ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী এখন প্রতিবন্ধী সাহাবুল। শিশুকালে একটি দুর্ঘটনায় দুটি হাত হারিয়ে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন তিনি। পরিবারের বোঝা না হয়ে নিজেই নেমে পড়েন ছাগল লালন পালনে। বছর শেষে লাখ টাকা আয় করছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের সাহাবুল ইসলাম। প্রতিবন্ধী হলেও এলাকায় তিনি এখন রোল মডেল। ভিক্ষাবৃত্তি বেছে না নিয়ে নিজের ইচ্ছেয় স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের জোগাচ্ছেন অর্থ। সংসার জীবনে দুই কন্য সন্তান নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
৯ বছর বয়সে বন্ধুদের সাথে গ্রামের মাঠে পাখি ধরতে গিয়ে বৈদ্যুটিক খুটিতে উঠেন সাহাবুল। ১২ হাজার ভোল্টের তারে হাত দিতে পুড়ে যায় দুই হাত। হাসপাতালে নিলে ডাক্তার কেটে ফেলে দেন হাত দুটি। সেই থেকে অক্ষম হয়ে পড়েন সাহাবুল। এতে দমে যায়নি সে। ভিক্ষাবৃত্তি বেছে না নিয়ে পিতার সাথে ৫টি ছাগল কিনে নিয়ে শুরু করেন ছাগল লালন পালন। ৫টি ছাগল থেকে এখন তার ছাগল ৪০টি। প্রতি বছর ছাগল বিক্রি করে আয় করছেন লাখ টাকা। তাকে দেখে এখন অনেকে ছাগল লালন পালন শুরু করেছেন। গ্রামের সবাই তাকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করে থাকেন। এলাকায় এখন সে রোল মডেল।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্ষন্ত ছাগল নিয়ে গ্রামের মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়ান। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে চায়ের দোকান বা বন্ধুদের সাথে সঙ্গ দেন সাহাবুল। দুই হাত না থাকায় কোন আপসোস নেই তার। ভালো ভাবে বেচে আছেন এতেই খুশি তিনি। সংসার জীবনে দুই কন্য সন্তানদের নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন। সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা সহ ভালো যায়গায় বিয়ে দিতে পারলে তার সব স্বপ্ন পূরন হবে বলে জানান। দুই হাত না থাকায় পা দিয়ে নিজেই করেন খাওয়া দাওয়া। বিয়ের আগে ব্যক্তিগত কাজ তার মা করে দিতেন সেই কাজ এখন স্ত্রী করেন। স্থানীয়রা বলছেন অনেকের হাত-পা থাকলেও বেকার ঘুরে বেড়ান। কিন্তু সাহাবুল প্রতিবন্ধী হলেও নিজে এখন স্বাবলম্বী। সরকারী ভাবে সাহায্য সহযোগীতা পেলে আরো উন্নতি করতে পারতো প্রতিবন্ধী সাহাবুল।
মোঃ সাহাবুল ইসলাম (প্রতিবন্ধী) হয়েও আমি ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী এটি আমার কাছে গর্বের। দুই হাত না থাকলেও কোন আপসোস নেই। ভালো ভাবে বেঁচে আছি এতেই খুশি আমি। তিনি বলেন, আমার দুটি সন্তান তাদের উচ্চ শিক্ষা সহ ভালো যায়গায় বিয়ে দিতে পারলে সব স্বপ্ন পূরন হবে আমার।
স্থানীয় বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, আমরা সাধুবাদ জানায় সে নিজের উদ্যোগে ছাগল পালন করে সংসার চালায়। তার দুই হাত নেই তার পরেও সে ভিক্ষাবৃত্তি না করে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধী হয়েও ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হওয়া সাহাবুলকে যেভাবে পারি আমার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে র্সবোচ্চ সহযোগিতা করতে চাই।
মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে ছাগলের যেকোনো রোগের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ থেকে শুরু করে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে।