কৃষি নির্ভশীল ও সবজিখ্যাত জেলা মেহেরপুরের কৃষি জমিতে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে জৈব সার ট্রাইকো কম্প্ষ্টো। অতিমাত্রায় রাসায়নিক সারে নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমির উর্বর শক্তি, জনপ্রিয় হচ্ছে ট্রাইকো কম্পোষ্ট।
জেলার কৃষকরা রাসয়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার ট্র্ইাকো কম্পোষ্ট ব্যবহারে একদিকে যেমন ফসল উৎপাদন খরচ কমছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে ফসলের উৎপাদন । মেহেরপুরের কৃষিকে আরও সমৃদ্ধি করতে কৃষকদের নানা প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে উপকরন বিতরণের মাধ্যমে ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদনে সহায়তা করছে বেসরকারি সংস্থা পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি পিএসকেএস। ট্রাইকো কম্পোষ্ট উৎপাদনে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন।
পিএসকেএস এর কৃষি অফিসার মো: জুয়েল বিশ্বাস জানান, মাটির জৈব অংশে বসবাসকারী কোটি কোটি অনুজীবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনুজীব ট্রাইকোডার্মা। এটি মাটিবাহিত একটি উপকারী ছত্রাক যা মাটিতে বসবাসকারী উদ্ভিদেও ক্ষতিকর জীবানু যেমন অন্যান্য ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, নেমাটোড ইত্যাদিকে মেরে ফেলে। এইউপকারী পরজীবী প্রকৃতির সব পঁচনশীল বস্তুকে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলে। এই ট্রাইকোডার্মা ও তার সাথে গবর ও পঁচনশীল বস্তুুর সাথে মিশিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ট্রাইকো কম্পোষ্ট জৈব্য সার।
ট্রাইকো কম্পোষ্ট উৎপাদনকারি গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান,জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ফলে জমিতে আর ভাল ফসল হচ্ছিলনা। বাড়িতে পরিত্যাক্ত জমি না থাকায় জৈব সারের বড়ই অভাব। আবাদে ভাল ফলন না পেয়ে লোকসান গুনতে হয়েছে।পরে স্থানীয় এনজিও পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির কৃষি অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী পচনশীল বস্তুু,খড়,ও গবরের সাথে ট্রাইকোডার্মা পাউডার দিয়ে ট্রাইকো কম্পোষ্ট জৈব সার প্রস্তত করি এবং জমিতে দিয়ে এখন ভাল ফসলের ভাল ফলন হচ্ছে। আমি মোট ১০টি চৌবাচ্চার মাধ্যমে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার তৈরী করছি। আমার আবাদি জমিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে এখন ট্রাইকো কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করছি। আমার জমিতে দিয়েও উদ্বৃত্ত কম্পোষ্ট অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করে প্রতি বছর অন্তত লক্ষাধিক টাকা লাভ করছি। আমি আরও বড় পরিসরে ট্রাইকো কম্পোষ্ট উৎপাদন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ট্রাইকো কম্পোষ্ট উৎপাদনে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি আমাকে নগদ অর্থ,ট্রাইকোডার্মা পাউডার বিনামুল্যে প্রদান করেছে এবং কারিগরি সহায়তা দিয়ে আমাকে সার্বক্ষণিক সহযোগীতা দিচ্ছে।
গাংনীর গাড়াডোব গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম,আব্দুল গণি ও ফজলুল হক বলেন, আমাদের আবাদি জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগের ফলে জমির উর্বরশক্তি একেবারেই নষ্ট হয়ে পড়েছে। জমিকে যতই পরিচর্যা করি তাতে ভাল ফলন পাচ্ছিলাম না। পরে আমাদের ভুর বুঝতে পেরে গত বছর থেকে ট্রাইকো কম্পোষ্ট জৈব সার নিজে র্তৈরী করে তা জমিতে প্রয়োগ করে ভাল উপকার পাচ্ছি। আমাদের সব আবাদি জমিতে এক সময় বছরে দুটি ফসল ফলানো যেত। এখন ওই জমিতে বছরে তিন থেকে চারবার ফসল ফলায়। এতে রাসায়নিক সার অতিমাত্রায় ব্যবহার করে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে গিছে। ফলে ফসলে ফলন বিপর্সয় ঘটছে। আমরাও ট্রাইকো কম্পোষ্ট তৈরী করে এখন নিজের জমিতে জৈব্য সার হিসেবে ট্রাইকো কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করে ভার ফলন পাচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের খাছ থেকে অন্য কৃষকরাও তা কিনে নিয়ে তাদের জমিতে প্রয়োগ কওে উপকৃত হচ্ছে। এক বস্তা ট্রাইকো কম্পোষ্ট সার বিক্রি করছি ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায়। প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকার ট্রাইকো কেম্পাষ্ট বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।
পিএসকেএস এর নির্বাহী পরিচালক মুহা: মোশাররফ হোসেন বলেন, সমন্বিত কৃষি কর্মসুচীর আওতায় গাংনী উপজেলার বিভিন্ন কৃষকদের রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব ট্রাইকো কম্পোষ্ট জমিতে প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অনেকেই ট্রাইকো কম্পোষ্ট উৎপাদনে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন। সেই সাথে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগীতায় কৃষকদের আর্থিক সহায়তা ও বিনামূল্যে ট্রাইকোডার্মা পাউডার দেয়া হয়েছে। উপজেলার শতশত চাষি এখন এই ট্রাইকো কম্পোষ্ট জৈব সার উৎপাদন করে জমিতে ব্যবহার করে ভাল ফসল ফলাচ্ছেন। এবং অন্যান্য কৃষকদের কাছে এ সার বিক্রি করে আর্থিক ভাবেও লাভবান হচ্ছেন।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিধ মো: ইমরান হোসেন বলেন, মেহেরপুর জেলার প্রতিটি জমিই সব ফসল চাষের উপযোগী। এখানকার জমিতে কৃষকরা সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করে থাকেন। দ্রত সময়ে ফলন পেতে চাষিরা জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে জমিকে অকেজো কওে তুলেছে। সেই চাষিরাই তাদের ভুল বুঝতে পেরে বিভিন্ন জৈব সার যেমন কেঁচো কম্পোষ্ট,গোবর কম্পোষ্ট ও ট্রাইকো কম্পোষ্ট সার ব্যবহার শুরু করেছেন। অনেকেই এ সার উৎপাদন কওে লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভিাগের পক্ষ থেকে জমিতে জৈব সার ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।