মেহেরপুরে জেলখানা পাড়া ও শিশুপাড়ার চার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ ঘরের ভিতরে চলে গেছে পানি। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সীমানা জটিলতায় কেউই দায় নিচ্ছে জলাবদ্ধতার।
মেহেরপুর পৌরসভা ও আমদহ ইউনিয়নের মধ্যে এইদুই পাড়াকে কেন্দ্র করে চলছে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ। জেলখানা পাড়ার একই পরিবারে দুইজন সদস্য ভোটার হচ্ছেন মেহেরপুর পৌরসভার ও অপরদুইজন হচ্ছে আমদহ ইউনিয়নের। ট্যাক্স নেওয়ার সময় পৌরসভা ও আমদহ ইউনিয়ন দুইপাড়ার বাসিন্দাদের নোটিশ পাঠালেও উন্নয়ন কাজে কারই মাথা ব্যথা নেই।
গত একসপ্তাহ ধরে ভারি বর্ষণে পানিবন্দি হয়ে দিনপার করছে প্রায় ৪শ পরিবারের হাজার খানেক মানুষ। মেহেরপুর পৌরসভা ও আমদহ ইউনিয়ন পরিষদকে বিষয়টি জানালেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। এদিকে দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে পৌরসভা ও আমদহ ইউনিয়ন পরিষদের উপর ক্ষোভ জন্মেছে। কেউ কেউ বলছে মেহেরপুরে থেকেও নিজেকে রহিঙ্গা মনে হচ্ছে। জেলপাড়া ও শিশুপাড়ার বাসিন্দা নিজেকে দুর্ভাগা মনে করছেন অনেকেই।
শিশুপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল বাকি জানান, জলাবদ্ধতা চৈত্র মাস থেকে এই জলবদ্ধতা কতদিন থাকবে এর কোন ঠিক নেই জলাবদ্ধতায় ঘরবাড়ি পায়খানা টিউবওয়েল রান্না করার ক্ষমতা নাই সবাইতো আর গ্যাসের চুলায় রান্না করতে পারে না আরো সমস্যা হলো মেহেরপুর পৌরসভার লাইক পানিসহ অন্যান্য সব প্রয়োজনীয় জিনিসের সুবিধা আমরা পাচ্ছি অথচ একই বাড়ির চারজন লোক হলে দুইটা ভোট আমদহ ইউনিয়ন এর দুইটা ভোট পৌরসভার। এটা কিভাবে হলো আমরা তা জানি না। যদি জমি ভাগ হয় তবে জমির আইল হবে কিন্তু একই পরিবারের চার জন কিভাবে দুই দিকে বিভক্ত হয়। যার জন্য আমাদের বর্তমানে কোন অভিভাবক নাই। ।
এখানে একটি মসজিদ আছে শত শত মানুষ নামাজ পড়তে আসে কিন্তু এই জলাবদ্ধতার কারণে অনেক লোক নামাজ পড়তে আসতে পারে না। মেহেরপুর প্রশাসনের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ আমাদের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা সেটা করে দেয়া হোক। আর একবাড়ির চারটা ভোট দুইটা একদিকে আর দুইটা অপরদিকে এর সুব্যবস্থা আমরা চাই। আমরা কিসের ভিতরে আছি সেটা জানতে চাই৷ সারা বিশ্বে যে করো না মহামারি শুরু হয়েছে তার থেকেও মনে হয় এই জলাবদ্ধতায় ভুগছি।
জেলখানা পাড়ার গৃহিণী রাহাতুন খাতুন জানান, আমরা পৌরসভার ভোটার ছিলাম কিন্তু এই বছর থেকে আমদহ ইউনিয়ন আমাদের কাছ থেকে টেক্স আদায় করে। আমদহ ইউনিয়ন ট্যাক্স আদায় কেন করছে এটা জানতে চাইলে বলে আমরা এখন থেকে আমদহ ইউনিয়ন এর ভিতরে। আমদাহ ইউনিয়নে এই জলাবদ্ধতা নিয়ে বলতে গেলে তিনি বলেন এই বিষয়টা নিয়ে দেখছেন। কিন্তু এক সপ্তাহ হয়ে গেল আমাদের দেখাশোনা করছে না আপনারা ধরতে পারেন আমরা এখন রোহিঙ্গার মত বসবাস করছি। আমাদের পৌরসভা দেখছে না আমরা ইউনিয়ন ও দেখছে না আমরা এতে খুব সমস্যার ভিতরে আছি।
আমরা এই জলবদ্ধতা ভোগ করছি প্রায় দুই মাস ধরে।জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের সমস্যা হয়। হাঁটু পর্যন্ত পানি বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ছে। বাইরে কোন কাজ করতে পারছি না। গরু, ছাগল, হাঁস- মুরগি সব পানির ভিতরে আছে। আমাদের ব্যবস্থা পৌরসভার কিংবা আমদাহ ইউনিয়ন কেউ নিচ্ছে না। এই জলবদ্ধতা শুধু এই বছরই না অন্যান্য বছরেও কিন্তু এই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তার তুলনায় এই বছরে ভারি বর্ষণের কারণে বেশি হয়েছে। জেলখানা হওয়াতে পানি কোথাও যেতে পারে না তাই আমরা প্রতিবছরই ডুবে যাচ্ছি।
জেলখানা পাড়ার অপর এক বাসিন্দা রহিমা খাতুন জানান আমার বাড়ির ভিতরে ও সাগর পানি। প্রতিদিনই ঢুকছে দুই একটা সাপ কিংবা ছোটখাটো বিচ্ছু। ভয়ে আমরা বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারছি না। খুব কষ্টের ভিতর আছি আমরা।
আমরা জানি না পৌরসভা না আমদহ ইউনিয়ন এর ভিতরে আছি। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার স্বামী নাই কোন ছেলে নাই দুই মেয়ে খুব অসহায়ের মত পড়ে আছি। আমরা কিছু চাইনা শুধু একটা ড্রেন হলেই আমরা কর্ম করে খেতে পারব।
একই পাড়ার কাঠমিস্ত্রি সোহাগ জানান, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ পৌরসভার ভিতর ছিলাম এখন আমরা পৌরসভা কি আমদহ এর ভিতর ঠিক জানিনা আমরা যার অন্তর্গত হই না কেন কোন ইউনিয়ন বা পৌরসভা কোন সময় আসে না আমাদের কাছে। আমরা বাড়িতে এই করানোর সময় কি করে জীবন যাপন করছি তা কেউ দেখেনা। তাতে কোন সমস্যা নাই।
আমাদের এই জলাবদ্ধতার কারণে পোকামাকড় কে বেশি ভয় করতে হচ্ছে আবার একদিক দিয়ে করোনাভাইরাস অপর দিকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে, মশা, যা থেকে আমাদের ডেঙ্গু হতে পারে, এবং ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ডায়রিয়ার ভয় আছে। তাই আমাদের এই সমস্যাটি আপনাদের গণমাধ্যমের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নজরে যেন আসে।
কিছুদিন আগে মেহেরপুর জেলখানার পাশ দিয়ে একটি রাস্তা করে দিয়েছে আমদহ ইউনিয়ন পরিষদ। যেখানে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। যদি করত তবে আমরা এই ভোগান্তিতে পারতাম না।
আমদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধ ওই এলাকায় ড্রেণ নির্মান করে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বর্ষা মৌসুম কেটে গেলে আমরা সে ব্যবস্থা করবো।
এ বিষয়ে মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, ঐ এলাকার মানুষজন পানিবন্দি হয়ে আছে এ খাবর আমাকে কেউ জানাইনি। যদি পৌরসভার কোন এলাকা যদি জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয় তবে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
মেপ্র/এমএফআর