পাটের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, খাল-বীল ভরাট, অনাবৃষ্টি, শ্রমিক সংকট এমন নানা প্রতিকুলতায় মেহেরপুর জেলায় প্রতি বছরেই কমেছে পাটের আবাদ। পরিকল্পনা ও সরকারি পৃষ্টপোষকতার অভাবে বারবার লোকসানের মুখে পড়ছে কৃষক। যে কারনে পাটের পরিবর্তে জেলার কৃষকরা এখন ঝুঁকছেন সব্জী চাষে।
কৃষি বিভাগ বলছে, পাটচাষে আগ্রহী করার জন্য চাষিদেরকে প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিকল্প পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বছরে মেহেরপুর জেলায় পাট চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে। অথচ, পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২২ হাজার হেক্টও জমিতে। এই বছরে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৩৭০ হেক্টর কম চাষ হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানান জেলায় জেআরও ৫২৪, বি জে আর আই তোষাপাট-৮, ভারতীয় কৃষি কল্যাণ, মহারাষ্ট্র ও চাকা জাতের পাট আবাদ করে থাকেন চাষীরা।
গাংনীর চৌগাছা গ্রামের আমিরুল ইসলাম অল্ডাম বলেন, “আমি নিয়মিত পাট চাষ করতাম। প্রায় ৮/১০ বছর হলো আর পাট চাষ করিনি। তিনি বলেন, পাট চাষে অধিক পরিশ্রম, পাট পঁচানো পানি আরে শ্রমিকের অভাব। তারপরেও ন্যায্য মুল্য পাওয়া যায়না। পাটের পরিবর্তে আমি বিভিন্ন ধরনের সব্জী আবাদ করে থাকি”।
সদর উপজেলার কালিগাংনী গ্রামের হারেস উদ্দীন বলেন, “প্রতি বছর আমি ৫/৬ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করি। মাঠে পাটের ফলন ভাল হলেও পাট চাষীরা নানা সমস্যায় ভোগেন। বিগত বছরগুলিতে দীর্ঘ অনাবৃষ্টি থাকার কারনে পুকুর, খাল বীল ও নালা গুলোতে পানি থাকেনা। কৃষকরা পাট জাগ দেওয়ার সমস্যায় ভোগেন। পাট জাগ দেয়ার মতো পানির ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে পুকুর ভাড়া করে সেখানে পানি দিয়ে পাট জাগ দেন। তাতে খরচ বাড়ে অনেক। আবার অনেকেই জমিতেই বাঁধ তৈরী করে পানি জমিয়ে কাঁদা মাটি দিয়ে পাট জাগ দেন। ফলে পাটের মান নষ্ট হওয়ায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন কৃষক”।
মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর গ্রামের আবুল হাসেম জানান, চলতি বছরে আমার ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ আছে। গত বছরে আমি ৭ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। পাট জাগ দেওয়া ও শ্রমিকের অভাবে হিমসিম খেতে হয়েছিল। তাই এই বছর পাট চাষ কমিয়ে এনেছি।
হাড়াভাঙ্গা গ্রামের কৃষক সলেমান ও জাহাঙ্গীর বলেন, পাট পচানোর জন্য কোন উম্মুক্ত জলাশয় না থাকায় চাষীরা পাট চাষ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। খাল বিল সংস্কার ও দখল হয়ে যাওয়া জলাশয় উম্মুক্ত ঘোষণা করার আহবান জানান।
চাষিদের দাবি, হাজা মজা খাল বিল সংস্কার করে পানি প্রবাহ ঠিক রাখলে পাট পচানো সম্ভব। চাষিরা উম্মুক্ত জলাশয়ে পাট জাগ দিতে পারলে পাট চাষ বৃদ্ধি পাবে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার (ডিডি) কৃষিবিদ বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, চলতি মৌসুমে পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। অনাবৃষ্টির কারণে অনেকেই পাট বীজ বপন করতে পারেনি। আর যারা আবাদ করেছেন পানির অভাবে পাটগাছ বাড়েনি। অন্যদিকে পাট পচানো নিয়েও চাষিরা নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। তবুও চাষিদেরকে প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া হচ্ছে পাট চাষে আগ্রহী করে তোলার জন্য। বিকল্প পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও জানালেন এই কর্মকর্তা।