রাইয়ান হোসেন। বয়স তিন বছর। বাড়ি মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামে। কোমল হাতে ক্যানোল নিয়ে শুয়ে আছে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মেঝেতে। শিশুপুত্রকে হাতপাখায় বাতাস করছেন শিওরে বসে থাকা মা সুমাইয়া খাতুন।
তিনি বলেন, তিন দিন ধরে তার বাচ্চা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। বাড়িতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু গত রবিবার দুপুর থেকে অবস্থার অবনতি হলে বিকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার সকাল থেকে একটু কমেছে।
একই উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের দুই বছর বয়সী লাবিব আল আমিন। রবিবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মা আরমিনা খাতুন জানান, অতিরিক্ত গরমে তার বাচ্চা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
একই ওয়ার্ডেও মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের ৫ বছর বয়সী শাফায়েত হোসেন, জীবননগরের এক বছর বয়সী তাসফিয়া জান্নাতসহ ২৩ শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ড পরিদর্শন করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
মেহেরপুরে তীব্র তাপদাহে সবচেয়ে বেশি ঝুকিতে আছে শিশুরা। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৫৫ শিশু। আর বয়স্ক আক্রান্ত ভর্তি হয়েছেন ৬৯ জন। সবমিলিয়ে ২২৪ জন রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে নতুন করে ৩০ থেকে ৪০ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে ১০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বিপরীতে ভর্তি ছিলো ৩০ জন। তার মধ্যে শিশু ছিলো ২৩ জন।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিপু আক্তার জানান, প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এর অধিকাংশ রোগী শিশুরা। হাসপাতাল থেকে সকল ধরণের স্যালাইন, ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের সুপার ডা. জমির মো. হাসিবুস সাত্তার বলেন, প্রতিবছর এপ্রিল-মে মাসে সাধারণত ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ দেখা দেয়। এছাড়াও এবছর অধিক তাপমাত্রার কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ১০ শয্যার ওয়ার্ডের বিপরীতে সবসময় তিনগুণের বেশি রোগী থাকে। এই তাপদাহে শিশুদের প্রতি যত্ন অভিভাবকেদর সচেতনতা বাড়ানোর আহবান জানান।