নদী বা নদের মালিকানায় আসবে। তবে ভৈরব নদের পাড়ে যেগুলো এমন আছে সেগুলো এতদিনে সংশোধন হওয়া দরকার ছিলো।
ওয়াকওয়ে নির্মানের বিষয়ে তিনি বলেন, সিডিউল অনুযায়ী যে মানের নির্মাণসামগ্রী এবং যেভাবে নির্মান করার কথা বলা হয়েছে সেভাবেই কাজ দেখে নেওয়া হবে। এর ব্যত্যয় মেনে নেওয়া হবে না।